৮০২ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের নির্দেশ
অনিয়ম অনুসন্ধানে ৩০০ আসনে কমিটি
প্রচারণায় পদ-পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না মেয়র-চেয়ারম্যানরা
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) বড় ধরনের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি বিপুল সংখ্যক জনবল নিয়োগ ও পদোন্নতির কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৪১৪ জনকে। এছাড়া ৪০তম বিসিএস নন ক্যাডার থেকে ৯০ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ৩১৩ জন থানা নির্বাচন কর্মকর্তা পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে কমিশন।
এদিকে সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে অনুষ্ঠানের স্বার্থে জনপ্রতিনিধিসহ মাঠ প্রশাসনকে ১০ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আচরণবিধি প্রতিপালনে সারাদেশে ৮০২জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে ইসি। সুষ্ঠু ভোটে প্রশাসন থেকেও তিন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে নির্বাচন পূর্ব অনিয়ম অনুসন্ধানে ৩০০ আসনে কমিটি করেছে কমিশন।
ইসি সূত্র জানায়, মামলা সংক্রান্ত আইনি জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি বন্ধ ছিল। গত ৩১ জুলাই সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে অন্যান্য এজেন্ডার সঙ্গে এ সমস্যার কথা তুলে ধরে তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এরপরই এ জটিলতার অবসান হয়। ফলে ঝুলে থাকা কর্মকর্তাদের পদোন্নতির তালিকায় হাত দেয় কমিশন। বেশ কিছুদিন ধরে এ প্রক্রিয়া চলছিল। অবশেষে জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে তা কার্যকর করা হলো।
ইসির কর্মকর্তাদের মতে, জেলা প্রশাসকদের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে এবার জাতীয় নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগের দাবি ছিল কর্মকর্তাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অতীতের ধারবাহিকতায় এবারও জেলা প্রশাসকদেরই রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়। সেজন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে খানিকটা অসন্তোষ বিরাজ করছিল। শেষ পর্যন্ত তাদের পদোন্নতির মাধ্যমে অসন্তোষ কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ইসির পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শরিফুল আলমের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চতুর্থ গ্রেডে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা পদে নয়জনকে, পঞ্চম গ্রেডে উপ-সচিব সমমানের পদে ১১ জনকে, ষষ্ঠ গ্রেডে সিনিয়র সহকারী সচিব/সমমানের পদে ১৩ জনকে, দ্বিতীয় শ্রেণি হতে প্রথম শ্রেণির সহকারী পরিচালক, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, নির্বাচন কর্মকর্তা পদে ২৩ জনকে, তৃতীয় শ্রেণি হতে দ্বিতীয় শ্রেণির সহকারী উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তা পদে ১৬১ জনকে, প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে দুইজনকে এবং ১৮ থেকে ১৬তম গ্রেডে ৫০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া তৃতীয় শ্রেণির ১১টি পদে কম্পিউটার অপারেটর, সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর, উচ্চমান সহকারী, হিসাব সহকারী, স্টোর কিপার, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, গাড়িচালক, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রভৃতি পদে রাজস্ব খাতে মোট ৪১৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন কার্যালয়ের শূন্যপদ পূরণে ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার হতে প্রথম শ্রেণির পদে ৯০ জন এবং দ্বিতীয় শ্রেণির সহকারী উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তা/সমমানের পদে ৩১৩ জনকে নিয়োগ দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রচারণায় মেয়র-চেয়ারম্যানদের পদ-পদবী ব্যবহারে মানা: গতকাল স্থানীয় সরকার বিভাগ সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম স্বাক্ষরিত সিটি ও পৌর মেয়র; জেলা, উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যানকে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ কিংবা ইউনিয়ন পরিষদে এমন কোনো উন্নয়ন স্কিম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে না যা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর ভোট প্রাপ্তিতে বা প্রচারণার পক্ষে ব্যবহূত হতে পারে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অনুদান বা অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে না যা কোনো প্রার্থীর ভোট প্রাপ্তি বা প্রচারণার কাজে প্রভাব বিস্তার করবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কোনো অফিস, যানবাহন এবং অন্যান্য সম্পত্তি কোনো প্রার্থীর নির্বাচন বা প্রচারণার কাজে কোনোভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। এছাড়া নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ তাদের পদমর্যাদা, সরকারি সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না।
৮০২জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের নির্দেশ: জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে ৮০২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। বৃহস্পতিবার ইসির উপ-সচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা) মো. আতিয়ার রহমানের সই করা এক চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়। ইসি জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৩০০ নির্বাচনী এলাকায় ২৮ নভেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা প্রয়োজন।
সুষ্ঠু ভোটের জন্য প্রশাসনের নির্দেশনা: সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য প্রশাসনকে তিনটি নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। মন্ত্রণালয়, বিভাগ, মাঠ প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ প্রশাসনের সব স্তরে এ নির্দেশনা দিয়ে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পাদন করা সবার জাতীয় দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবার সহযোগিতা কামনা করেছে।
নির্বাচন পূর্ব অনিয়ম অনুসন্ধানে ৩০০ আসনে কমিটি :নির্বাচনি অপরাধ ও নির্বাচন পূর্ব অনিয়ম অনুসন্ধানের জন্য সংসদের ৩০০টি আসনের জন্য ৩০০টি নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে ইসি। জেলা পর্যায়ে কর্মরত বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসব কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।