আগের বছরের চেয়ে বিশ্বে নারী প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি। আইপিইউর প্রতিবেদন অনুযায়ী পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই নারী প্রতিনিধিত্ব বিরাজমান, যা ইতিহাসে ২০২২ সালের প্রতিবেদনে প্রথম ঘটনা। ২০২২ সালে বিশ্বের ৪৭টি দেশে নির্বাচন হয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করে ‘উইমেন ইন পার্লামেন্ট-২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বিশ্বের ১৮৬টি দেশের নারী প্রতিনিধিত্বের অবস্থান। গত ৩ মার্চ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। পার্লামেন্টে নানা ধর্ম, বর্ণ, সংখ্যালঘু, কৃষ্ণাঙ্গ, ট্রান্সজেন্ডারসহ নানা প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। ১৮৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৭ নম্বরে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয়। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম অবস্থান রয়েছে নেপাল। নেপালের অবস্থান ৫৪তম। দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান ১১০তম। এবং সেই সঙ্গে ভুটান আছে চতুর্থ অবস্থানে। ১৪০তম অবস্থান নিয়ে ভারত আছে দক্ষিণ এশিয়ায় পঞ্চম এবং জাপানের অবস্থান ১৬৪তম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রথম অবস্থানে আছে রুয়ান্ডা। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে কিউবা। তারপর যথাক্রমে নিকারাগুয়া, মেক্সিকো নিউজিল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। রুয়ান্ডায় সংসদের নিম্নকক্ষে ৮০টি আসনের মধ্যে ৪৯টি আসনে নারী নির্বাচিত হয়েছেন, যা ৬১ শতাংশেরও বেশি। উচ্চকক্ষে ২৬টি আসনের মধ্যে নারী প্রতিনিধিত্ব আছে ৯টি। এই হার প্রায় ৩৫ শতাংশ। কিউবায় এক কক্ষ পার্লামেন্ট। সেখানে ৩১৩ জন নারী সদস্য, যা মোট ৫৮৬টি আসনের ৫৩ শতাংশ। নিকারাগুয়ায় নারী প্রতিনিধিত্ব আছে ৫২ শতাংশ। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের বৈচিত্র্যময় নারী প্রতিনিধিত্বের সংখ্যা। ব্রাজিলে কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রতিযোগিতা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। কলম্বিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ট্রান্সজেন্ডারের সংখ্যা বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ জাপানে পুরুষ আধিপত্য বিরাজমান। সেখানেও নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে।
বাংলাদেশ নিয়ে সব আলোচনা-সমালোচনা করতে গেলে দেখা যায়, সংসদে ৩৫০ আসন, যেখানে নারীদের দখলে আসন আছে ৭৩টি। ৫০টি সংরক্ষিত মহিলা আসন এবং সরাসরি সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ২৩ নারী। দেশে সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৮ সালে। নারী প্রতিনিধিত্বের ‘উইমেন ইন পার্লামেন্ট-২০২২’ প্রতিবেদন অনুযায়ী অনেকেই ইতিবাচক ধারণা রাখেন। জাতীয় সংসদের স্পিকারের মতে, ভোটাধিকার ও সংসদের নারী প্রতিনিধিত্বের দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার ও সংসদের উপনাতা—এই চার শীর্ষ পদে নারী। এক্ষেত্রে সংবিধান ও সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে সংরক্ষিত আসনে নারীদের নির্বাচিত করার সুযোগ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বে সংরক্ষিত আসনের প্রয়োজন হবে না। অনেক বিশ্লেষকই সমালোচনা করতে গিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গণতন্ত্র ও নির্বাচনব্যবস্থার ওপর। সংরক্ষিত আসন ধরে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে। কিন্তু সেখানে সরাসরি নির্বাচন হয় না। আবার অনেকে মনে করেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন থাকলে সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ত।
দক্ষিণ এশিয়ায় নারী প্রতিনিধিত্বে নেপাল এগিয়ে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সংসদে যোগ্য নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি দরকার এবং সংসদে নারীর সরাসরি নির্বাচনের বিকল্প প্রস্তাব জরুরি। যেখানে বলা হয়, ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ৩০০ আসনের মধ্যে প্রথম মেয়াদে ১০০ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচন। পাঁচ বছর পর দ্বিতীয় মেয়াদে অন্য ১০০ আসনে নির্বাচন এবং পরবর্তী মেয়াদে বাকি ১০০ আসনে নির্বাচন। এরকম তিন মেয়াদে প্রতিটি আসনে একজন নির্বাচিত নারী সদস্য পাবেন। এতে সংসদে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির ফলে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নিয়ে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়বে। এতে যোগ্য নারীরাই নির্বাচিত হবেন। অতএব, ভবিষ্যতে জাতীয় সংসদে সরাসরি ভোটে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হোক।