ময়মনসিংহের গৌরীপুরে গতকাল শনিবার ২৪ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ ছিল গড়ে ১৬-১৭ ঘণ্টা।লোড শেডিং ছিল সাত থেকে আট ঘণ্টা।হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে গড়ে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না।এ ধরনের চিত্র এখন দেশের বৃহত্তর বিদ্যুৎ বিতরণ কম্পানি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (আরইবি) বিতরণ এলাকা ময়মনসিংহ,রংপুর,চট্টগ্রাম,সিলেট, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের প্রতিটি জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলেই।অতিরিক্ত লোড শেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন।রোদ ও ভাপসা গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।ধৈর্য হারিয়ে এরই মধ্যে বেশ কিছু গ্রাহক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়াও জানাচ্ছেন।
জ্বালানি সাশ্রয়ে গত মঙ্গলবার থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে শুরু হয় এলাকাভিত্তিক লোড শেডিং।তবে সরকারের পক্ষ থেকে দিনে একবার এক ঘণ্টা করে লোড শেডিং দেওয়ার কথা বলা হলেও রাজধানীসহ পুরো দেশেই একাধিকবার লোড শেডিং করা হচ্ছে।গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দুই থেকে তিনবার লোড শেডিং হয়েছে। রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলে ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত লোড শেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।
সাত থেকে আট ঘণ্টা লোড শেডিংয়ের অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে আরইবির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,আমাদের বিতরণ এলাকায় চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের বরাদ্দ কম পাচ্ছি।যার কারণে বেশ কিছু এলাকায় সাত থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত লোড শেডিং দিতে হচ্ছে।বিদ্যুতের বরাদ্দ কম থাকায় বরিশাল বিভাগ ছাড়া ঢাকা,ময়মনসিংহ,রংপুর,সিলেট,চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর বিভিন্ন জেলায় একাধিকবার লোড শেডিং হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন,আজ (গতকাল) দিনে আরইবির সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল সাত হাজার মেগাওয়াট।সরবরাহ করা গেছে সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট।ঘাটতি ছিল এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াট।সন্ধ্যার পর চাহিদার সঙ্গে বিদ্যুতের বরাদ্দ বাড়ায় তখন ঘাটতি ছিল এক হাজার মেগাওয়াটের মতো।এতে দিনের তুলনায় রাতে লোড শেডিং কিছুটা কম ছিল।
ময়মনসিংহের গৌরপুর উপজেলার গৃহিণী মিনুয়ারা বেগম বলেন,গতকাল ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্তই পাঁচ-ছয় ঘণ্টা লোড শেডিং হয়েছে।দুই ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ এলেও আধা ঘণ্টা থাকার পর আবার দুই ঘণ্টার জন্য উধাও।এভাবেই চলছে আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ।পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে বলা হচ্ছে,বিদ্যুতের বরাদ্দ কম পাওয়ায় ঘন ঘন লোড শেডিং দেওয়া লাগছে।
হবিগঞ্জের বানিয়াচং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জোনাল ম্যানেজার পারভেজ ভূইয়া বলেন,বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় লোড শেডিং শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ পাচ্ছি না।আজ (গতকাল) দিনে আমাদের ছয় মেগাওয়াট চাহিদার মধ্যে তিন মেগাওয়াটও পাচ্ছি না।সন্ধ্যার পর চাহিদা বেড়ে হয় ১০ মেগাওয়াট,সরবরাহ করা যায় না ছয় মেগাওয়াটও।
চা-বাগানের উৎপাদন ব্যাহত
চায়ের ভরা মৌসুম এখন।তবে এবার ভরা মৌসুমেই ভয়াবহ লোড শেডিংয়ের কবলে পড়েছে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ১৭টি চা – বাগান।ঘন ঘন লোড শেডিংয়ের কারণে বাগানগুলো যথাযথভাবে চা-পাতা প্রক্রিয়াজাতের কাজ করতে পারছে না।ফলে কারখানায় নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার কেজি কাঁচা চা -পাতা।এ ছাড়া উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চা -পাতার গুণগত মান কমে যাচ্ছে।এভাবে চলতে থাকলে এ বছর চা – বাগানগুলোর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।চা – বাগানসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এ কথা বলেছেন।
চা – বাগানসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন,চা -পাতা তোলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রক্রিয়াজাত করতে হয়।কিন্তু লোড শেডিং চালু হওয়ায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে চা – শিল্প।এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে দুই – তিন ঘণ্টা থাকছে না।২৪ ঘণ্টায় গড়ে ১০-১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।এতে চা -পাতার গুণগত মান কমে যাচ্ছে।এর প্রভাব পড়বে রপ্তানি বাজারেও।দক্ষিণগুল চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো.মাহমুদুল হাসান মাছুম বলেন,এখন আমাদের পিক সিজন।চা -পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে ২৪ ঘণ্টা কারখানা চালু রাখতে হয়।এই সময়ে ১০-১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।ঘন ঘন লোড শেডিংয়ের কারণে চায়ের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে।আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বড়লেখা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সুহেল রানা চৌধুরী গতকাল বলেন,শনিবার দিনে চাহিদার অর্ধেকেরও কম সরবরাহ পেয়েছি।এ জন্য লোড শেডিং দিতে হচ্ছে।ফলে চা – বাগানগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না।লোড শেডিংয়ের কারণে চা – শিল্পের ক্ষতির বিষয়টা আমরা অনুধাবন করছি।বিষয়টি ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।