দেশের বাজারে ফের জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই নতুন মূল্যের ঘোষণা আসতে পারে। জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ কথা জানান।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
আগামী ৩ অথবা ৪ আগস্ট জ্বালানি তেলের বাড়তি দামের ঘোষণা আসতে পারে। ’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মুহূর্তে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে মূল্যস্ফীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে, যার প্রভাব পড়বে জনজীবনে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের বাজারে ডিজেল ও অকটেন বিক্রিতে দীর্ঘদিন ধরে লোকসান গুনছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সংস্থাটিকে এখন ডিজেল ও অকটেন বিক্রিতেই দৈনিক লোকসান গুনতে হচ্ছে ৯০ কোটি টাকার বেশি। দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দামে সমন্বয় করা না হলে এই লোকসান সামাল দেওয়া কঠিন হবে মনে করছেন বিপিসিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, ‘আমাদের এখন ডিজেল ও অকটেন বিক্রিতে দৈনিক প্রায় ৯০ কোটি টাকার মতো লোকসান দিতে হচ্ছে। ডিজেল ও অকটেন বিক্রিতে গত পাঁচ মাসে (ফেব্রুয়ারি-জুন) সাত হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এখন বেশি লোকসান দিতে হচ্ছে ডিজেলে। এক লিটার ডিজেল কিনতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১২৭ থেকে ১২৮ টাকা, কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে ৮০ টাকায়। এই টাকা সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ’
এ বি এম আজাদ বলেন, ‘এই লোকসান দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে বিপিসির উন্নয়ন প্রকল্পেও তার প্রভাব পড়বে। এখন প্রকল্পের সংরক্ষিত অর্থে ভর্তুকি দিয়ে ডিজেল-অকটেন বিক্রি করা হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে সর্বোচ্চ আগস্ট মাস পর্যন্ত চলা যাবে। ’
জ্বালানি তেল সাশ্রয়ের জন্য সরকার সম্প্রতি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রেখেছিল। এতে জ্বালানি সাশ্রয় তেমনভাবে না হওয়ায় আবার সেগুলো চালুর পরিকল্পনা করছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার।
জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট পরিবহন মালিকসহ অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে জ্বালানির দাম সমন্বয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিজেলে সবচেয়ে বেশি লোকসান দিতে হচ্ছে। যার কারণে ডিজেলের দাম বেশি বাড়বে। সেটা হয়তো লিটারপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা হতে পারে।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও বিভিন্ন সময়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপিসির দৈনিক লোকসান হচ্ছে প্রায় শতকোটি টাকা। বৈশ্বিকভাবে জ্বালানি তেলের যে মূল্যবৃদ্ধি, তা অস্বাভাবিক। এটি আসলে কত দিন চলবে, সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই আমরা সমন্বয় করার চিন্তা করছি। ’
জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে সরকার জ্বালানি তেলে বড় ধরনের ভর্তুকি দিচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করলে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে। গতবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর হিসাবে তুলনায় কয়েক গুণ বেশি বাড়ানো হয় পরিবহন ভাড়া। সঠিক পরিকল্পনা না নিয়ে হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ালে জনজীবনে ‘মড়ার ওপরে খাঁড়ার ঘা’ পড়বে। ’
ম. তামিম বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের এই দাম বেশিদিন থাকবে না। তখন সরকারকে অবশ্যই দাম কমিয়ে আনতে হবে। ’ বিপিসির সূত্র অনুযায়ী, বছরে ৬২ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ৭২ শতাংশ ডিজেল, ৪.৮ শতাংশ অকটেন, ৬ শতাংশ অপরিশোধিত তেল।