সার্জিল খাঁন: –
আইনে ঠিক কিন্তু নীতিতে ঠিক না! এটা কেমন আইন বা কেমন নীতি? তবে আইন করার সময় এইসিসি-র এই নীতির কথা কী মনে ছিলো না? নীতি মেনে যদি আইনটা উপেক্ষা করতে হয় তবেতো এখানে আইনটাই নীতিহিন।
সাকিবকে আইন মানতে গিয়ে নীতি ভাঙ্গতে হলো কেন, কেন এমন আইন রাখা হয়েছে যা মানতে গিয়ে নীতি বিসর্জন দিতে হলো? আইন মানতে গিয়ে যদি তিরস্কার পেতে হয় তবেতো এমন আইনটাই নীতিহিন আইন, এর জন্য যদি তিরস্কার করতেই হয় সেটা আইসিসি-র প্রাপ্য, সাকিব বা বাংলাদেশের না।
কোন মানুষ যখন সব হারাতে হারাতে দেয়ালে ঠেকে যায় তখন তার সেখান থেকে ফিরতে হলে আর নীতি-নৈতিকতার কথা মাথায় থাকে না। দিল্লীর মাঠে সেদিন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা একই রকম পরিস্থিতির মধ্যে ছিলো তাই তাদের মাথায় তখন নীতি-নৈতিকতার বালাই ছিলো না, সাথে হয়তো চেতনাও ছিলো না। তা না হলে ম্যাথুউস অপ্রস্তুত অবস্থায় মাঠে এলো কেন? আবার তার হেলমেট ঠিক মত কাজ করছে না দেখে আম্পায়ার বা প্রতিপক্ষের অধিনায়কের কাছ থেকে সময় চেয়ে পাওয়ার নিয়ম আছে তা কী সে জানতো না? আমরা ধরে নিব সে তা জানতো, না জানার কথা নয় কোন ভাবেই। নাকি ইগোতে লাগছে বলে সে অনুরোধের দিকে হাটেনি? এটা যদি হয় তবেতো এটা তার প্রাপ্য ছিলো।
এর আগে আম্পায়ার তাকে টাইম আউটের কবলে পরতে হতে বলে সতর্কও করেছিলো কিন্তু তিনি তা কেয়ার করেন নি। কেন করলেন না? সেতো খেলার থেকে বড় না, এখন নিজেকে যদি কেউ আইনের থেকে বড় মনে করে তবেতো আইনের যাতাকল তাকে পিষে দিবেই।
খেলোয়াড়দের জানার কথা না টাইম আউট হয়েছে, আম্পায়ার বলার পরেই সাকিবরা বিষয়টা জানতে পেরেছে। আর আইন থাকলে সেটা আম্পায়ারের প্রয়োগ করার কথা, খেলোয়াড়দের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে প্রয়োগ করার দরকার পরলো কেন? আইন খেলোয়াড়দের নিয়ন্ত্রন করে নাকি খেলোয়াড়রা আইন নিয়ন্ত্রন করে?
এ বছর টিম গঠন নিয়ে এক মহা হাঙ্গামা গিয়েছে বাংলাদেশ টিমে, সে থেকে পুরা সময়টাই দলটা বিতর্ক নিয়েই ভারতের মাঠে প্রায় প্রতিটা খেলাতেই হেরেছে। এতো হারের চাপে খেলোয়াড়দের মাথা ঠিক থাকবে না এটাই স্বাভাবিক আর এটারই ফল দেখা গিয়েছে দুই দলের ক্ষেত্রেই।
এখন ম্যাথুউসরা সময় নষ্ট করে বাংলাদেশ দলকে বিপদে ফেলে সুবিধা আদায় করার জন্য এই তাল-বাহানা করেছিলো কিন তাও দেখা উচিত, যদি তাই হয় তবেতো সেটা ভয়ংকর অভিসন্ধি, তেমন হলে এর শাস্তি তাদের পেতেই হতো। সে শাস্তিটা তারা হয়তো এভাবেই পেয়েছে।
সাকিব-র সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা করাই যায়, কিন্তু পরিস্থিতিও দেখতে হবে। কি পরিস্থিতিতে সে এই কাজটা করলো, কেন করলো? যুদ্ধে নিয়ম আছে সাধারন মানুষদের আঘাত করা যাবে না, কিন্তু আঘাত না করে কোন যুদ্ধা হয়েছে? হয়নি, কারন তা সম্ভব না। সাকিবও বলেছে সে যুদ্ধে ছিলো, সেখানে যদি কিছু নৈতিক স্খলন হয়ে যায় তাবেতো কিছু বলা যাবে না যেহেতু তা নিয়মের মধ্যেই ছিলো।
ম্যাথিউস বলেছে বাংলাদেশ দল ও আম্পায়ারদের কমন সেন্স নাই! তবে সে কী কমন সেন্সের প্রমান দিলো? একজন ব্যাটার যে কোন সময় আউট হতে পারে তাই পরবর্তী খেলোয়ারকে তার সরঞ্জাম নিয়ে ১০০ ভাগ প্রস্তুত থাকতে হয় মাঠে নামার জন্য। সে কী প্রস্তুত ছিলো? যদি থেকে থাকে তবে মাঠে নেমেই সে কেন দেখলো তার হেলমেট ঠিক নাই, ২৫ ওভার পর্যন্ত তার সময় ছিলো সরঞ্জাম দেখার তখন সে তা দেখলো না কেন? এতে প্রমান হয় সে হয়তো খেলাটাকে গুরুত্ব দেয়নি অথবা বাংলাদেশ টিমকে অবজ্ঞা করেছিলো, যাই হোক; তখন সে যা চিন্তা করেই এটা করুকনা কেন সেটা তার ব্যাপার আর তার নিয়ম বহির্ভূত কাজের দায় প্রতিপক্ষ নিবে কেন? তারও এই কমন সেন্সটা থাকা দরকার ছিলো।
অনেক বিশেষজ্ঞ সাকিবের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে, করতেই পারে সেটা তাদের রুচি; নিয়ম মেনে যদি সমালোচনার মুখে পতিত হতে হয় সে সমালোচনা হোক সেদিকে কান না দিলেই হবে।
টাইম আউটের মতো নন-ষ্ট্রাইক ব্যাটারকে আউট করাও নিয়মে আছে কিন্তু নৈতিকতায় নাই। অনেকে এই ভাবে আউট করেছে, অনেকে উপেক্ষা করেছে আবার অনেক বোলার থেমে ব্যাটারকে ক্রিজে ফিরিয়ে সাবধান করেছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কা বা ম্যাথুউস এমন আউট কী উপেক্ষা করেছে? তাদেরকেও দেখা গিয়েছে অনেক বার নন-ষ্ট্রাইক আউট নিতে, এটাওতো নিয়মে আছে কিন্তু অনৈতিক। এমন আউট নেয়ার সময় তাদের কমন সেন্স কোথায় ছিলো বা থাকে?
নীতি না নিয়ম, কোনটা থাকবে, কোনটা থাকবে না তা আইসিসি-র চিন্তা করা উচিত। এটা খেলোয়াড়দের হাতে ছেড়ে দেয়া ঠিকনা, তারা নিয়ম মতো খেলবে নিয়ম প্রয়োগ করবে কেন? এরই সাথে দেখতে হবে অন্য কোন খেলায় কি খেলোয়াড় আইন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? যদি তা না পারে তবে ক্রিকেটে কেন এই নীতি-নিয়মের টানাটানি! নীতিটা বাদ দিন, নিয়মটাকেই প্রতিষ্ঠিত করুন।