প্রকৃতিতে শীতের কাঁপন রেখে বিদায় নিল রিক্ত পৌষ। এলো মাঘ। এ মাসেই শীত ঋতুর সমাপ্তি। আজ মাঘের পয়লা দিন। শহরে ততটা তীব্র না হলেও গ্রামীণ জনপদে আক্ষরিক অর্থেই মাঘ এলো শীতের তীব্র দাপট নিয়ে। ‘শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন আমলকীর এই ডালে ডালে…’ এমন লঘু দৃশ্যপট ঘুচে গেছে। এবার শীত এসেছে শীতের প্রকৃত চরিত্র নিয়েই।
হিমালয় পাদদেশীয় উত্তরাঞ্চলে শীতের ছোবলে কাহিল হয়ে পড়েছে জনজীবন। হিমেল বাতাস শরীরে কাঁটার মতো বিঁধছে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় গতকাল শনিবার তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়। বৃষ্টির মতো ঝরেছে কুয়াশা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবারের শীত মৌসুমে এটি সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। সারা দেশেই শীতের দাপট কমবেশি রয়েছে। তবে সামনের কয়েক দিন তাপমাত্রা আরো নামতে থাকবে। হাড় কাঁপানো শীতের পূর্বাভাস রয়েছে।
মাঘের প্রকৃতি নীরস, শীতে জবুথবু। কৃষি ও কৃষকের সঙ্গে এর একটি যোগসূত্র রয়েছে। ‘পৌষের শেষ আর মাঘের শুরু/এর মধ্যে শাইল বোরো যত পারো।’ গাছে গাছে ডালে ডালে আমের কুশি এখন বোলে পরিণত হচ্ছে। রিক্ত নিঃস্ব মাঘের বড় স্বাতন্ত্র্য হলো, এ মাস বসন্তের আগমন বারতা জানায়। মাঘে ভোরের লাল সূর্য দেখতে অনেকটা বড় মনে হয়। এটা দৃষ্টিভ্রম। বিজ্ঞান বলছে, মাঘে কুয়াশা শিশিরের বিদায় পর্ব। পাতা ঝরার দিন শুরু হয়ে বৃক্ষরাজিতে নতুন কিশলয় জেগে উঠতে থাকে। গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী জানুয়ারি মাসের মধ্য ভাগ থেকে ফেব্রুয়ারি অবধি মাঘ মাসের ব্যাপ্তি।
সাধারণত ৩০ দিনে মাঘ মাসের শেষভাগে কখনো কখনো বৃষ্টি হয়ে থাকে। খনার বচনে বলে, ‘যদি বর্ষে মাঘ/গিরস্থের বন্ধে ভাগ (ভাগ্য)। ‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্যি রাজার পুণ্যি দেশ’। মূলত বাংলাদেশ বিষুবরেখার উত্তরে। প্রায় সাড়ে ২৩ ডিগ্রি অক্ষাংশে। কিন্তু শীতকালে অবস্থান পরিবর্তন করে সূর্য বিষুবরেখার দক্ষিণে চলে যায়। দক্ষিণে কিছুটা হেলে থাকে। দিন ছোট হয়। বড় হতে থাকে রাত। ফলে শীতের প্রকোপ বাড়ে। বাংলাদেশে যখন শীতকাল, পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশে তখন গ্রীষ্ম। ওসব দেশে বাতাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। উত্তর গোলার্ধ থেকে ঠান্ডা বাতাস দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। বাংলাদেশের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা। সেখান থেকে বরফশীতল বায়ু এ দেশের ওপর দিয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। আসে সাইবেরীয় ঠান্ডাও।