পরিবার থেকে অনেক দূরে দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে অনুশীলন, বিভিন্ন দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলা- বিশ্বকাপের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা করেছে কাতার। দলটির কোচ ফেলিক্স সানচেসের মতে, বৈশ্বিক আসর সামনে রেখে তারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এসবের প্রতিফলন বিশ্ব মঞ্চে তার দলের পারফরম্যান্সে পড়বে বলে আশাবাদী তিনি।
বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের একসঙ্গে অনুশীলন এবং ম্যাচ খেলার সুযোগ দিতে গত সেপ্টেম্বরে কাতার তাদের স্টার্স লিগের বিরতি দিয়েছিল। এই সময়ে অস্ট্রিয়া ও স্পেনে অনুশীলনের পাশাপাশি বিভিন্ন দলের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলেছে কাতার। ফলে বেশ কয়েক সপ্তাহ পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়েছে খেলোয়াড়দের। তাদের এই নিবেদন দেখে মুগ্ধ কোচ সানচেস।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে আজ রবিবার একুয়েডরের মুখোমুখি হবে কাতার। আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সানচেস বলেন, এখন তাদের বিশ্ব মঞ্চে মেলে ধরার পালা।
ফেলিক্স সানচেস জানান, বিশ্বকাপের জন্য খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক একটি দল গড়ে তোলার জন্যই আমরা সব কিছু করেছি। প্রতিটি দেশের পরিস্থিতি আলাদা এবং আমরা একটি ছোট দেশ। আমাদের সকল খেলোয়াড় স্থানীয় লিগে খেলে, তাই জাতীয় দলকে শক্তিশালী করতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বিশাল ত্যাগ স্বীকার করতে হবে এবং বিদেশে বেশি সময় (অনুশীলন) করতে হবে। এতে আমাদের খেলোয়াড়দের নিবেদন ফুটে উঠছে। বিদেশে অনুশীলন এবং খেলায় ব্যয় করা সময়গুলি কালকের জন্য, যাতে আমরা টুর্নামেন্টটি ভালোভাবে শুরু করতে পারি।”
২০১৯ সালে এশিয়ান কাপ জিতে সবাইকে চমকে দিয়েছিল কাতার। ত্রিশ লাখের কম জনসংখ্যার দেশটি বিশ্বকাপে খেলবে এই প্রথম। সুযোগটা পেয়েছে তারা স্বাগতিক হওয়ার সুবাদে। জাতীয় দলের হয়ে ১৬৯ ম্যাচ খেলা ফরোয়ার্ড হাসান আল হায়দোস দেশকে বিশ্ব মঞ্চে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পেয়ে গর্ব অনুভব করছেন।
তিনি আরও বলেন, এটি (বিশ্বকাপে খেলা) ছোটবেলার স্বপ্ন। আমরা বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করেছি, অতীতে আমরা সফল হতে পারিনি। কিন্তু আমরা যদি এবার বাছাইপর্বে খেলতাম, আমার বিশ্বাস, আমরা যোগ্যতা অর্জন করতাম।
একটা সময় অল্পতেই ধৈর্য্য হারিয়ে কোচ ছাঁটাই করার দুর্নাম ছিল কাতারের। তবে সানচেস দায়িত্বে আছেন পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে। ২০০৬ সালে কাতারের অ্যাসপায়ার একাডেমিতে যোগ দেওয়া এই স্প্যানিয়ার্ড পরে কাতারের যুব দলের সঙ্গেও কাজ করেছেন। যুব দলে তার কোচিংয়ে খেলা খেলোয়াড়রাই এখন খেলছেন জাতীয় দলে।
৪৬ বছর বয়সী সানচেসের কাছে তাই এটি গর্বের মুহূর্ত। সময়টা উপভোগ করে যেতে চান তিনি। তিনি বলেন, এত বছর পর, একটি চক্রের সমাপ্তি হচ্ছে। ১৬ বছর ধরে এই দেশে কাজ করছি। আমি একটি দীর্ঘ সময়ের পরিকল্পনায় যুক্ত, জাতীয় দলের আজকের খেলোয়াড়দের ধাপে ধাপে বেড়ে ওঠা দেখেছি। এটি গর্বের ব্যাপার। আমি মুহূর্তটি উপভোগ করার চেষ্টা করব।
বিশ্বকাপে ‘এ’ গ্রুপে কাতারের অন্য দুই প্রতিপক্ষ সেনেগাল ও নেদারল্যান্ডস। তাদের জন্য কাজটা যে সহজ হবে না, ভালো করেই জানেন সানচেস। তবে নিজেদের সর্বোচ্চটা উজার করে দেওয়ার প্রত্যয় তার কণ্ঠে।
কাতার কোচ বলেন, আমরা জানি, তিনটি (গ্রুপ পর্বে) ম্যাচ আছে, প্রতিপক্ষের শক্তি ও সম্ভাবনা সম্পর্কেও জানি। দলীয় ইতিহাস এবং খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত প্রতিভার কারণে আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে তারা। কাগজে-কলমে তাদের তিন পয়েন্ট পাওয়া উচিত, তারা হয়তো পুরো তিন পয়েন্টই চাইবে। কিন্তু আমরা এখানে দেখাতে এসেছি যে, আমরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি। আমরা আমাদের সেরাটা খেলার চেষ্টা করব।