পদ্মা সেতু চালুর মাহেন্দ্রক্ষণে দেশবাসী যেমন আনন্দিত, তেমনি পদ্মার ওই পাড়ের ক্রীড়াবিদ ক্রীড়া সংগঠক সবাই উচ্ছ্বসিত। যেখানে মাওয়া ঘাটে ফেরি কিংবা লঞ্চে অনেক সময় লাগতো সেখানে এখন সেতুর ওপর দিয়ে অনায়াসে চলে যাওয়া যাবে নিজ নিজ গন্তব্যে। দেশের দীর্ঘতম সেতুর ওপর দিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য আর তর সইছে না। খেলোয়াড়দের মধ্যে যাদের বাড়ি ওপারে, তাদের আনন্দও ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই সেতু তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ দেশের অর্থায়নে। এই সেতুর ফলে দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের। স্বপ্ন পূরণ, কষ্ট লাঘব আর প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেই কথাই জানালেন দেশের ক্রীড়াবিদরা। জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনও বেশ উচ্ছ্বসিত। পদ্মার ওপারের জেলা সাতক্ষীরার এই ফুটবলার বলেন, ‘এই সেতু আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। কারণ আগে ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা যেতে ৮/১০ ঘণ্টা লেগে যেতো।
এখন চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বাঁচবে।
আমাদের অনেক উপকার হলো। যা ভাষায় বলে বোঝানো যাবে না। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমাদের কষ্ট লাঘবের জন্য। সাতক্ষীরার আরেক ক্রীড়াবিদ স্প্রিন্টার শিরিন আক্তার বলেন, ‘আমরা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি। আগে কত কষ্ট সয়ে আমাদেরকে ঢাকায় আসতে হতো। ফেরি চলতো না অনেক সময়। আবার আবহাওয়া খারাপ হলে আটকে থাকতাম ঘাটে। এসব বিড়ম্বনা আর সইতে হবে না। খুব ভালো লাগছে। এখন অপেক্ষায় আছি কবে বাড়ি যাবো পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে।
জাতীয় ফুটবল দল ও আবাহনী লিমিটেডের উইঙ্গার রাকিব হোসেনের বাড়ি তালতলীতে। খেলার ফাঁকে নিজের বাড়িতে যেতে হলে এতদিন তাকে ভোগান্তিতে পড়তে হতো। ফেরিতে নদী পার হওয়ার সময় দুঃসহ স্মৃতিও আছে তার। ২৪ বছর বয়সী ফুটবলার তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়ে পদ্মা সেতুর উপকারিতা সম্পর্কে বলেনÑ ‘২০১৭ সালে আমি তখন চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে ভিক্টোরিয়াতে খেলি। বাড়ি যাওয়ার পথে একদিন ফেরিতে বড় দুর্ঘটনার মুখে পড়তে হয়েছিল। দিনের বেলায় আবহাওয়া খারাপ ছিল তখন। পানি উঠে যায় ফেরিতে। সবার মধ্যে তখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাহোক, সেদিন কোনোমতে ওপারে পৌঁছাতে পেরেছিলাম।’ স্বপ্নের পদ্মা সেতু হওয়ার পর এখন আর সেই দুশ্চিন্তা নেই। তাই রাকিব বেশ উচ্ছ্বসিত, ‘এখন পদ্মা সেতু হওয়াতে নির্বিঘ্নে বরিশাল যেতে পারবো। শুধু তাই নয়, দক্ষিণাঞ্চলের যেকোনো জায়গায় খেলতে যেতে কোনো বাধাই থাকবে না। এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।’ অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার ইয়াসিন খানের বাড়িও বরিশালের মুলাদিতে। তবে শেখ জামালের এই ফুটবলার থাকেন শহরে। কয়েক ঘণ্টায় পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে সরাসরি বাড়ি যাওয়ার রোমাঞ্চ দোলা দিচ্ছে তাকে। শুধু তাই নয়, দক্ষিণাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে ঘরোয়া কিংবা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট কম হচ্ছে। যাতায়াতের ভোগান্তিই তার অন্যতম কারণ। তার আশা, পদ্মা সেতু হওয়াতে দক্ষিণ অঞ্চলে ভেন্যুও বাড়বে।’
জাতীয় কাবাডি দলের অধিনায়ক আরদুজ্জামানের বাড়ি বাগেরহাটে। পদ্মা ফেরি দিয়ে বাগেরহাট যেতে আগে আরদুজ্জামানদের সময় লাগতো ১০/১২ ঘণ্টা। বিড়ম্বনা তো ছিলই। এখন পদ্মা সেতু হওয়াতে দূরত্ব কমে আসবে চার পাঁচ ঘণ্টায়। এতে খুশি এই তারকা কাবাডি খেলোয়াড় বলেন, এরচেয়ে আনন্দের সংবাদ আমাদের জন্য আর কিছুই হতে পারে না। অনেক ভালো হয়েছে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জন্য। আগে ঢাকা আসতে অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতাম। ঈদের সময় অনেক বিপত্তিতে পড়তে হতো। এখন এসব কিছু আর হবে না। আমার তো মনে হয়, এটা সর্বকালের আনন্দের বিষয় আমাদের জন্য।
জাতীয় টেবিল টেনিসে ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন নড়াইলের সোনাম সুলতানা সোমা বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে নড়াইল যাবো। এমন একটি সময়ের জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছি। ওপেন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বাদ সাধলো বার্মিংহাম ও সলিডারিটি গেমস। এই দু’টি গেমসের জন্য ক্যাম্প করতে হচ্ছে। তবে এটা বলতে পারি, দেশে ফিরেই আমি বাড়ি যাবো পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে।’