রপ্তানি বাজার এবং পণ্য লাইন উভয় ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য অর্জনের জন্য, বাংলাদেশকে অবশ্যই জাপানের মতো নতুন বাজারে টিঅ্যান্ডসি (টেক্সটাইল এবং পোশাক) আইটেমগুলোর শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে হবে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও জাপানের অনেক প্রতিশ্রুতি রয়েছে। বর্তমানে জাপানের বাজারের প্রায় ৩ দশমিক শূন্য শতাংশ বাংলাদেশের দখলে রয়েছে, যার বার্ষিক বাজারের আকার প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ২০১০ সালে জাপানের বাজার বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং দেশের শেয়ার নাটকীয়ভাবে না বাড়ার অনেক কারণ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ থেকে বোনা পণ্য শুল্কমুক্ত এবং ২০১১ সালের ১ এপ্রিল থেকে নিট পণ্য ঐ বাজারে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এখানে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্যের কারণে জাপানে তৈরি পোশাক রপ্তানি কেন ভালো হয়নি? এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত জাপানি মান নিয়ন্ত্রণ বেশ কঠোর। আইটেমগুলো গ্রহণ করার আগে, অনেক জাপানি গ্রাহক আক্ষরিক অর্থে তৃতীয় পক্ষ নমুনা হিসেবে চালান থেকে পোশাকের পৃথক টুকরোগুলো পরীক্ষা করে। অনেক বাংলাদেশি পোশাক প্রস্তুতকারকের পক্ষে এ ধরনের উচ্চমান পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
দ্বিতীয়ত, সামগ্রিকভাবে শিল্পটি ঐতিহাসিকভাবে ‘কম ঝুলন্ত ফল’ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রেতাদের দ্বারা প্রদত্ত আরো নমনীয় শর্তাবলির সন্ধান করেছে। ফলে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকরা এতদিন জাপানের বাজার এড়িয়ে চলেছিলেন। তবে এখন সময় পালটে গেছে। চার দশক ধরে, তৈরি পোশাকশিল্প বিকশিত এবং বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশ্বের উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। এই ক্ষমতার সঙ্গে এই সত্যটি এসেছে যে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক কারখানা ‘সবুজ’ হয়ে গেছে বা এটি করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে, শীর্ষস্থানীয় উৎপাদন কৌশল প্রয়োগ করে। এটি জাপানি পোশাক বাজারের বৃহত্তর অংশ দখল করার জন্য অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম।
অবশ্যই, চীন, যার প্রায় ৫৩ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে, জাপানি বাজারে সবচেয়ে বড় অবদান রেখে চলেছে। জাপান বর্তমানে আগ্রাসিভাবে চায়না+১ নীতি অনুসরণ করছে, যার ফলে নীতিমালার সাম্প্রতিক পরিবর্তনের ফলে তৈরি পোশাক পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে এই অত্যন্ত নির্ভরশীল সম্পর্ক থেকে সরে আসার আগ্রহ রয়েছে। যদিও প্রবৃদ্ধির অনেক সুযোগ রয়েছে, নীতিগত ক্ষেত্রে এখনো অনেক কিছু করার বাকি রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা যদি ‘সর্বাধিক পছন্দের জাতি’ উপাধির প্রতি জাপানের অঙ্গীকারকে সুরক্ষিত করতে পারেন, তবে এটি অবশ্যই সহায়তা করবে। বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। এগুলো পাশ হলে পোশাক শিল্পকে শক্তিশালী করবে।
দেশটির কঠোর নিয়মকানুনের কারণে, প্রধান তৈরি পোশাক উৎপাদনকারীরা ঐতিহাসিকভাবে জাপানি বাজার এড়িয়ে গেছেন। যাহোক, কিছু ব্যাবসায়িক প্রচেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে এবং এটা সাফল্যের মুখও দেখছে। কিছু শিল্পবিদদের মতে, জাপানি ক্রেতারা যে পরিমাণ দক্ষতা চান তা অর্জন করতে সময় এবং ধৈর্য প্রয়োজন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অবশ্যই সেই বাজারে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা, কম বর্জ্য এবং গুণমান অর্জনের জন্য কাজ করতে হবে। কারণ জাপানিরা তাদের বিধিবিধান পরিবর্তন করবে না।
পোশাক প্রস্তুতকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ (বাংলাদেশ গার্মেন্টস মেকার্স এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন) এই শিল্পের উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি সরকার এগিয়ে নেবে। গত বছর বিজিএমইএ ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ইভেন্টের আয়োজন করে। উদ্দেশ্য, বিদেশি গ্রাহকদের কাছে যাতে দেখানো যায় যে তৈরি পোশাক খাত গুণমানের দিক থেকে কতটা এগিয়ে গেছে। ধারণাটি ছিল খুবই চমৎকার। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য খুঁজে পাওয়ার জন্য একটি সুন্দর প্ল্যাটফরম। এতে ছিল সেমিনারেরও ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বিদেশি ক্লায়েন্ট এবং সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে গত ১০ বছরে শিল্পে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনগুলো সফলভাবে প্রদর্শিত হয়েছে। এখন বিদেশে এ ধরনের ইভেন্ট আয়োজনের কথাও বলা হচ্ছে, যেখানে গ্রাহকরা থাকেন, যেহেতু সব গ্রাহক বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন না। আমাদের বিশ্বাস, আমাদের পোশাকশিল্প কী সরবরাহ করে সে সম্পর্কে আরো জানার পরে তারা হয়তো বাংলাদেশ পরিদর্শনে আগ্রহী হবেন। বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ নির্ধারিত সময়ে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সফরের আগে তারা প্রথমে অস্ট্রেলিয়া সফর করবেন বলে জানা যায়। আগামী কয়েক বছরে পূর্ব এশিয়ায় পোশাক রপ্তানির বিষয়টি সরকারের জন্য একটি শীর্ষ নীতি হিসেবে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।