প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের প্রধান নদী সুরমা-কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদনদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বাড়লেও বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে শুধু ছাতকে। সেখানে সুরমা বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড শনিবার সকাল ৯টায় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৭০ মি.মিটার, সিলেটের কানাইঘাটে ৮২ মি.মিটার, সিলেটে ৭১ মি.মিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। দিনভর ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত। বৃষ্টির কারণে সিলেট বিভাগে ঈদের আনন্দে ভাটা যাচ্ছে। ঈদের দিন থেকেই বৃষ্টি। কমবেশি সবাই গৃহবন্দি।
এদিকে সীমান্ত উপজেলা দোয়ারাবাজার উপজেলায় পুকুরে যারা মাছ চাষ করেছেন তারা ভীষণ দুশ্চিন্তায়। নিজ খামারের মাছ ও পোনা মাছ যাতে ভেসে না যায় সে জন্য পুকুর পারে জাল টানানো হচ্ছে। গত বছর ভয়াবহ বন্যায় কোটি টাকার মাছ ভেসে গেলে খামারিরা লোকসানে পড়েন।
অন্যদিকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় কানাইঘাটে সুরমার পানি কমমে বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে সিলেট শহরের নিকট সুরমার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্সীমার ৮৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সুনামগঞ্জ শহরের নিকট সুরমা বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, মেঘালয়ে ২২০ মি.মিটার বৃষ্টিপাত হয়। এতে সুনামগঞ্জ জেলায় মাঝারি আকারে বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত তিন দিনের অব্যাহত বৃষ্টিতে সিলেটে সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, পিয়াইন, ধলাই, জাদুকাটাসহ ছোট-বড় সব নদীর পানি বেড়েছে। এছাড়া কুশিয়ারা নদীর তিন পয়েন্ট শেওলা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুরে পানি বেড়েছে।
চার দিনের টানা বর্ষণ ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা, চেলা, মরা চেলা, চিলাই, চলতি, কালিউরি, খাসিয়ামারা ও ধুমখালীসহ উপজেলার সকল নদী-নালা, হাওড়, খাল-বিলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর উপচে পড়া স্রোতে উপজেলার সদরের মাইজখলা. বড়বন. তেগাঙ্গা. রইসপুর. রাখালকান্দি সুরমা ইউনিয়নে ভোজনা. শরীফপুর. নুরপুর. বেডিরগ্রাও গ্রামের রাস্তা ঘাট প্লাবিত হচ্ছে। নিচু এলাকা ও হাওড়পাড়ের লোকজন শঙ্কিত।
পাহাড়ি ঢল ও প্রবল বৃষ্টিতে বাড়তে শুরু করেছে চিলাই, মৌলা, খাসিয়ামারা ও সুরমা নদীসহ হাওরের পানি। বন্যার আশঙ্কায় মৎসচাষিরা জাল দিয়ে চেষ্টা করছে পুকুরে মাছ আটকানোর। শনিবার (১ জুলাই) সরেজমিনে উপজেলার লামাসানিয়া, টেবালই, শরিফপুর, ভুজনা, বীরসিং, পরমেশরীফপুর, টেংরাটিলা, আলীপুর, বাঘমারা, উরুরগাও, চৌধুরীপাড়া, চিলাইপাড়, গ্রামের মত্স্য চাষিরা পুকুরে মাছ আটকানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়।
স্থানীয় চাষিরা জানান, গত বছরের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতে এ বছর আবারও বন্যার আশঙ্কা, যাতে করে মাছ আটকাতে পারি পুকুর পাড়ে জাল দিয়ে চেষ্টা করছি। মৎস্য অফিসের তথ্য মতে গত বছর চাষিদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
লামাসানিয়া গ্রামের চাষি আনোয়ার জনান, গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় তার দুটি পুকুরের ৪ লাখ টাকা ক্ষতি হয়। এবার চেষ্টা করছেন মাছ আটকানোর। উপজেলা মৎস্য অফিসার তুষার কান্তি বর্মন বলেন, গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবারও ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। তাই পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুকুর পাড়ে জাল দিয়ে মাছ আটকানোর চেষ্টা করছেন তারা।