- ফ্লোর প্রাইসের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনছেন না :আবু আহমেদ
- গুজবে কান না দিয়ে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে: ডিবিএ সভাপতি
মিউচুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ থেকে ‘উৎস কর’ কাটা হবে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনিবিআর) এ নির্দেশনার পাশাপাশি বাজার নিয়ে নানা গুজবের কারণে গতকাল বুধবারও দেশের শেয়ারবাজারে বড় পতন হয়েছে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৩৬ পয়েন্টের বেশি। আর লেনদেন কমে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র।
ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, ফ্লোর প্রাইস দেওয়ার কারণে অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ার ফ্লোরে আটকে আছে। এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে না। বর্তমানে বাজারে যেসব কোম্পানির শেয়ার বেশি লেনদেন হচ্ছে তা ভালো কোম্পানির শেয়ার নয়। তাই বাজারে যখন দরপতন হচ্ছে তখন সূচক বেশি পড়ছে। বিশ্লেষকরা বলেন, নানা কারণে বাজার নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্যানিক কাজ করছে। তবে গুজবে কান না দিয়ে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিএসই ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) আগের কার্যদিবসের চেয়ে ৩৬.৩৪ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২২০.৮০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এছাড়া, ডিএস-৩০ মূল্য সূচক ১৫.৯৬ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১০৮.৬৬ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক (ডিএসইএস) ৭.৩২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫০.৬৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন এই বাজারে ৩৫১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪১৩ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। গতকাল ডিএসইতে লেনদেনকৃত মোট ৩০১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৬টির, কমেছে ১৪৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩৯টি দর। দেশের প্রধান এই শেয়ারবাজারে গতকাল টাকার অঙ্কে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০টি কোম্পানি হলো: সি পার্ল বিচ, স্কয়ার ফার্মা, ফু-ওয়াং ফুড, লাফার্জহোলসিম, জেমিনী সি ফুড, আরডি ফুড, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সোনালী পেপার, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক ৬৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৩৫ পয়েন্টে। গতকাল সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১২ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
বাজারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও গতকাল বলেন, গত দুই কার্যদিবসে যেভাবে সূচক কমেছে তা অস্বাভাবিক। বিনিয়োগকারীরা নানা কারণে বাজার নিয়ে একটু প্যানিক আছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে যেসব কোম্পানির শেয়ার বেশি ট্রেড হচ্ছে। সেগুলো কিন্তু ভালো শেয়ার না। এসব শেয়ার যখন বাজারে বেশি ট্রেড হয়, তখন বাজার একটু বেশি রিস্কি অবস্থায় থাকে। আর এ কারণেই বাজার যখন সূচকের পতন হয় তখন বেশি পড়ে। তবে বাজারের এ অবস্থায় গুজবে কান না দিয়ে বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ এ প্রসঙ্গে গতকাল বলেন, ফ্লোর প্রাইসের জন্যই আজকে বাজারের এ অবস্থা। বলা হচ্ছে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বাঁচানোর জন্য ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে কি সাধারণ বিনিয়োগকারী বাঁচবে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার কিনছে না। তিনি বলেন, বাজারের বর্তমান অবস্থায়ও অনেক নামসর্বস্ব কোম্পানির শেয়ারের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। একটা কোম্পানিকে ঋণ পরিশোধের জন্য ব্যাংক থেকে নোটিশ করা হয়েছে। সেই কোম্পানির শেয়ারদরও হুহু বাড়ছে। এটা কীভাবে সম্ভব? তিনি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, খারাপ কোম্পানির শেয়ার কেনা যাবে না। বাজারের এ অবস্থায় ভালো ডিভিডেন্ড দেয় এমন কোম্পানির শেয়ার কিনে বসে থাকতে হবে।
শেয়ার বাজারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বৈঠক ডেকেছে বিএসইসি
এদিকে শেয়ার বাজারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বাজার মধ্যস্থতাকারী অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর সাথে বৈঠক করবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে শেয়ার বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে।