ত্রিপক্ষীয় আলোচনার লক্ষ্যে গতকাল মঙ্গলবার ইরানের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে তাঁর। তুরস্কের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন,তেহরানে অনুষ্ঠেয় আলোচনায় উঠে আসবে শস্য রপ্তানি,সিরিয়া ও ইউক্রেন ইস্যু।
ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে পুতিনের এবারের সফর ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।মস্কোর আন্তর্জাতিক মিত্র হিসেবে পরিচিত ইরান নিজেও পারমাণু অস্ত্র প্রশ্নে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে রয়েছে।
ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি নিয়ে আলোচনার লক্ষ্যে গত সোমবারই তেহরানে পৌঁছেছেন এরদোয়ান। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর রুশ রাষ্ট্রপ্রধান এই প্রথম ন্যাটোভুক্ত কোনো দেশের প্রেসিডেন্টের মুখোমুখি হচ্ছেন।
মাত্র কয়েক দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েল ও সৌদি আরব সফর করেছেন।এত অল্প সময়ের ব্যবধানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের এ সফর আসলে ইরান,চীন ও ভারতের সঙ্গে দেশটির কৌশলী সম্পর্ক সুগভীর করার পরিকল্পনার বিষয়ে পশ্চিমকে দৃঢ় বার্তা পাঠাচ্ছে,এমনটা মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।
পুতিনের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপদষ্টো ইউরি উশাকভ বলেছেন,খামেনির সঙ্গে (পুতিনের) যোগাযোগের ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক এজেন্ডার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে তাঁদের মধ্যে আস্থার একটি সংলাপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এবারের এ সফরে গত বছর নির্বাচিত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গেও দেখা করবেন পুতিন।
পুতিনের সফর গুরুত্বপূর্ণ ইরানের জন্যও ইরানের দিক থেকে হিসাব করলে পুতিনের এ সফর একদম যথাসময়ে হতে চলেছে।পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে অনেক দিন ধরেই নিজ অর্থনীতি নিয়ে ধুঁকছে দেশটি।পারমাণু অস্ত্র ও অন্যান্য ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুঝতে হচ্ছে ইরানকে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইরানি এক কর্মকর্তা বলেছেন,ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিকশিত ভূরাজনৈতিক সম্পর্ককে বিবেচনায় নিয়ে ইরানের ধর্মীয় নেতারা ওয়াশিংটন ও এর মধ্যপ্রাচ্য মিত্রদের মোকাবেলা প্রশ্নে মস্কোর সমর্থন পাওয়ার চষ্টো করছেন।
মূলত মস্কোর সমর্থন নিশ্চিত করার মাধ্যমে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি পুনরুদ্ধারে ওয়াশিংটনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে তেহরান।এ ক্ষেত্রে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির ঊর্ধ্বমুখী মূল্যের বিষয়টিকেও আমলে নিয়েছে দেশটি।পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্যেষ্ঠ এক ইরানি কর্মকর্তা বলেছেন,আমাদের দৃঢ় একজন মিত্র প্রয়োজন এবং মস্কো একটি পরাশক্তি।
এদিকে চীনের সঙ্গে রাশিয়ার অন্তরঙ্গ সম্পর্কের কারণে অন্তত একদিক থেকে মাসুল গুনতে হচ্ছে ইরানকে। তাদের কাছ থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে বেইজিং।২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ইরানের হাতে প্রধান যে আয়ের উৎসগুলো রয়েছে,এটি সেগুলোর একটি।
মে মাসে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায়,রাশিয়ার ব্যাপক মূল্য ছাড়ের তেলের দিকে বেইজিং ঝুঁকে পড়ায় ইরান তাদের প্রায় চার কোটি ব্যারেল তেল এশিয়ার সাগরে সংরক্ষণ করে রাখতে বাধ্য হয়েছে এবং সেই তেলের ক্রেতা খুঁজছে।
আলোচনায় সিরিয়া ইস্যু ইরান ও তুরস্কের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় সিরিয়ার ইস্যুটিও উঠে আসবে।ওই অঞ্চলে সহিংসতা কমানোর চষ্টো চালিয়ে আসছেন এরদোয়ান।সম্প্রতি সীমান্ত এলাকার কাছের ‘নিরাপদ সীমা’ ৩০ কিলোমিটার বৃদ্ধি করতে আরো সামরিক অভিযান চালানোরও হুমকি দিয়েছেন তিনি।তবে এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে রাশিয়া ও ইরানের।দুটি দেশই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সমর্থন দিচ্ছে।অন্যদিকে এরদোয়ান অবস্থান নিয়েছেন আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের পক্ষে।