পাহাড়িরা তাঁত ও হাতে তৈরি বাহারি কাপড় পর্যটকদের কাছে বিক্রি করেন
পার্বত্য জেলা বান্দরবান ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি স্থান। সুযোগ পেলেই তারা ছুটে যান বান্দরবানে পাহাড় ও মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখার জন্য। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ ও সবুজের অপরূপ সমারোহ তো রয়েছেই। সেখানকার নৈসর্গিক স্থানগুলো পর্যটকদের মনকে সিক্ত করে; তাদের মনে জাগিয়ে তোলে রোমাঞ্চকর অনুভূতি। সেখানে রয়েছে নীলগিরি, নীলাচল, মেঘলা, বৌদ্ধমন্দির, শৈলপ্রপাত ও বগালেকের মতো দর্শনীয় স্থান। এই জেলার পাহাড়ি মানুষের প্রধান আয়ের উৎস পর্যটন ও কৃষি। এর বাইরে তারা পর্যটকদের কাছে বিক্রির জন্য পাহাড়ের ফল ও জিনিস নিয়ে বসেন। পাহাড়ে বসবাসকারী নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ এবং বাঙালিরাও কলা, আনারস, পেয়ারা, ড্রাগন ও পেঁপে নিয়ে বসেন বিক্রির জন্য। পর্যটকরা এসব ফল কিনে নেন, খেয়ে নেন; পথের ক্লান্তি ভুলে তৃপ্তিবোধ করেন। এগুলোর দাম সাধ ও সাধ্যের নাগালেই।
পাহাড়িদের অনেকেই পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে স্থানীয় তাঁত ও হাতে তৈরি বাহারি রঙের চাদর এবং পোশাক বিক্রির জন্য নিয়ে বসেন। অনেকেই আছেন যারা অর্থের বিনিময়ে পর্যটকদের ছবি তুলে দেন। গান শুনিয়েও অর্থ উপার্জন করেন। ট্যুরিস্টদের চান্দের গাড়িতে চড়িয়ে দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরিয়ে দেখিয়ে টাকা আয় করছেন, চালাচ্ছেন তাদের জীবন-জীবিকা।
এখানে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে গড়ে উঠেছে অভূতপূর্ব সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি। তবে পর্যটন মৌসুম ঘিরেই তাদের কর্মব্যস্ততা বেশি থাকে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল এই পাঁচ মাস ব্যবসা হয় বলে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে।
বান্দরবান শহর থেকে চান্দের গাড়িতে চার ঘণ্টা চলার পর দেখা মিলবে পাহাড়ের উঁচুতে পর্যটকদের জন্য তৈরি দর্শনীয় স্থান নীলগিরি। সেখানে কথা হয় হুসাইন (২০) নামের এক ফটোগ্রাফারের সঙ্গে। সে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী। বান্দরবান সদরে বাসা হলেও পরিবারের প্রয়োজন ও নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে তাকে বেছে নিতে হয়েছে এ কাজ। তিন ভাই ও এক বোন এবং বাবা-মাসহ ছয়জনের সংসার চলে তার ও বড় ভাইয়ের উপার্জনে। পর্যটকদের মন ভুলিয়ে ছবি তুলে দিতে পারলে সেখান থেকে যে অর্থ মেলে তাতেই চলে তাদের সংসার। এ কাজটি কঠিন বলেও জানান হুসাইন। বলেন, সবার হাতে এখন স্মার্টফোন। তার পরও চ্যালেঞ্জ নিয়ে পাঁচ বছর ধরে কাজ করছি। দৈনিক ৬০০-৭০০ টাকা আয় হয়। তবে পর্যটন মৌসুমে আরো বেশি আয় হয়।
