স্বপ্নের পদ্মা সেতু সাধারণ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। রোববার ভোর ৫টা ৪০ মিনিট থেকে সাইকেল-থ্রি হুইলার ব্যতীত সব ধরনের যান চলাচল শুরু হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত এ স্থাপনার ওপর দিয়ে।
অনেকেই গভীর রাতে এসে শরীয়তপুরের জাজিরা টোল প্লাজার সামনে এসে অপেক্ষায় থাকেন। পরে নির্ধারিত সময়ে সেই অপেক্ষার পালা শেষ হয়।
সারা রাত অপেক্ষায় থাকা গাড়িগুলো যখন যাওয়ার সংকেত পান তখন বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায় যাত্রীদের। তারা উল্লাসে ফেটে পড়ে একদৌড়ে গিয়ে হাজির হন টোল প্লাজায়।
পদ্মা সেতু দিয়ে পাড় হওয়ার আশা পূরণ হতে যাওয়ায় তারা চিৎকার করে আনন্দ প্রকাশ করতে থাকেন।
প্রথম পদ্মা সেতু পারাপার হওয়ায় অনেকেই আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে এসেছে কালের সাক্ষী হতে। উচ্ছ্বাস করতে দেখা গেছে। দীর্ঘ দিনের নদী পথের ভোগান্তির শেষ পদ্মা সেতুকে সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে দেখছেন যাত্রী ও পরিবহন চালকরা। নির্ধারিত মূল্যে টোল দিয়ে সেতু পার হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল উৎসব। অনেকেই মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা নদী পার হচ্ছেন।
গণপরিবহনের আগেও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের পরিবহন আনুষ্ঠানিক পদ্মা সেতু পার হলেও এবারই প্রথম যাত্রী পারাপার শুরু হয়েছে।
ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে প্রথম টোল দিয়ে টোল প্লাজা পার হয় (ঢাকা মেট্রো-গ ৪৩৬৬৯৫) একটি টয়োটা প্রাইভেটকার। প্রথম গাড়ি নিয়ে টোল প্লাজা পাড় হতে পেরে গাড়ির মালিক শেখ মোহাম্মদ রবিউল আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পরে টোল দিয়ে টোল প্লাজা পাড় হতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত। আমি সবার আগে পদ্মা সেতু দিয়ে পাড় হওয়ার জন্য রাত ১০টা থেকে জাজিরা প্রান্তে এসে অপেক্ষায় ছিলাম। আমার আশা পূরণ হওয়ায় আমি খুশি। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।’
মাগুরা থেকে আসা দোলা পরিবহনের চালক আতিয়ার হোসেন বলেন, ‘রাত ৯টা থেকে অপেক্ষায় ছিলাম। কখন পদ্মা পারি দিবো। অবশেষে সেই অপেক্ষার পালা শেষ হলো। খুব ভোরেই টোল প্লাজার সামনে হাজির হলাম। টোলও দিয়েছি। আল্লাহর নামে চললাম। দীর্ঘ দিন ধরে ফেরিতে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তার সমাপ্ত হলো আজকে।’
মোটরসাইকেল যোগে বাগেরহাট থেকে আসা রিপন ফরাজী বলেন, ‘অনেক ইচ্ছে ছিল প্রথমই পদ্মা সেতু পার হবো। তাই রাতে আসছি। সর্বপ্রথম পার হচ্ছি দাবি করবো না, তবে আমার আগে কোনো মোটরসাইকেল আজ পার হয়নি। প্রশাসন বা অন্য কোনো দপ্তরের মোটরসাইকেল আগে পার হতে পারে কিন্তু আমি আজ সর্বপ্রথম পার হচ্ছি বলে মনে হচ্ছে।’
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন বলেন, রাত ১০টা থেকে শত শত গাড়ি এসে ভিড়তে থাকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে। টোল প্লাজা দিয়ে ভোর ৬টায় গাড়ি ছাড়ার কথা ছিলো। গাড়ির অতিরিক্ত চাপ থাকায় ২০ মিনিট আগেই ছাড়তে হয়েছে।
এর আগে শনিবার সকালে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত সূচিত হলো।