তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর অত্যন্ত সফল এবং ফলপ্রসূ। তারমধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে ভারতের স্থলভাগ ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিনা শুল্কে পণ্য রপ্তানি করার সুযোগ, যেটির জন্য বহু বছর ধরে বাংলাদেশ চেষ্টা করে এসেছে।
শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) আয়েজিত বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এ সময় চট্টগ্রামের ৩৬ জন সাংবাদিকের হাতে ৩৪ লাখ টাকার অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হয়।
সিইউজের সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ বাদল, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি শহীদুল আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য কলিম সরওয়ার, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ প্রমুখ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ন্যায্যতার ভিত্তিতে। আমাদের সরকারই ভারতের কাছ থেকে সমস্ত কিছু আদায় করেছে। ১৯৭৪ সালে ছিটমহল চুক্তি হয়েছে। সেই ছিটমহল আমাদের অধিকারে চার দশকে কেউ আনতে পারেনি। তারা কোন দেশের নাগরিক সেটা বলতে পারত না। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ছিটমহলগুলো আমাদের অধিকারে এনেছে। ন্যায্যতার ভিত্তিতে যে সম্পর্ক সেটির বড় প্রমাণ হচ্ছে, আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের সঙ্গে মামলা করে সমুদ্রসীমা জয়লাভ করেছি।
প্রকৃতপক্ষে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সেটি আরও নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। সেটির প্রমাণ হচ্ছে ভারতের স্থলভাগ ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য বিনা শুল্কে রপ্তানির সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের হাজার পণ্যের মধ্যে মাদকসহ মাত্র বিশটি পণ্য ছাড়া ভারত আমাদেরকে ট্যারিফ সুবিধা দিয়েছে। যেটি বিএনপি আদায় করতে পারে নাই। খালেদা জিয়া তো ভারতে গিয়ে আমাদের গঙ্গার পানি হিস্যার কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিলেন। সেটিও আদায় করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
সারা দেশে আজকে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট সাংবাদিকদের একটি আশা-ভরসার স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবারকে এককালীন তিন লাখ টাকা দেওয়া হয়। একজন সাংবাদিক অসুস্থ হলে তাকে পঞ্চাশ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে। করোনাকালে ভারত পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপালসহ এই উপমহাদেশের কোনো দেশে সাংবাদিকদের করোনা সহায়তা করা হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে সরকার করোনাকালীন সহায়তা হিসেবে চার হাজার সাংবাদিককে সহায়তা দিয়েছে, এটি এখনো চলমান আছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাংবাদিকদের দাবি ছিল, একটা কল্যাণ তহবিল গঠন করার। প্রথমে একটা কল্যাণ তহবিল গঠন হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী বললেন, আমি কতদিন থাকি ক্ষমতায় জানি না, একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিতে চাই। তারই আগ্রহে সংসদে পাশ করা আইন দ্বারা সংবিধিবদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট। যেখানে প্রতিবছর সরকার অনুদান দেয়। শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকেও অনুদান গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কল্যাণ ট্রাস্টের চেক বিতরণের ক্ষেত্রে আমরা কখনো কে কোন দল বা মতের সেটি দেখি না। আমি দল করি, আমি দলীয় সরকারের মন্ত্রী, কিন্তু যখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করছি তখন সবাইকে দুই চোখে সমভাবে দেখার চেষ্টা করি, রাষ্ট্রের সাহায্য যেন সবাই পায়। যারা প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে কালকেই সরকার নামিয়ে দেয়, আমাদের বিরুদ্ধে গলা ফাটায়, তাদেরকেও আমরা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে সহায়তা করেছি।
তিনি বলেন, কিন্তু মাঝে মধ্যে দেখি বিশ্ব পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা হয়। কিছু কিছু সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশ্ব পরিস্থিতিকে আড়াল করে বাংলাদেশের পরিস্থিতিটাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায়, এটি নতুন কিছু নয়। পদ্মা সেতু যখন আমরা নির্মাণ শুরু করি তখনো বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর যেভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিল, কিন্তু বিশ্বব্যাংক কানাডার আদালতে হেরে যাবার পর তারা ক্ষমা চায়নি।
ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশের প্রত্যেকটা মিডিয়া হাউজ যেন সাংবাদিকদের জন্য গ্রুপ বীমার ব্যবস্থা করে সে অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এটি কিন্তু আমাদের ওয়েজবোর্ডের মধ্যেও বলা আছে। সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো প্রতিটা মিডিয়া হাউজে তাগাদা দিবেন ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী যেন সাংবাদিকদের জন্য গ্রুপ বীমার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এটি করলে একজন সাংবাদিক অসুস্থ হলে এবং মৃত্যুবরণ করলে বীমা কোম্পানি থেকে টাকা পাবে। এতে যে খুব ব্যয় হয় তা কিন্তু নয়, এটি ইচ্ছা এবং চর্চার ব্যাপার।