বগালেক এলাকায় কথা হয়, ঝিং মক মগের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজার কাছ থেকে এক শ বছরের লিজ নেওয়া বারো বিঘা জমিতে চাষ করেই চলছে তার সংসার। আম, পেঁপে ও কলা- এগুলো চাষ করে বছরে যা আয় হয়- তা দিয়েই চলে সংসার। এ বছর তার পেঁপে বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৬০ হাজার টাকা, কলা থেকে ৪০ হাজার টাকা। বারো মাসই চলে পেঁপে বিক্রি। পাহাড়িদের উৎপাদিত ফল পর্যটকরা খান তৃপ্তি নিয়ে। যাওয়ার সময় অনেকেই কিনে নিয়ে যান।
বান্দরবান সদর থেকে মূলত বিভিন্ন স্পট দেখতে পর্যটকদের ভরসা চান্দের গাড়ি। এ ধরনের গাড়ির একজন চালক আরিফ। আট বছর ধরে চান্দের গাড়ি চালিয়েই চলছে তার সংসার। কথা হয় তার সঙ্গে মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রে। তিনি বলেন, বান্দরবান বেড়ানোর জন্য এখন মৌসুম না। এ সময়ে শিক্ষা সফরসহ শৌখিন কিছু মানুষ এখানে আসেন। গাড়ির সংখ্যাও বেশি। তাই আট দিন পর আজ ট্রিপ পেলাম। মাসিক সাত হাজার টাকা বেতনে মালিকের চাকরি করি। ট্রিপ পেলে সেখান থেকে কিছু কমিশন পাই, তা দিয়েই চলে এক সন্তানের জনক আরিফের সংসার। বলেন, শীত মৌসুমে (ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল) বেশি পর্যটক আসেন এখানে; তখন বাড়তি আয় হয়।
বান্দরবান সদরের কাছেই পর্যটন স্পট নীলাচল। সেখানে পৌঁছে একজন ব্যক্তিকে ঘিরে কিছু মানুষের জটলা দেখতে পাওয়া যায়। একটু এগোতেই সুমধুর কণ্ঠের গান ভেসে আসতে থাকে। কাছে যেতেই দেখা যায় জন্মান্ধ একজন ব্যক্তি আপন মনে গান গেয়ে চলেছেন। এগিয়ে গিয়ে কথা বলতেই জানান, সাতকানিয়ার ধর্মপুর গ্রামে তার বাড়ি। নাম অন্নদাশ বাউল। নিজেই গান বাঁধেন এবং সুর তুলে নিজেই গান। এটাই তার একমাত্র আয়ের উৎস। প্রতিদিন সকালে খেয়ে দুপুরের আগে আগে নীলাচলে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন; এটা তার দৈনন্দিন রুটিন। আয় কেমন জানতে চাইলে বলেন, ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হয়। আরো বলেন, সবাই দেয় না; বেশির ভাগ গান শুনে চলে যায়। প্রত্যেকে ২০ টাকা করে দিলেও হাজার টাকা ছাড়িয়ে যেত।
এভাবেই চলছে নানাভাবে পর্যটন এলাকা বান্দরবান এলাকায় বসবাসরত মানুষের জীবন-জীবিকা। পর্যটক ঘিরেই প্রতিদিন তারা স্বপ্ন বোনেন। কারণ, পর্যটকরা যেন তাদের জন্য আশীর্বাদ, অন্নদাতা।
জানতে চাইলে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি এ প্রতিবেদককে বলেন, বান্দরবানের মানুষের জীবন-জীবিকার প্রধান উৎস কৃষি ও পর্যটন। এখানে কৃষিপণ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও বহুমুখী। ফল-ফলাদি উৎপাদন করে পাহাড়িরা আয় রোজগার করেন। তবে পর্যটনকে ঘিরে মানুষ আয়ের পথ খুঁজে নিয়েছেন। আগে পর্যটন মৌসুম বলতে অক্টোবর থেকে মার্চ বোঝাত। বতর্মানে সারা বছরই পর্যটকের সমাগম ঘটে। যান বান্দরবানে। এই বান্দরবানে বারো ধরনের জাতির বাস। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া তাদের মাঝে সম্প্রীতি রয়েছে।
বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম মনু এ প্রসঙ্গে বলেন, এখানকার মানুষরা নানা কাজের মাধ্যমে আয়-রোজগার করে থাকে। চাকরিও আছে। তবে এর সঙ্গে কৃষিকে প্রধান বলেই গণ্য করতে হবে।
