বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনুস আজ (১১ জুন, ২০২৫) চ্যাথাম হাউসে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন।
তবে তিনি ধারাবাহিক সকল প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে অনেকটাই পাশকাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। বাস্তবে ইউনূস ধারাবাহিকভাবে সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গেছেন এবং আলোচনাকে ভিন্ন দিকে নিয়ে গেছেন। রাজনৈতিক দমন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, দুর্নীতি, নির্বাচনী বিষয় এবং সংস্কার সম্পর্কিত বিষয়ে বাস্তব সম্মত উত্তর মেলেনি।
টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা, লেবার পার্টির প্রতিবাদ
চ্যাথাম হাউসের পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী ব্রনওয়েন ম্যাডক্সের সভাপতিত্বে অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট সাংবাদিক মিস ম্যাডক্স আওয়ামী লীগের স্থগিতাদেশ, শেখ হাসিনার অপসারণের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এবং অমীমাংসিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংকট সহ বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয় উত্থাপন করে আলোচনার সূচনা করেন।
আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ড. ইউনুস বলেন দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়নি বরং “সাময়িকভাবে স্থগিত” করা হয়েছে। শেখ হাসিনা এবং অন্যদের বিচার ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারের উপর স্থগিত রাখার বিষয়ে ম্যাডক্সের প্রশ্নের জবাবে, ইউনূস দৃঢ়ভাবে জোর দিয়ে বলেন, “প্রথমে সংস্কার, তারপর বিচার, এর পরে নির্বাচন।”ম্যাডক্স তার কাছে পাল্টা প্রশ্ন করেন যে অনেক পর্যবেক্ষক বিশ্বাস করেন সংস্কারগুলিকে জনপ্রিয় ম্যান্ডেটের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া উচিত। তিনি সতর্ক করে বলেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এড়িয়ে গেলে তার প্রশাসন আরেকটি কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় পরিণত হতে পারে।
ইউনূস এটিকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “এটি একটি মতামত, রায় নয়।” তিনি ভোটারদের প্রতি গভীর অবিশ্বাস প্রকাশ করে মন্তব্য করেন যে ভোটাররা অর্থের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে: “আমাকে কিছু টাকা দাও – আমি তোমাকে ভোট দেব।”
তথ্য গোপনের অভিযোগে সহযোগীকে ফেরত পাঠাল ভারত, খেলতে এসে বিপাকে বাংলাদেশের ৮০ বছরের দাবাড়ু
এর পর অধ্যাপক ইউনূস চ্যাথাম হাউসে রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সে এক বিশেষ অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন। বক্তব্য শেষে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চ্যাথাম হাউজ কর্তৃক ড. ইউনূসের সম্মানে মালকম রুমে এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
সম্বর্ধনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রফেসর ইউনুস বলেন দেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোন সুন্দর নির্বাচন হতে যাচ্ছে। যা বাংলাদেশে অতীতে দেখা যায়নি। তিনি বলেন, ১৭ বছর পর আমরা সত্যিকারের একটি নির্বাচন করতে যাচ্ছি; যা আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন হবে। নতুন বাংলাদেশ তৈরির জন্য সংস্কার কমিশন তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কমিশন তৈরি করেছি। আমরা তাদের সুপারিশের দিকে তাকিয়ে আছি। আমাদের কাজ হলো সব দলের ঐকমত্য তৈরি করা। তিনি বলেন, আমরা জুলাই সনদ আসার জন্য অপেক্ষা করছি। এই সনদটি জাতির সামনে জুলাই মাসের সনদ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে পাসপোর্ট প্রাপ্তি সুবিধাসহ তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আগে পাসপোর্টসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে মাধ্যম প্রয়োজন হতো। যার মাধ্যমে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হতো। এখন সরকারি বিভিন্ন সেবা অনলাইনের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে, যাতে সবাই সহজেই সেবা নিতে পারেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকারের কোনো দায়িত্বে তার থাকার কোনো ইচ্ছে নেই।