সার্জিল খানঃ-
দীর্ঘ প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের পরেই একজন খেলোয়াড় প্রস্তুত হয়। এর পরে নিজের দক্ষতার প্রমান দিয়েই প্রতি খেলোয়াড়কে প্রতিযোগীতায় নির্বাচিত হতে হয়। যেহেতু রাজনীতির ক্ষেত্রেও জয় পরাজয় আছে সেহেতু রাজনীতিও একটা খেলা!
ফুটবল প্রশীক্ষণ নিয়ে ফুটবলই খেলতে হয়, বাস্কেট বলের প্রশিক্ষণ নিয়ে বাস্কেটবলের খেলোয়াড় হতে হয়। মোট কথা যে খেলায় দক্ষতা অর্জন করতে চাই সে খেলায় প্রশিক্ষিত হতে হয়। এক খেলার প্রশিক্ষিণ নিয়ে অন্য খেলার খেলোয়াড় হওয়াতো যায় না, আর প্রশিক্ষণ না নিয়ে কোন খেলারই খেলোয়াড় হওয়া সম্ভব না সে কথা আমরা জানি।
সব থেকে বড় খেলা রাজনীতি(!) তাই এই খালার প্রশিক্ষণও সব থেকে দীর্ঘমেয়াদী। সব খেলায় প্রতিপক্ষের থেকে ভালো খেলতে পারলেই হয় কিন্তু এখানে যেমন নিজের বিজয়ের জন্য প্রশিক্ষিত হতে হয় তেমনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেও জানতে হয়।
কিন্তু আমাদের উপমহাদেশে রাজনীতি শিখতে হয় না শুধু প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে জানলেই চলে। আর সেটা শিখতে হয় না বলেই এখানে শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়র, ব্যাবসায়ী, মাঠের খেলোয়ার, বিনোদন কর্মী, সরকারী চাকরীজীবি, পরিবহন শ্রমিক মূল কথা সব রকম পেশার মানুষরাই কোন রকম প্রশিক্ষণ না নিয়েই রাজনীতির মাঠে নেমে যায়। তাইতো এখানে রাজনৈতিক কালচার ডেভলপ করেনি।
এই এলাকায় মাঠের রাজনীতিকদের সাইড লাইনে বসিয়ে অন্য পেশার জনপ্রিয়দের নেতা বানিয়ে দিয়ে সংসদে পাঠানো হয়, এই সব অরাজনৈতিক নেতারা রাজনীতি ধ্বংস করতে করতে এমন পর্যায় নিয়ে গিয়েছে যে বাংলাদেশে এখন অধিকাংশ সংসদ সদস্য সংসদ রিতি-নিতি জানেন না। খেলের মাঠ থেকে সংসদে গিয়ে জয় উপ-মন্ত্রী হয়ে ৩০০ বিধিতে ফ্লোর নিয়ে তার এলাকার উন্নয়নের দাবি তুলে ধরেছিলেন! পরে স্পিকার তাকে ৩০০ বিধি কি তা বুঝিয়ে মাইক প্রত্যাহার করেছিলেন। এই হলো আমাদের এমপি মন্ত্রীদের কোয়ালিটি।
উপমহাদেশে আর এক সমস্যা রাজনৈতিক রাজতন্ত্র, পরিবারের কেউ রাজনীতিতে সাকসেস হলেই হলো, তার পরিবার থেকে একের পর এক নেতা বের হবে কিন্তু তাদের আর রাজনীতি সেখার দরকার হবে না। দেশের সবধরনের রাজৈতিক অধিকার তাদের জন্য সংরক্ষিত, সব অপকর্মের নিয়ন্ত্রক তারা। বড় ধরনের বিপর্যয় ছাড়া তাদের আর রাজনীতির মাঠ থেকে সরানো যায় না।
নাটক-সিনেমা, খেলা, ব্যবসা বা আদালতে সাকসেস হলেই রাজনীতিতে কৃতকার্য হতে পারবে তেমন নিশ্চয়তা কোথায়।
জনপ্রিয় ও কৃতকার্য খেলোয়াড়/অভিনেতারা যদি ভালো রাজনীতিক হতে পারতো তবেতো প্লে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট, ম্যারাদোনা আর্জনটিনা প্রেসিডেন্ট, বেকহাম ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী, জিদান ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হতো। অভিনেতা কখনো নেতা হতে পারে না, তা পারলে উত্তম কুমার ও অমিতাভ বচ্চন ভারতে প্রধানমন্ত্রী হতেন। আমাদের খেলোয়াড়-অভিনেতা MP-রা তাদের থেকেও বড়?
যিনি যে কাজে দক্ষ তাকে সেই কাজটাই করা উচিত, জোর করে অন্য কিছু বানাতে চাওয়া উচিৎ না, রাজনীতিকতো নাই।
সাকিব ও ফেরদৌসের নেতা হওয়ার অভিনয়টা খুব বেশি চোখে ধাক্কা দিচ্ছে। আমাদের নেতারা এমনিতেই উন্নয়নের অভিনয় করছে, জনসেবার অভিনয় করছে, জনগনকে ভালোবাসার অভিনয়য়ে আমাদের ডুবিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে আবার এই অভিনেতাদের অভিনয়টা ভালো লাগছে না। এই অভিনয়ে ওরা লজ্জা পায় না কিন্তু আমরা ওদের অভিনয় দেখে লজ্জিত হচ্ছি।