জীবিকার টানে কেউ টেকনাফ থেকে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে আসেন, আবার কেউ তেঁতুলিয়া থেকে, কেউ কেউ আসেন ভোলা থেকে। আবার অনেকের কর্মস্থল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। পড়াশোনার জন্যও অনেককে যেতে হয় এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। কর্মব্যস্ত জীবনে আমাদের কম সুযোগই হয় পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে একটু মন খুলে সময় কাটানোর। ঈদ বা বিভিন্ন উৎসবের ছুটিতে আমরা সুযোগ পাই নাড়ির টানে গ্রামের পানে তথা আপন আঙিনায় ছুটে যাওয়ার। ঈদে ঘরমুখী মানুষের বাড়ি ফেরার যে আনন্দ, অনেক সময় দুর্ঘটনা, বাসে, ট্রেনে বা লঞ্চে যাত্রীদের হয়রানি আনন্দের আমেজটা ফিকে করে দেয়। সাবধানে ও নিরাপদে সবাই বাড়ি ফিরুক—এমনটাই প্রত্যাশা থাকে প্রতিটি উৎসব ঘিরে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনার সংবাদ ব্যথিত করে আমাদের।
দেখা যায়, পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে, সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালানো থেকে শুরু করে অন্যান্য খরচ তথা সংসারে হাল ধরতেই আপন আঙিনার মায়া ত্যাগ করে অনেককে মাসের পর মাস পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়। ইন্টারনেটের এ যুগে ভিডিও-অডিও কলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা গেলেও, মনটা ঠিকই আনচান করে বাড়ি যাওয়ার। চিরচেনা মাঠঘাট, পুকুরপাড়, নদীর ধার, ধানের খেত, উঠোন—সব সময় মায়ায় জড়িয়ে রাখলেও ঈদ বা বিভিন্ন উৎসব ছাড়া বাড়ি ফেরার সুযোগ কই! ঈদের ছুটেতে সবাই বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নেয়। কেউ বাসে করে, অনেকে আবার ট্রেনে, লঞ্চ করেও বাড়ি ফেরেন অনেকে। এ সময় টিকিট পেতে যাত্রীদের নানান দুর্ভোগ পোহাতে দেখা যায়। এখন অনলাইনেও টিকিট সংগ্রহ করা যায়। কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ, টিকিট পেতে যেন যাত্রীসাধারণকে হয়রানির শিকার না হতে হয়। বাড়ি ফেরা মানুষগুলো যাতে নিরাপদে আপন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে তার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বাড়ি ফেরা হোক আনন্দময়, উৎসবমুখর। ঈদে বাবা-মা চেয়ে থাকেন তার বুকের মানিক কখন বাড়ি ফিরবে, সন্তানরা চেয়ে থাকে তাদের বাবা কখন আসবেন বাড়ি, স্ত্রীও পঞ্জিকায় চোখ বোলান কবে তার (স্বামী) পা পড়বে বাড়ির আঙিনায়। ওদিকে কর্মস্থলে বসে বসে প্রহর গোনে অনেকে। ঈদের ছুটি পেলেই মনটা নেচে ওঠে। বেতন-বোনাস হাতে এলেই চলে পুরোদমে বাড়ি ফেরার সব কাজ। বেতন হাতে পেয়ে বাবা-মার জন্য, সন্তান, বউ তথা পরিবার-স্বজনদের জন্য কেনাকাটা করার জন্য মার্কেটে ছুটে যান অনেকে। তারপর টিকিট কাটা। নির্দিষ্ট দিনে ট্রেন, বাস কিংবা লঞ্চে চেপে বসা। আহা সে কী যে আনন্দ! চলতি বাহনের পাশ দিয়ে বয়ে চলা বাতাস যেন হৃদয়ে দোলা দেয়, শিহরন জাগায়।
ঠিকঠাকভাবে বাড়ি পৌঁছানো সবার চাওয়া। কিন্তু আমাদের অসাবধানতাবশত কিংবা অসচেতনতার কারণেই অনেক সময় দুর্ঘটনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। আনন্দ-উৎসবের এ সময় কারো ঘরে দুঃখের ছায়া নেমে আসুক—এমনটা কখনোই কাম্য নয়। ব্যাগ, মোবাইল ফোন, মালামাল নিজ দায়িত্ব রাখতে হবে, তাড়াহুড়ো করা যাবে না। বাসার সবকিছু ঠিকঠাকভাবে রেখে যাচ্ছেন কি না, সেদিকে লক্ষ রাখাটাও জরুরি। সর্বোপরি, যাতায়াতকালে সর্বোচ্চ সতর্ক হতে হবে সবাইকে।