ঐ রিটে দণ্ডিত প্রকৃত আসামিকে চিহ্নিতে চাওয়া হয়েছে তদন্ত। আগামী সপ্তাহে বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মো. বশিরউল্লাহকে নিয়ে গঠিত দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিটের ওপর শুনানি হবে। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, নরসিংদীর পুলিশ সুপার, তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়েছে।
মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৯৯ সালের ১৬ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানায় তিন জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করে পুলিশ। মামলার নম্বর ৪৪(৮)৯৯। ঐ মামলার এক নম্বর আসামি করা হয় এস এম রাকিবুজ্জামান ওরফে রাকিবকে। মোহাম্মদপুরের ১০১/ক পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটির চারতলা ভবনের দোতালা বাসা থেকে ৩৮ বোরের একটি রিভলবার ও ৫ রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিনসহ তিন আসামিকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। অবৈধ অস্ত্র ও গুলি রাখার অভিযোগে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের ১৯(ক)(চ) ধারায় এই মামলা করা হয়।
তদন্ত শেষে তিন জনের বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। যার নম্বর: ২৬৯। চার্জশিটভুক্ত অপর দুই আসামি হলেন মো. সালাউদ্দিন ও কামরুল রহমান ওরফে মনির। এজাহারভুক্ত আসামি এস এম রাকিবুজ্জামান ওরফে রাকিবের নামের সঙ্গে চার্জশিটে মিঠু শব্দ যুক্ত করা হয়। তার বাবার নাম ডা. মো. কামরুজ্জামান খান ওরফে হিরু। ২০০০ সালের ২৮ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। বিচার শুরুর পর ২০০৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পান আসামি রাকিব ওরফে মিঠু। যান পালিয়ে। এরপর আর আদালতমুখী হননি। পলাতক দেখিয়ে বিচার চলে। ২০১৪ সালের ১৩ জুলাই ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ১ম আদালত এবং মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এই মামলায় (মেট্রো বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলা নং: ৮৩৪৬/৯৯) রাকিবসহ তিন আসামিকেই অস্ত্র আইনের দুটি ধারায় ‘ডাবল’ যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে। সকল আসামি পলাতক থাকায় সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এখন এই মামলায় প্রকৃত আসামি রাকিবের পরিবর্তে প্রকৌশলী মো. রাকিবুজ্জামান খানকে খুঁজছে পুলিশ।
হয়রানি থেকে বাঁচতে নরসিংদীর পুলিশ সুপারকে চিঠি
পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে ও হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে গত বছরের ৩০ অক্টোবর নরসিংদীর পুলিশ সুপার বরাবর একটি আবেদন দেন ঐ প্রকৌশলী। আবেদনে তিনি বলেন, কিছুদিন যাবত বেলাবো থানার পুলিশ আমার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে অস্ত্র মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসাবে আমাকে খুঁজছে। যদিও দেশের কোনো থানায় আমার নামে মামলা বা জিডি নাই। আমার বাবার নাম মো. কামরুজ্জামান খান। আমার ও আমার বাবার নামের সঙ্গে আসামি ও আসামির বাবার নাম হুবহু এক নয়। আসামির ঢাকার যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে সেখানে কখনো আমি বসবাস বা অবস্থান করি নাই। আসামির গ্রামের ঠিকানায় সৈয়দ বাড়ি উল্লেখ আছে। আর আমার বাড়ি হচ্ছে খানবাড়ি। আমাদের দুজনের গ্রামের নাম এক হলেও বাড়ি ও বংশ ভিন্ন। ঐ মামলার আসামি আমি নই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হয়রানি হাত থেকে মুক্তি পাব।
প্রকৃত আসামি যখন জেলে তখন তিনি সৌদি আরব
আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে দেখা যাচ্ছে যে, প্রকৃত আসামি রাকিব ওরফে মিঠুর বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও ও ধানমন্ডি থানায় সাতটি মামলা রয়েছে। এদিকে প্রকৌশলী রাকিব ১৯৮৪ সালে এসএসসি, ১৯৮৬ সালে এইচএসসি, ১৯৯৭ সালে বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়া শেষ করে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ২০০০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরব যান। এরপর সেখান থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে তিনবার যাওয়া-আসা করেন। যদিও প্রকৃত অপরাধী মিঠু ১৯৯৯ সালে গ্রেফতার হয়ে ২০০৬ সাল পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন। রিট আবেদনে বলা হয়েছে, তিনি যদি প্রকৃত আসামি হতেন তাহলে জেল থেকে কীভাবে সৌদি আরব একাধিকবার গমনাগমন করলেন। এ সংক্রান্ত পাসপোর্ট, ভিসা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র রিট আবেদনে যুক্ত করা হয়েছে।
রিটকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফয়সাল হাসান আরিফ বলেন, প্রকৌশলীর চিঠির ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আছে। আমরা চাই যিনি প্রকৃত অপরাধী তাকে যেন আইনের আওতায় আনা হয়। নিরপরাধ ব্যক্তিকে যেন হয়রানি করা না হয়।