বহির্ভূত সম্পর্কের টানাপোড়েন বড়ই ভয়ংকর। পুরনো চাল যেমন ভাতে বাড়ে, পুরনো প্রেমও হয়তো মনে বাড়ে। আর সেকারণেই বোধকরি জয়া বচ্চন, গৌরি খান বা কাজলের ভেতরে দারুণ এক অন্ত্যমিল রয়েছে, কারণ এই তিন মহিয়সী নারীর স্বামীদেরই বলিউডে পুরনো প্রেম রয়েছে।
সম্প্রতি হেমা মালিনীর জন্মদিনে তাই অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হলো। কারণ ২৫ বছর পর একসাথে চোখে চোখ রাখলেন রেখা ও জয়া বচ্চন। যে দুজনার প্রেমিক একজনই ছিলেন। অমিতাভ বচ্চন! অন্যদিকে কাজল-অজয় সম্পর্কটা সবসময়ই টক-ঝাল-মিষ্টি ছিল। এখনও তাই। যদিও অজয় দেবগনের স্কুল ফ্রেন্ড হিসেবে টাবু’র সাথে কাজলের এক শীতল সম্পর্ক চলে দীর্ঘদিন।
এদিকে গৌরি খানের সাথে প্রায় ১ যুগ হতে চলল প্রিয়াংকা চোপড়ার সাথে কথা বলা বন্ধ! কারণ ঐ একই.. বহির্ভূত প্রেম! বলা চলে রেখারই উত্তরসূরী হতে চলেছেন প্রিয়াংকা চোপড়া। আজও তাই অমিতাভ বচ্চন আর রেখা যেমন পাশাপাশি দাঁড়ান না, ঠিক একইভাবে শাহরুখ-প্রিয়াংকা একসাথে তো দূরের কথা, একজন কোনো অনুষ্ঠানে থাকলে আরেকজন সেই পথই মাড়াতে চান না!
জয়া-অমিতাভ-রেখা
এই ত্রয়ী সম্পর্কের শীতলতা কমছে ক্রমশ। ‘আলাপ’ ছবিতেই আলাপ হয় রেখার সাথে। প্রথম দর্শনেই মেয়েটির সৌন্দর্যের আকর্ষণে আটকা পড়েছিলেন অমিতাভ। বিশেষ করে চোখের। রেখা তখন দ্বিতীয় সারির নায়িকা। বাবা জেমিনি গণেশন আর মা পুষ্পাবলির মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের পর টাকার প্রয়োজনে সিনেমায় আসেন রেখা। একরাতে অমিতাভই ফোন করেন রেখাকে, অনেক দ্বিধাদ্বন্দের পর। কেননা রেখার কণ্ঠস্বর শোনার জন্য উতলা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। অমিতাভ রেখার প্রেমের গল্প তখন বলিউডের চলতি আলোচনা। তাদের কাস্ট করে একের পর এক সিনেমা নির্মিত হতে থাকে। তাদের প্রেমের টানটাও ক্রমশ বেড়েই চলেছে। একজনের কাছে আরেকজন খুঁজে পেয়েছেন আশ্রয়। রেখার বাড়ির ফিক্সড ফোনের নম্বর জানেন শুধু অমিতাভ। অমিতাভ ছাড়া ঐ টেলিফোনে কখনও রিং বাজে না।
মুম্বাইয়ের গসিপ ম্যাগাজিন, জয়ার নীরব খবরদারি সবকিছু থেকে দূরে লন্ডনকেই প্রেম করার জায়গা হিসেবে বেছে নিলেন অমিতাভ-রেখা। লন্ডনে একান্তে ঘুরে বেড়ান তারা। এরই মধ্যে বিয়ের তারিখও ঠিক করে ফেললেন তারা। কিন্তু ১৯৮২ সালে লন্ডন থেকে ফিরে ‘কুলি’ ছবির শ্যুটিং নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন অমিতাভ। শ্যুটিং চলাকালে আহত হন তিনি। সেখান থেকে সোজা মুম্বাইয়ের ব্রিচকান্ডি হাসপাতাল। আইসিইউতে অমিতাভ। জয়ার অনুমতি ছাড়া কেউ দেখা করতে পারবেন না অমিতাভের সঙ্গে। অথচ খবর পেয়ে ছুটে এসেও রেখা অমিতাভের সঙ্গে দেখা না করে ফিরে যান, জয়ার অনুমতি তিনি নিবেন না। এরপর থেকে এই ত্রয়ী সম্পর্ক ফ্রিজ হয়ে যায়। দীর্ঘ অনেকগুলো বছর পর জয়া-রেখা এক মঞ্চে হাসলেন। তবে কি অমিতাভ-রেখাও একসাথে দেখা করার অনুমতি পাবে?
