তাকে বলা হয় উদযাপনের শিল্পী। ঢাকায় বা ঢাকার বাইরে মফস্বল কিংবা শহরে অথবা দেশের বাইরে, তিনি যখন গাইতে থাকেন, সামনে উন্মাতাল দর্শক। কখনো ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার। সকলেই খানিক গান-আর বাদ্যের তালে আনন্দ নিয়ে ফেরেন। উদযাপনের শিল্পী হিসেবে গত ৩ দশক ধরে গেয়ে চলেছেন তিনি। গায়িকার নাম আঁখি আলমগীর।
প্রত্যেক শিল্পীরই নিজস্ব একটা জনরা থাকে। থাকে পারফর্মেন্স করার আলাদা ব্যকরণ। আঁখি আলমগীর তেমনই একটি নাম, যেখানে সুরে আর বাদ্যের জাদুতে কোমর দুলবেই। তবে কি রেকর্ডিং বা নতুন গান প্রডিউস করার সময় সবসময়ই এই ফাস্ট বিটের কথাই ভাবেন তিনি?
আঁখির কথায়, ‘দেখুন ব্যক্তিগতভাবে আমি বিভিন্ন ধরনের গানই শুনি। কারো সকাল তো দ্রুত লয়ের গান দিয়ে শুরু হয় না নিশ্চয়ই। আমারও না কিংবা মধ্যদুপুর। আর স্টেজে আমি এই যে হাজারের ওপরে দেশে-বিদেশে পারফর্ম করলাম। সবটাই তো সন্ধ্যার পরের কোনো আড়ম্বড় অনুষ্ঠানের। তাই দর্শক-শ্রোতার চাহিদা আমার মাথায় রাখতেই হয়। কিন্তু আমার যে সবসময় দ্রুতলয়ের গান গাইতেই ভালো লাগে তা কিন্তু না। এমনও অনেক শো আছে। যেখানে একটু বয়স্ক দর্শক। সেখানে ক্ল্যাসিকেল বা সেমি ক্ল্যাসিকেল দিয়ে শুরু করেছি। তাদের কেউ কেউ অবাক হয়েছেন আচ্ছা আপনি এধরনের গানও করেন! আসলে একজন শিল্পীর গানের ঢং ও গানের বিস্তারটা তার দর্শক-শ্রোতারাই তৈরি করে দেন। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে।’
সম্প্রতি প্লাবন কোরেশীর কথা ও সুরে আরো একটি চটুল গানে কণ্ঠ দিলেন। আঁখির কথায়, ‘গানটিতে আমার সহশিল্পী বেলাল খান। আমি স্টেজে গাইবার জন্যই কাজটি করেছি। শ্রোতাদের মাঝে একটি গান নিয়ে চর্চা করাটাও একজন শিল্পীর দায়িত্ব। একটা গান শুধু রেকর্ডিং করে ফেলে রাখলাম। কিছু মানুষ শুনলো। পরে ভুলে গেলো। এটা আমার করতে ভালো লাগে না। আমার গাওয়া সলো অ্যালবামের অধিকাংশ গানই আমার তোলা থাকে। আমি শ্রোতাদের শোনাতে চাই আমার সবগুলো গান। সবটা তো আর সম্ভব হয় না।’
তবে আঁখি আলমগীর শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে রাষ্ট্রের সেরা স্বীকৃতি হিসেবে যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারটি পেয়েছেন, তা সেমি ক্ল্যাসিকেল গানের জন্য।
আঁখি বলেন, ‘আমি এক জীবনে যা-ই করেছি ভীষণ মন দিয়ে এবং সততার সাথে করার চেষ্টা করেছি। কখনো মনে হয়নি শর্টকাটে আমি অনেকদূর চলে যাবো। যখন অডিও ক্যাসেটের যুগ তখন কিন্তু আমার সাথে বাঘা বাঘা শিল্পীরা ছিলেন। সেই সময়ে তাদের সাথে ফাইট করেই আমার সলো অ্যালবাম বেরিয়েছে। শ্রোতারাই আমাকে আজকের আঁখি বানিয়েছে। আমিও তাদের কথা মাথায় রেখে নিজের রুচিবোধের সমন্বয়েই কাজ করেছি। আজীবন তাই করে যাবো।’