‘পদ্মা সেতু নির্মাণে শিশুর মাথা লাগবে’- ২০১৯ সালে ছড়ানো হয়েছিল এমন গুজব। এই গুজব ছড়িয়ে ২০১৯ সালে সারাদেশে ঘটেছিল গণপিটুনির ঘটনা।এতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৫ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় গৃহবধূ তাছলিমা বেগম রেনু হত্যাকাণ্ড।
২০১৯ সালের ২০ জুলাই উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়ের ভর্তির খোঁজ নিতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে বেধড়ক গণপিটুনিতে প্রাণ হারান রেনু। ঘটনার পর অজ্ঞাত ৫০০ জনের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা করেন রেনুর ভাগ্নে সৈয়দ নাছিরউদ্দিন টিটু। কিন্তু তিন বছরেও সেভাবে এগোয়নি মামলার কার্যক্রম। ঢাকার আদালতে বিচার চলছে ধীরগতিতে।
রেনুর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর গ্রামে। তাঁর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে গ্রামের বাড়িতে আজ আয়োজন করা হয়েছে দোয়া মাহফিলের। রেনুর দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে তাহসিন আল মাহিরের বয়স ১৪ বছর,আর মেয়ে তাসনিম তুবার বয়স ৬। পাঁচ বোন,এক ভাইয়ের মধ্যে রেনু ছিলেন সবার ছোট। আদরের মেয়ের জন্য ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা মা ছবুরা খাতুনের কান্না থামেনি আজও।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে গত ২৫ জুন। সেতু চালু হওয়ায় সবার মতো গর্বিত রেনুর পরিবারও। তবে এ হত্যাকাণ্ডের বিচার ধীরগতিতে চলায় হতাশার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। বর্তমানে ঢাকার পৃথক দুটি আদালতে চলছে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ।
রেনুর বোন নাজমুন্নাহার নাজমা বলেন,প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি, এ হত্যার বিচার যেন দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে করা হয়, প্রকৃত আসামিরা যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়।
মামলার বাদী নাছিরউদ্দিন টিটু বলেন,পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে-এই গুজন প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছিল।পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।তিনি বলেন,পদ্মা সেতু নিয়ে গুজবের কারণে যত মানুষের প্রাণ হারিয়েছে,তাঁদের প্রত্যেকের পরিবার যেন ন্যায়বিচার পান।
ঘটনার এক বছর পর তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকতা পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো.আব্দুল হক। ২০২১ সালের ১ এপ্রিল ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। আসামিরা হলেন-মো.ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় মোল্লা,রিয়া বেগম ময়না,আবুল কালাম আজাদ,কামাল হোসেন, মো.শাহিন, বাচ্চু মিয়া, বাপ্পি ওরফে শহিদুল ইসলাম, মুরাদ মিয়া, সোহেল রানা, আসাদুল ইসলাম, বেলাল মোল্লা, রাজু ওরফে রুম্মান হোসেন ও মহিউদ্দিন। মামলার অন্য দুই আসামি জাফর হোসেন ও ওয়াসিম আহমেদ অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় ঢাকার সাত নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়। এখান থেকেই মূলত মামলাটি দুই ভাগ হয়ে যায়।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মো.জাহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের মূল মামলাটি ঢাকা মহানগর ষষ্ঠ অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। ৩১ জন সাক্ষীর মধ্যে এরই মধ্যে ৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১৭ আগস্ট দিন রাখা হয়েছে। আমরা বাদীপক্ষ ও সরকার পক্ষ মিলে চেষ্টা করছি মামলাটি দ্রুত রায়ের পর্যায়ে নিয়ে আসতে।
ঢাকার সাত নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ বলেন, এ মামলাটি দ্রুত বিচারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ খুবই আন্তরিক। করোনা মহামারির কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শুনানিতে বিলম্ব হয়েছে। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আমরা চেষ্টা করছি।