গৌরি-শাহরুখ-প্রিয়াংকা
ডন ছবিটিই শাহরুখ-গৌরি সংসারের সর্বনাশ ঘটায়। পর্দার প্রেম বাস্তবে চলে আসে। শাহরুখ বিবাহিত। প্রিয়াংকা চোপড়া প্রেম করেন শাহিদ কাপুরের সঙ্গে। যদিও পর্দায় শাহরুখ-প্রিয়াংকা জুটি তখন বিপুল জনপ্রিয়। ফারহান আখতারের ‘ডন’ ছবিতে জুটি বাঁধার আগে থেকেই পরিচয় হয়ে গিয়েছিল দুজনের। তখনও ছবির জগতে আসেননি প্রিয়াংকা। ২০০০ সালে ‘দেশি গার্ল’ নামে এক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন, যার চূড়ান্ত পর্বে অন্যতম বিচারক ছিলেন শাহরুখ। সেই দেখা থেকেই শাহরুখের নজর কাড়েন প্রিয়াংকা।
পরবর্তীকালে ডন রিলিজের পরে শাহরুখকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকেন প্রিয়াংকা। এক কান দুইকান হয়ে গৌরি যখন জানতে পারেন…সেই থেকেই বিতণ্ডা তৈরি হয় গৌরি-প্রিয়াংকার। শোনা যায় গৌরি তখন নিজের সংসার টেকানোর জন্য সালমান খানের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সাল্লু বাবাই পরবর্তীকালে তার বলিউড দাপট দিয়ে প্রিয়াংকাকে অনেকটা একাই দেশছাড়া করান! আজ অব্দি এই ত্রয়ীর দেখা সাক্ষাত্ নিষিদ্ধই বলা চলে।
কাজল-অজয়-টাবু
কাজলের অনেক আগেই অজয়ের জীবনে এসেছিলেন টাবু। একই কলেজের সাহপাঠী ছিলেন ওরা দুজন। সেই নিবিড় বন্ধুত্বে প্রেম ছিল কিনা তা বেশ কিছু ইন্টারভিউতে স্পষ্ট করেছেন টাবু। টাবু বলেছেন, ‘কোনো ছেলে আমাকে বাজে কথা বললে, বা ব্যাড লুক দিলে অজয় নিজ দায়িত্বে ওকে সাউজ করে দিয়ে আসত। অনেকটা হিন্দি ছবির মতোই। কিন্তু তারা পরস্পরকে ‘আই লাভ ইউ’ বলেননি কোনোদিন এটাও বলেন টাবু। তবে মনে-প্রাণে চেয়েছিলেন টাবু অজয়কে তার জীবনের বাকি খাতার সঙ্গী করতে।
অজয়ের কাজের প্রতি একাগ্রতা আর দুজনার দুই ধর্ম ভিন্ন বলে টাবুর পরিবার থেকেও আসে প্রচ্ছন্ন বাধা। তাই সম্পর্কটা বেস্ট ফ্রেন্ডেই আটকে থাকে। এর ভেতরে অজয় কাজলের প্রেমের পাঠ শুরু হলে কাজল বারবার অজয়কে টাবুর সম্পর্ক নিয়ে খোঁচালেও অজয় সুন্দরভাবে তা ম্যানেজ করে ফেলেন! তবে দীর্ঘদিন একসাথে পার্টিতে যাওয়া বা মুভি করার ব্যাপারে না ছিল। অতঃপর কাজল-অজয় সংসারে সন্তানেরা বড় হয়ে গেলে …অজয় একধরনের ঈষত্ অনুমতি নিয়েই পুরনো বান্ধবীর সাথে ছবি শুরু করেন। এদিকে অজয় কৌশলে ঘর-বাহির দুটোই সুন্দর করে সামাল দিয়ে রেখেছেন যা অমিতাভ-শাহরুখ কেউই করতে পারেননি!