গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকটের ফলে তৈরি বস্ত্র ও পোশাক খাতের কারখানাগুলোতে উৎপাদন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপ ও আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতির চাপ থাকায় খুচরা ক্রেতাদের চাহিদাও কমছে। এমন সংকটে পড়ে দেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা কিছুটা শঙ্কিত। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া কম্পানি ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনেও এমন তথ্য উঠে এসেছে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, পোশাকের ব্র্যান্ড টমি হিলফিজারের মূল কম্পানি পিভিএইচ করপোরেশন এবং ইন্ডিটেক্স এসএর জারাকে পোশাক সরবরাহ দিয়ে থাকে প্লামি ফ্যাশন লিমিটেড। প্লামি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হুক বলেন, ‘জুলাইয়ে এক বছর আগের তুলনায় নতুন অর্ডার কমেছে শতকরা ২০ ভাগ। এ ছাড়া প্রস্তুত হয়ে গেছে এমন পোশাকের শিপমেন্ট ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের উভয় মার্কেটের খুচরা ক্রেতারা মুলতবি করছেন অথবা অর্ডারে দেরি করছেন। গন্তব্য দেশের মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টিও আমাদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। ’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়ালমার্ট ইনকরপোরেশন পুরো বছরে লভ্যাংশ কমার পূর্বাভাস দিচ্ছে। একই সঙ্গে তারা পোশাকের দাম কমানোর কথা বলছে। জাতীয় গ্রেড থেকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় ডিজেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে খরচ বাড়ছে তিন গুণ। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে ইউরো দুর্বল হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘লোড শেডিংয়ের কারণে উদ্যোক্তাদের জেনারেটর ব্যবহার করতে হয়। এর ফলে উদ্যোক্তাদের খরচ বাড়ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার ডিজেলচালিত পাওয়ার প্লান্ট চালু করতে পারে। এতে শিল্পে চাপ কমবে। একই সঙ্গে ক্যাপাসিটি চার্জ থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে। ’
বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাবে দেশের বস্ত্র ও পোশাক খাতের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতির ফলে গত কয়েক মাসে আমাদের কার্যাদেশ কিছুটা কমেছে। মৌসুমের আগে যে বুকিং দেয়, সেই ট্রেন্ডও (আগাম আশ্বাস) কমেছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। ’
তবে ব্র্যাকের পরিচালক, সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স অ্যান্ড সেফগার্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান জেসি পেনির সাবেক কান্ট্রি ম্যানেজার জেনিফার জব্বার বলেন, ‘বিশ্ববাজারে চাহিদার ওঠানামা থাকলেও এই মুহূর্তে খুব শঙ্কার কিছু নেই। করোনার পরও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। সদ্যোবিদায়ি মাসেও পোশাক খাতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ। তবে মুদ্রাস্ফীতির কিছুটা প্রভাব পড়লেও বাংলাদেশ বেশির ভাগ মৌলিক পোশাক রপ্তানি করে। এসব পণ্যর চাহিদা সব সময় থাকে। তবে চীন ও মিয়ানমারের অর্ডার কমছে। ’
বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর তথ্য অনুযায়ী, পোশাকশিল্পের নিট পোশাক কারখানার প্রয়োজনীয় সুতার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ এবং ওভেন পোশাক কারখানার ৮০ শতাংশ কাপড় সরবরাহ করে দেশীয় বস্ত্রকল। দেশে বর্তমানে প্রায় ৫০০ স্পিনিং মিল রয়েছে। কাপড় বোনার কারখানা রয়েছে প্রায় ১০০টি। কাপড় বোনা ও ডায়িং কারখানা ২০০ থেকে ৩০০টি।
জানা যায়, বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে গত মাসে তরলীকৃত গ্যাস (এলএনজি) আমদানি কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ডিজেলচালিত সব বিদ্যুকেন্দ্রও আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এলএনজি আমদানি কমানোয় শিল্প-কারখানায় চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে না তিতাস।
বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘ক্রয়াদেশ কম থাকায় আড়ই শ কোটি ডলারের সুতা অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। পোশাক খাতের মালিকরা এলসি দিয়েও মাল নিচ্ছেন না। গ্যাস-বিদ্যুতের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। ’