প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের মাঠে প্রথম পরীক্ষা আজ। তা হচ্ছে একগুচ্ছ স্থানীয় নির্বাচন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ (কুসিক) দেশের ১৩২টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৫টি পৌরসভা, ৪টি উপজেলা পরিষদের সাধারণ ও উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের মাঠে প্রথম পরীক্ষা আজ। তা হচ্ছে একগুচ্ছ স্থানীয় নির্বাচন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ (কুসিক) দেশের ১৩২টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৫টি পৌরসভা, ৪টি উপজেলা পরিষদের সাধারণ ও উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের মাঠে প্রথম পরীক্ষা আজ। তা হচ্ছে একগুচ্ছ স্থানীয় নির্বাচন। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ (কুসিক) দেশের ১৩২টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৫টি পৌরসভা, ৪টি উপজেলা পরিষদের সাধারণ ও উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।নির্বাচনী প্রচারে নানা অনিয়মের কারণে ঝিনাইদহ পৌরসভাসহ একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের ভোট স্থগিত করেছে ইসি। প্রচারে অনিয়মগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের দ্বারা ভোটারদের হুমকিসহ ঔদ্ধত্যপূর্ণ বেআইনি ভাষণ। এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ইসির এমন কিছু পদক্ষেপ নজর কাড়ে নির্বাচন সংশ্নিষ্টদের ও জনগণের। কুসিক নির্বাচনের এক মাস আগে বিজিবি মোতায়েনসহ ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত একাধিক পৌরসভা ও ইউপির প্রার্থিতা বাতিলের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। কিন্তু ভোটের ঠিক আগ মুহূর্তে ক্ষমতাসীন দলের কুমিল্লার এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে নিয়ে সিইসির এক মন্তব্যে কমিশনের কর্তৃত্ব ও দৃঢ়তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্নেষকরা অবশ্য বলছেন, ইসির অসহায়ত্ব প্রকাশের সুযোগ নেই। বিদ্যমান আইনে ইসির হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। সংশ্নিষ্ট এমপিকে এলাকা ত্যাগে বাধ্য করার মতো পদক্ষেপ নিতে পারে ইসি। কোনো ফাঁকফোকর থাকলে সরকারের কাছে আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়ারও সুযোগ রয়েছে। কমিশনের অসহায়ত্ব প্রকাশে সাধারণ মানুষ আরও বিভ্রান্ত হবে। কারণ এরই মধ্যে আগের দুই কমিশনের ভূমিকায় পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে হাতাশা ও বিরক্তি রয়েছে।
সিইসির এই অসহায়ত্ব প্রকাশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে জাতীয় সংসদেও। সোমবার সংসদের বৈঠকে বর্তমান কমিশনকে বর্জন করা বিএনপি-দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেছেন- সিইসির বক্তব্যে প্রমাণ হচ্ছে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।আইন অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তি হিসেবে এমপিদের নির্বাচনী প্রচারে নামার সুযোগ নেই। এ আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে ৬ মাসের জেল ও ৫০ হাজার টাকা আর্থিক দণ্ডের বিধান রয়েছে। পাশাপাশি যে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নেবেন, তাঁর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও রয়েছে বিদ্যমান আইনে। কুুসিক নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের পক্ষে কৌশলে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে স্থানীয় এমপি বাহারের বিরুদ্ধে। কমিশন অভিযোগের সত্যতা পায়। ইসির পক্ষ থেকে তাঁকে প্রথমে চিঠি দিয়ে আচরণবিধির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। তারপরও তাঁর তৎপরতা বন্ধ না হলে ইসির পক্ষ থেকে তাঁকে এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। জনগণের মধ্যে পার্থক্যটি আলোচিত হয় যে, আগের কমিশন বহু গুরুতর অভিযোগেরও প্রতিকার না করে নিষ্ফ্ক্রিয় ছিল। কিন্তু এমপি বাহার ইসির নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে এলাকায় অবস্থান করছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ জুন রোববার ঢাকায় সিইসি কাজী আউয়াল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ‘আইনপ্রণেতা আইন অমান্য করলে ইসির কী করার আছে।’ পরের দিন সোমবার কুমিল্লা সফরে গিয়ে কমিশনের দুই সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান ও রাশিদা সুলতানা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘একজন সম্মানিত লোককে টেনেহিঁচড়ে নামানো কমিশনের কাজ নয়।’
ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, আগের দুই কমিশন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও কে এম নূরুল হুদা কমিশনও দায়িত্ব গ্রহণের পরে কুমিল্লা ও রংপুরে ভোট খুব ভালোভাবেই পার করেছিল। দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির বর্জন সত্ত্বেও এবারে কুমিল্লার ভোট নির্বিঘ্নে শেষ করার আশায় ছিলেন তারা। কিন্তু সরকারি দলের স্থানীয় সংসদ সদস্যকে নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কে এখন তাঁরা নিজেরাও কিছুটা সংশয়ের মধ্যে রয়েছেন।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংশ্নিষ্ট এমপি ইসির নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইসির পক্ষ থেকে তাঁকে চিঠি দিয়ে এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে; এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু আচরণবিধিতেই এ বিষয়ে জেল ও জরিমানার বিষয়টি সুস্পষ্ট করা আছে। শুধু চিঠি দিয়ে ইসি ক্ষান্ত থাকলে তাদের নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে অবশ্যই জনমনে প্রশ্ন উঠবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে ইসির সৎসাহস এবং দৃঢ়তাও প্রশ্নের মুখে পড়বে। এর প্রভাব নির্বাচনী মাঠে ইসি-সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ড. শামসুল হুদা কমিশনের মেয়াদের শেষ দিকে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখনও ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। তখন একজন মন্ত্রীকে নিয়ে প্রায় একই ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল। তখন ওই মন্ত্রীকে এক ঘণ্টার মধ্যে এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিল ইসি। অন্যথায় নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় তৎকালীন ইসির পক্ষ থেকে। অবশ্য ইসির নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ওই মন্ত্রী কুমিল্লা ত্যাগ করেছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে ইসির দক্ষতা ও সক্ষমতা প্রমাণের বিষয় রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ইসির হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। পরিস্থিতি ইসির অনুকূলে মনে না হলে নির্বাচন স্থগিত করে দিতে পারে।পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে বলে মন্তব্য করেনড. শামসুল হুদা কমিশনের এই সদস্য বলেন, তাঁদের মেয়াদের শেষ দিকে কুমিল্লা সিটির ভোট হয়েছিল। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে সাবেক এক মন্ত্রী সেখানে গিয়েছিলেন। তখন রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে ওই মন্ত্রীকে বলা হয়, তিনি যদি সেখানে আরও ঘণ্টাখানেক অবস্থান করেন, তাহলে নির্বাচন স্থগিত করে দেওয়া হবে। তখন ওই কুসিক নির্বাচন প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই নির্বাচন নিয়ে তিনি আশাবাদী হতে চান। এই নির্বাচনের বেশ আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাঠে নামানো এবং ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। তবে স্থানীয় এমপির বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে ইসির পক্ষ থেকে এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি তা মানেননি। এতে একদিকে যেমন ইসির সক্ষমতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে; অন্যদিকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে এলাকা ত্যাগ করেন।