পাহাড়িরা তাঁত ও হাতে তৈরি বাহারি কাপড় পর্যটকদের কাছে বিক্রি করেন
পার্বত্য জেলা বান্দরবান ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি স্থান। সুযোগ পেলেই তারা ছুটে যান বান্দরবানে পাহাড় ও মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখার জন্য। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ ও সবুজের অপরূপ সমারোহ তো রয়েছেই। সেখানকার নৈসর্গিক স্থানগুলো পর্যটকদের মনকে সিক্ত করে; তাদের মনে জাগিয়ে তোলে রোমাঞ্চকর অনুভূতি। সেখানে রয়েছে নীলগিরি, নীলাচল, মেঘলা, বৌদ্ধমন্দির, শৈলপ্রপাত ও বগালেকের মতো দর্শনীয় স্থান। এই জেলার পাহাড়ি মানুষের প্রধান আয়ের উৎস পর্যটন ও কৃষি। এর বাইরে তারা পর্যটকদের কাছে বিক্রির জন্য পাহাড়ের ফল ও জিনিস নিয়ে বসেন। পাহাড়ে বসবাসকারী নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ এবং বাঙালিরাও কলা, আনারস, পেয়ারা, ড্রাগন ও পেঁপে নিয়ে বসেন বিক্রির জন্য। পর্যটকরা এসব ফল কিনে নেন, খেয়ে নেন; পথের ক্লান্তি ভুলে তৃপ্তিবোধ করেন। এগুলোর দাম সাধ ও সাধ্যের নাগালেই।
পাহাড়িদের অনেকেই পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে স্থানীয় তাঁত ও হাতে তৈরি বাহারি রঙের চাদর এবং পোশাক বিক্রির জন্য নিয়ে বসেন। অনেকেই আছেন যারা অর্থের বিনিময়ে পর্যটকদের ছবি তুলে দেন। গান শুনিয়েও অর্থ উপার্জন করেন। ট্যুরিস্টদের চান্দের গাড়িতে চড়িয়ে দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরিয়ে দেখিয়ে টাকা আয় করছেন, চালাচ্ছেন তাদের জীবন-জীবিকা।
এখানে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে গড়ে উঠেছে অভূতপূর্ব সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি। তবে পর্যটন মৌসুম ঘিরেই তাদের কর্মব্যস্ততা বেশি থাকে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল এই পাঁচ মাস ব্যবসা হয় বলে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে।
বান্দরবান শহর থেকে চান্দের গাড়িতে চার ঘণ্টা চলার পর দেখা মিলবে পাহাড়ের উঁচুতে পর্যটকদের জন্য তৈরি দর্শনীয় স্থান নীলগিরি। সেখানে কথা হয় হুসাইন (২০) নামের এক ফটোগ্রাফারের সঙ্গে। সে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী। বান্দরবান সদরে বাসা হলেও পরিবারের প্রয়োজন ও নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে তাকে বেছে নিতে হয়েছে এ কাজ। তিন ভাই ও এক বোন এবং বাবা-মাসহ ছয়জনের সংসার চলে তার ও বড় ভাইয়ের উপার্জনে। পর্যটকদের মন ভুলিয়ে ছবি তুলে দিতে পারলে সেখান থেকে যে অর্থ মেলে তাতেই চলে তাদের সংসার। এ কাজটি কঠিন বলেও জানান হুসাইন। বলেন, সবার হাতে এখন স্মার্টফোন। তার পরও চ্যালেঞ্জ নিয়ে পাঁচ বছর ধরে কাজ করছি। দৈনিক ৬০০-৭০০ টাকা আয় হয়। তবে পর্যটন মৌসুমে আরো বেশি আয় হয়।
