কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সানরাইজ বিজনেস সার্ভিস লিমিটেড (এসবিএসএল) কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ ৮ জন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১২। তাদের মধ্যে কুমারখালী থেকে নিখোঁজ হওয়া ৫ জনও রয়েছেন। গত শুক্রবার রাতে ঢাকা ও কুমারখালীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি পরিচয়ে তাদের তুলে নেওয়া হয়।শনিবার সকাল ১১ টায় কুষ্টিয়া র্যাব -১২, সিপিসি- ১ এর কার্যালের এক প্রেস বিফ্রিয়েং তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান।
গ্রেপ্তাররা হলেন – এসবিএসএল কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপার চরআউশিয়া গ্রামের মো. মনিরুল ইসলামের ছেলে মো. সাজ্জাদ হোসেন (২৯), কোম্পানির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ও ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার পদ্মপুকুর গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে মহসীন আলী (৩১), কোম্পানির ফিন্যান্স ডাইরেক্টর ও কুমারখালীর চাঁদপুর ইউনিয়নের গোবরা গ্রামের মো. তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে মো. ইমরান হোসেন। তারা এর আগে ওএমজি নামের একটি অনলাইন মার্কেটিং কোম্পানিতে চাকুরি করতেন।
অন্যান্যরা হলেন কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম গ্রামের মৃত সালাউদ্দিনের ছেলে ও বাঁশগ্রাম কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আইয়ুব আলী (২৮),পান্টি ইউনিয়নের ওয়াসী গ্রামের মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে ও শহীদ নগর শৈলকুপা মাদ্রাসার কম্পিউটার শিক্ষক মোস্তফা রাশেদ পান্না (৪৭), যদুবয়রা ইউনিয়নেরর বহলবাড়িয়া গ্রামের মো. আলতাফ হোসেনের ছেলে ও লক্ষ্মীপুর মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে মসজিদ ভিত্তিক শিশু শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে জড়িত শিক্ষক মো. হাফিজুল রহমান (২৬), জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামের মো. আব্দুল জলিলের ছেলে মো. হাসান আলী (৩৫) ও মহেন্দ্রপুর গ্রামের মৃত আমজেদ আলীর ছেলে মো. হান্নান (৩০)।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে হাসান আলী, আব্দুল হান্নান, মোস্তফা রাশেদ পান্না, আইয়ুব আলী ও হাফিজুর রহমান গত বুধবার রাত থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাদের নিজ বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন স্বজনরা। গত বৃহস্পতিবার সকালে কুমারখালী থানায় জিডি আকারে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলেন দুই ভুক্তভোগীর স্বজনরা।
প্রেস বিফ্রিংয়ে কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার মোহাম্মদ ইলিয়াস খান বলেন, ‘ জেলায় সানরাইজ বিজনেস সার্ভিস লি. নামের একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি গ্রাহকদেরকে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত করে পালিয়ে গেছে। কোম্পানিটির প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছে প্রায় ৩০০ পরিবার। কুষ্টিয়া ছাড়াও উক্ত কোম্পানির প্রতারণার বিস্তৃতি ছিল ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, রাজশাহী জেলা পর্যন্ত। প্রতারণার জন্য নিজস্ব ওয়েবসাইট ও মোবাইল এপ্লিক্যাশন তৈরি করে গ্রাহকদেরকে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে ১২০০ টাকা দিয়ে কোম্পানির আইডি খুলতে বলা হতো। প্রতি আইডি থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা ও আইডি বাবদ প্রদান করা ১২০০ টাকার সমমূল্যের পণ্য দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হতো। শুরুর দিকে কিছু গ্রাহক টাকা ও পণ্য পাওয়ার কারণে অনেকেই আইডি খুলতে উৎসাহিত হয়েছিল। একসময় গ্রাহকদের লভ্যাংশের টাকা দিতে ব্যর্থ হয়ে আত্মগোপনে চলে যায় প্রতারক চক্র। লগ্নিকৃত টাকা হারিয়ে শত শত গ্রাহক দিশেহারা হয়ে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, প্রতারণার প্রেক্ষিতে একজন ভুক্তভোগী গ্রাহক গত ২৬ আগস্ট কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কুমারখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
র্যাব-১২ এর একটি আভিযানিক দল গত ২৬ রাত সাড়ে ১১ টায় কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে উক্ত এমএলএম কোম্পানির প্রতারক চক্রের ৫ জন সদস্য হাসান আলী, আব্দুল হান্নান, মোস্তফা রাশেদ পান্না, আইয়ুব আলী ও মো. হাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যমতে কোম্পানির চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মহসীন আলী ও ফিন্যান্স ডাইরেক্টর মো. ইমরান হোসেনকে ঢাকার মিরপুর এলাকা হতে গ্রেপ্তার করা হয়।
কোম্পানি কমান্ডার বলেন, আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। কোম্পানির বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর ও কুমারখালী থানায় ২টি মামলা রয়েছে। এছাড়া কোম্পানির চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ২টি চেক জালিয়াতির মামলা, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মহসিন আলীর বিরুদ্ধে ১টি চেক জালিয়াতি ও ৫টি স্ট্যাম্প জালিয়াতির মামলা এবং ফিন্যান্স ডাইরেক্টর ইমরান হোসেন এর বিরুদ্ধে ২টি চেক জালিয়াতির মামলা রয়েছে বলেও জানানো হয় ওই সংবাদ সম্মেলনে।