জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ জিল বাংলা চিনিকল লিমিটেড দীর্ঘদিন যাবত প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ঋণের বোঝা বয়ে চলেছে। ঐ ঋণের বিপরীতে মিলটিকে ২০২১ সালের জুন নাগাদ ৪২ কোটি এবং ২০২২ সালের জুন নাগাদ ২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা সুদ দিতে হয়েছে। ফলে প্রতি অর্থবছরে মিলটিকে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
জানা গেছে, জিল বাংলা চিনিকল লিমিটেডটি দেশখ্যাত উৎকৃষ্ট মানের চিনি উৎপাদনকারী ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বাজারে এই মিলের উৎপাদিত চিনির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশের অন্যান্য মিলের তুলনায় এই মিলে চিনি উৎপাদনের হার সর্বাধিক। চলতি ২০২২-২৩ মাড়াই মৌসুমে মিলটির চিনি আহরণের হার ছিল ৬.৬১। তার পরও প্রতি মাড়াই মৌসুমে (অর্থবছরে) চিনিকলটিকে গুনতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণ লোকসান। কর্তৃপক্ষের দাবি, মিলটিকে দীর্ঘদিন ধরে প্রতি বছর পুঞ্জীভূত ঋণের সুদ দিতে গিয়ে বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে।
জিল বাংলা চিনিকল লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) শরিফ মো. জিয়াউল হক জানান, ২০২১ সালের জুন নাগাদ ঐ অর্থবছরে মিলটিতে ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ ছিল। তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ২১৬ কোটি ও বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের ২৩৪ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ৪২ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়েছে। বর্তমানে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকায়। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ২৫৬ কোটি এবং বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের ২৪২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। গত ২০২২ সালের জুন মাস নাগাদ ঐ অর্থবছরে সুদ দিতে হয়েছে ২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ঋণের সুদ মওকুফ করা হলে মিলটির লোকসান কয়েক গুণ কমে আসবে বলে তিনি জানান।
বিগত পাঁচ বছরের আখ মাড়াই, চিনি উৎপাদন ও লাভ-লোকসানের রেকর্ড অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ মৌসুমে ১০২ দিনে ৮৩ হাজার ৫৫৩ টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করে ৫ হাজার ৬০৮ টন, এতে লোকসান ৩৮ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ১০১ দিনে ৮৩ হাজার ৫০৪ টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করে ৫ হাজার ২২২ টন। লোকসান ৬২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ মৌসুমে ৮৫ দিনে ৭০ হাজার ৬৮৯ টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করে ৫ হাজার ১৫৩ টন। লোকসান ৫৬ কোটি টাকা। ২০২০-২১ মৌসুমে ৭২ দিনে ৫৮ হাজার ৯৫১ টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করে ৩ হাজার ৯০৮ টন। লোকসান ৬৯ কোটি টাকা। ২০২১-২২ মৌসুমে ৪৪ দিনে ৩৫ হাজার ৬৯৮ টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করে ২ হাজার ৪৯৮ টন। লোকসান ৫২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩৫ হাজার ১৭১ টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করে ২ হাজার ৩২২ টন। এর লাভ-লোকসানের হিসাব এখনো চূড়ান্ত করেনি মিল কর্তৃপক্ষ।
জিবাচিক ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. রায়হানুল হক রায়হানের ভাষ্য, জিল বাংলা চিনিকল একটি উৎকৃষ্ট মানের চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান পুঞ্জীভূত ঋণের সুদ দিতে গিয়ে প্রতি অর্থবছরে বাড়তি লোকসানের মুখে পড়ছে। তিনি পুঞ্জীভূত ঋণের সুদ মওকুফের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
জিল বাংলা চিনিকলের ডিজিএম (সম্প্রসারণ) মো. আলা উদ্দিন ও মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) নূরে আলম জানান, জিল বাংলা চিনিকল দেশের সর্বোৎকৃষ্ট চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। দেশের অন্যান্য চিনিকলের তুলনায় এই চিনিকলের চিনি আহরণের হার সর্বাধিক। গত ২০২১-২২ মৌসুমের চিনি আহরণের হার ছিল ৭.০০ এবং চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে চিনি আহরণের হার ৬.৬১ শতক। পুঞ্জীভূত ঋণের কারণে মিলটি প্রতি বছর বেশি বেশি লোকসান গুনছে। তিনি মিলটির ঋণের সুদ মওকুফের দাবি জানান।
জিল বাংলা চিনিকলের ব্যবস্থাপক মো. রাব্বিক হাসান জানান, মিলটির পুঞ্জীভূত ঋণের সুদ মওকুফের জন্য সদর দপ্তরে জানানো হয়েছে। সরকার সদয় হয়ে ঋণের সুদ মওকুফ করলে মিলটির লোকসান কমে আসবে।