বগালেক এলাকায় কথা হয়, ঝিং মক মগের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজার কাছ থেকে এক শ বছরের লিজ নেওয়া বারো বিঘা জমিতে চাষ করেই চলছে তার সংসার। আম, পেঁপে ও কলা- এগুলো চাষ করে বছরে যা আয় হয়- তা দিয়েই চলে সংসার। এ বছর তার পেঁপে বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৬০ হাজার টাকা, কলা থেকে ৪০ হাজার টাকা। বারো মাসই চলে পেঁপে বিক্রি। পাহাড়িদের উৎপাদিত ফল পর্যটকরা খান তৃপ্তি নিয়ে। যাওয়ার সময় অনেকেই কিনে নিয়ে যান।
বান্দরবান সদর থেকে মূলত বিভিন্ন স্পট দেখতে পর্যটকদের ভরসা চান্দের গাড়ি। এ ধরনের গাড়ির একজন চালক আরিফ। আট বছর ধরে চান্দের গাড়ি চালিয়েই চলছে তার সংসার। কথা হয় তার সঙ্গে মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রে। তিনি বলেন, বান্দরবান বেড়ানোর জন্য এখন মৌসুম না। এ সময়ে শিক্ষা সফরসহ শৌখিন কিছু মানুষ এখানে আসেন। গাড়ির সংখ্যাও বেশি। তাই আট দিন পর আজ ট্রিপ পেলাম। মাসিক সাত হাজার টাকা বেতনে মালিকের চাকরি করি। ট্রিপ পেলে সেখান থেকে কিছু কমিশন পাই, তা দিয়েই চলে এক সন্তানের জনক আরিফের সংসার। বলেন, শীত মৌসুমে (ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল) বেশি পর্যটক আসেন এখানে; তখন বাড়তি আয় হয়।
বান্দরবান সদরের কাছেই পর্যটন স্পট নীলাচল। সেখানে পৌঁছে একজন ব্যক্তিকে ঘিরে কিছু মানুষের জটলা দেখতে পাওয়া যায়। একটু এগোতেই সুমধুর কণ্ঠের গান ভেসে আসতে থাকে। কাছে যেতেই দেখা যায় জন্মান্ধ একজন ব্যক্তি আপন মনে গান গেয়ে চলেছেন। এগিয়ে গিয়ে কথা বলতেই জানান, সাতকানিয়ার ধর্মপুর গ্রামে তার বাড়ি। নাম অন্নদাশ বাউল। নিজেই গান বাঁধেন এবং সুর তুলে নিজেই গান। এটাই তার একমাত্র আয়ের উৎস। প্রতিদিন সকালে খেয়ে দুপুরের আগে আগে নীলাচলে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন; এটা তার দৈনন্দিন রুটিন। আয় কেমন জানতে চাইলে বলেন, ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হয়। আরো বলেন, সবাই দেয় না; বেশির ভাগ গান শুনে চলে যায়। প্রত্যেকে ২০ টাকা করে দিলেও হাজার টাকা ছাড়িয়ে যেত।
এভাবেই চলছে নানাভাবে পর্যটন এলাকা বান্দরবান এলাকায় বসবাসরত মানুষের জীবন-জীবিকা। পর্যটক ঘিরেই প্রতিদিন তারা স্বপ্ন বোনেন। কারণ, পর্যটকরা যেন তাদের জন্য আশীর্বাদ, অন্নদাতা।
জানতে চাইলে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি এ প্রতিবেদককে বলেন, বান্দরবানের মানুষের জীবন-জীবিকার প্রধান উৎস কৃষি ও পর্যটন। এখানে কৃষিপণ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও বহুমুখী। ফল-ফলাদি উৎপাদন করে পাহাড়িরা আয় রোজগার করেন। তবে পর্যটনকে ঘিরে মানুষ আয়ের পথ খুঁজে নিয়েছেন। আগে পর্যটন মৌসুম বলতে অক্টোবর থেকে মার্চ বোঝাত। বতর্মানে সারা বছরই পর্যটকের সমাগম ঘটে। যান বান্দরবানে। এই বান্দরবানে বারো ধরনের জাতির বাস। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া তাদের মাঝে সম্প্রীতি রয়েছে।
বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম মনু এ প্রসঙ্গে বলেন, এখানকার মানুষরা নানা কাজের মাধ্যমে আয়-রোজগার করে থাকে। চাকরিও আছে। তবে এর সঙ্গে কৃষিকে প্রধান বলেই গণ্য করতে হবে।