প্রকৃত অপরাধী শনাক্তে দেশের সব থানার ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিডিএমএস) আসামি বা অভিযুক্তের আঙুল ও হাতের তালুর ছাপ, চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি যুক্ত করার উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সাথে প্রেপ্তারের পর আসামি বা অভিযুক্তের মাগশট ফটোগ্রাফ (মুখচ্ছবি) নিয়ে তা কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের এক রায়ে এ নির্দেশনা এসেছে। আইনের অপপ্রয়োগ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণারয়কে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রায়ে।
২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল ঢাকার খিলগাঁও থানায় নাশকতার মামলায় পুলিশ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের শাহজাদপুর গ্রামের মোদাচ্ছের আনছারী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর মোদাচ্ছের তার নাম-ঠিকানা গোপন করে নিজেকে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভাধীন আজগর আলী মোল্লাবাড়ি মসজিদ রোড এলাকার মোহাম্মদ জহির উদ্দিন নামে পরিচয় দেয়।
এরপর ওই বছরের ৩১ অক্টোবর মোদাচ্ছের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে পালিয়ে যায়। তিনি জহির উদ্দিন নামেই আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন। এদিকে পুলিশ তদন্ত শেষে জহির উদ্দিনসহ অপরাপর আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয়। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রিন্সিপাল মো. জহির উদ্দিনসহ তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর জহির উদ্দিন আইনি প্রক্রিয়ায় কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মূল আসামি মোদাচ্ছের আনছারীর ছবি এবং শারীরিক বর্ণনাসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। এরপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন জহির। আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ১০ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেওয়ার পাশাপাশি জহিরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত করে অন্তবর্তী আদেশ দেন।
প্রকৃত আসামি নির্ণয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেওয়া হয়। আর জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভুত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চান উচ্চ আদালত।
পরে আদালতে জমা দেওয়া পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, জহির উদ্দিনকে খিলগাঁও থানার মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাধারী আসামি হিসেবে চিহ্নিত করার মত পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জহির উদ্দিন প্রকৃতপক্ষে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাধারী আসামি নন। প্রকৃত আসামি মোদাচ্ছের আনছারী ওরফে মোহাদ্দেস। প্রতিবেদন পাওয়ার পর রুল শুনানি করে গত বছর ৯ সেপ্টেম্বর রায় দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম (বর্তমানে। আপিল ভিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ে জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভুত ঘোষণা করা হয়। ৬ পৃষ্ঠার রায়টি গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। রায়টি লিখেছেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। এ মামলায় রিটকারী পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
রায় প্রকাশের পর আইনজীবী শিশির মনির কালের কণ্ঠকে বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতের কোনো স্থগিতাদেশ না থাকায় রায় কার্যুকরে কোনো বাধা থাকছে না। রায়টি কার্যিকর করা হলে ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে বলে আমি মনে করি। পাশাপাশি ভুল ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার বা কারাগারে আটকে রাখার মত ঘটনার অবসান ঘটবে। অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানি থেকে রক্ষা পাবে।
পরীক্ষামূলকভাবে দেশের কিছু থানা ও কারাগারে রায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলেও জানান এ আইনজীবী।