পাবনার সাঁথিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার দেবনাথের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার,নানা অনিয়ম,দুর্নীতি,অর্থ আত্মসাত, ছাত্রীদের অনৈতিক প্রস্তাবসহ নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে আবারও ফুঁসে উঠেছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী,অভিভাবকগণ। প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ ম্যাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবারও লিখিত অভিযোগ দেন তারা। প্রধান শিক্ষকের অপসারণের একদফা দাবিতে গত দুইদিন ধরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে। তারা গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ছাত্রীকে কু প্রস্তাব, রশিদবিহীন অতিরিক্ত অর্থ আদায়, প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের হয়রানী ও নির্যাতন করা, ছাত্র/ছাত্রীদের অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ সাতটি অনিয়ম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষকরা জানান,বিগত শাসন আমলে পাবনা ১ আসনের সংসদ সদস্য, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু জোরপূর্বক ও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অযোগ্য,নীতিভ্রষ্ট বিজয় কুমার দেবনাথকে নিয়োগ প্রদান করেন। যোগদানের পর থেকেই আর্থিক অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার,ছাত্রীকে কু-প্রস্তাব দেয়া, বিদ্যালয়ের পরিচালনায় অদক্ষতা, শিক্ষক,শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের সাথে দুর্ব্যবহার করা ও শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ ওঠে তার বিরদ্ধে। এছাড়া কোচিং বাণিজ্যে ২০১২ লংঘন করাসহ প্রতিবাদী ছাত্র, শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে হয়রানী ও নির্যাতন করাসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত তিনি। ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা আরও জানান, আমরা দীর্ঘদিন কোন প্রতিবাদ করতে পারিনি। প্রতিবাদ করতে গেলেই আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানী ও নির্যাতন করা হতো। আজ সময় এসেছে প্রতিবাদ করার।
তারা বলেন, অবিলম্বে দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষককে অপসারণ করে বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আনার দাবি জানাই বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে। দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষক,শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার দেবনাথের নিকট জানতে তার কার্যালয়ে গেলে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক ও ছাত্র/ছাত্রীদের অভিযোগ পেয়েছি। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আমিও শুনেছি। আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। নির্দেশনা এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য,গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থী,শিক্ষক,অভিভাবকরা ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক বিক্ষোভ,মিছিল,প্রতিবাদসভা করে আসছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৮ সালে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিরাজুল ইসলাম ওই প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে পত্র দেন। সাঁথিয়ায় দায়িত্বপালনকারী ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম,এসএম জামাল আহমেদ ওই দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অধিদপ্তরে একাধিকবার পত্র দেন। এছাড়াও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার,জেলা শিক্ষা অফিসার,জেলা প্রশাসকও তার শাস্তি দাবি করে অধিদপ্তর,শিক্ষাবোর্ডে পত্র দেন। অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার দেবনাথ টাকাপয়সা খরচ করে সব ফাইল গায়েব করেছেন। আরও অভিযোগ রয়েছে, সদ্য পদচ্যুত ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বারবার তাকে প্রোটেকশন দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে হস্তক্ষেপ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণে বাধাগ্রস্ত করেছেন।