আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন হওয়ার ঘোষণা থাকলেও সিলেটে এ বিষয়ে তেমন উত্তাপ নেই। মেয়র পদে এখনো মনোয়নপত্র ক্রয় করেননি কেউ। তবে ছয় জন কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন বিক্রি হয়েছে গতকাল রবিবার। মেয়র পদে কারা প্রার্থী হচ্ছেন তা এখনো পরিষ্কার নয়। বিশেষ করে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধূরীকে নিয়েই যত প্রশ্ন। তিনি তার নিজ দল বিএনপিকে সামলাবেন, না নগরবাসীর প্রত্যাশার মূল্য দেবেন এটাই বড় প্রশ্ন।
বিগত দুই টার্মের মেয়র আরিফ সিদ্ধান্ত জানাতে সময় নিয়েছেন আরো তিন সপ্তাহ। অর্থাৎ আগামী ১৯ বা ২০ মে ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রি মাঠের জনসভা করে আরিফুল হক প্রার্থীর বিষয়টি খোলাসা করবেন। অবস্থাদৃষ্টে সিসিক নির্বাচনের হাওয়া অনেকটা আটকে আছে আরিফুল হকের ঘোষণার মধ্যে।
এদিকে এত দিন কাউন্সিলর পদে নির্বাচন দলীয় নয়—এমন কথাই ছিল। আর তাই এই পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য তৎপর ছিলেন বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী। কিন্তু এখন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছেন বিএনপির বর্তমান কাউন্সিলর এবং এ পদে নির্বাচন করতে আগ্রহীরা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে ব্যাপক জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। আরিফুল নির্বাচনে আসছেন কি না এখনো পরিষ্কার না হলেও মূলত তাকে ‘টার্গেট’ করেই তিনি মাঠে কাজ করছেন। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা চান, ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চান না। কিন্তু যেহেতু বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই আরিফুল মুখ খুলছেন না। অন্যদিকে এই নির্বাচনে বাম দল, ইসলামিক দল ও জামায়াতে ইসলামীর আগ্রহ নেই। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকদেরও নির্বাচন নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। তবে ইসলামী আন্দোলনের এক নেতা বলেছেন, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আছেন। জাতীয় পার্টির তিন জনের মধ্যে নুরুল ইসলাম বাবুল প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে দলের চাপ সত্ত্বেও বিএনপির অনেকেই শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিএনপির সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা বলছেন, এই পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় না। তাই সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
২০১৮ সালে সর্বশেষ নির্বাচনের সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড ছিল ২৭টি। ঐ নির্বাচনে ১ নম্বর ওয়ার্ডে সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে রেজাউল হাসান লোদী কয়েস, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে আব্দুর রকিম তুহিত জয়ী হন। এছাড়া সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন সদ্য বিদায়ী সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক রোকসানা বেগম। এই সাত জন ছাড়াও নগরের সাধারণ ও সংরক্ষিত ৫৬ ওয়ার্ডে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী কাউন্সিলর প্রার্থী হতে তত্পরতা চালাচ্ছেন। ইতিমধ্যে নিজেদের ওয়ার্ডে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে প্রার্থিতা জানান দিয়েছেন তারা।
প্রার্থিতার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান লোদী কয়েস এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। তারা দুই জনই সদ্য বিদায়ী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ছিলেন। কাউন্সিলর রেজাউল হাসান বলেন, আমি ২০ বছর ধরে এই এলাকার কাউন্সিলর। এলাকার সব দল-মতের মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তারা এবারও আমাকে প্রার্থী হিসেবে চায়। আবার আমি আমার দলকেও ভালোবাসি। দলের সিদ্ধান্ত নির্বাচনে না যাওয়ার। ফলে কী করব বুঝতে পারছি না। উভয় সংকটে আছি। এবারও প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতা ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে এ বি এম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল। ২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকসানা বেগম শাহনাজ বলেন, এলাকার মানুষজন আমাকে প্রার্থী হওয়ার চাপ দিচ্ছেন। তাদের মতামতকে উপেক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
বিএনপি নেতাদের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই যাবে না। আমরা এখন সরকার পতনের আন্দোলনে আছি। আমাদের প্রত্যাশা আরিফুল হকও সরকারের ফাঁদে পা দেবেন না, তবে কাউন্সিলর পদে বিএনপির দায়িত্বশীল কেউ প্রার্থী হবেন না বলে আমার বিশ্বাস।’