নর্দান ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের ছাত্র প্রমিজ নাগের আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন প্রেমিকা সুরাইয়া ইসলাম মিম। গত শনিবার খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আল আমিন আসামি মিমের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সোনাডাঙ্গা মডেল থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আতিক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গত শুক্রবার সকালে র্যাব নড়াইল জেলার মাসুমদিয়া এলাকা থেকে মিমকে আটক করে। রাতে তাকে থানায় হস্তান্তর করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তা বলা সম্ভব হচ্ছে না। রাতে জবানবন্দি দিতে রাজি হলে সকাল ১০টার দিকে আদালতে উপস্থিত করা হয়। মিম ৩ ঘণ্টা ধরে ঘটনার বিবরণ দিয়ে আদালতকে সকল ঘটনা অবগত করে। আত্মহত্যা প্ররোচনার জন্য মিম দায়ী বলে এ পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই হরসিৎ মণ্ডল বলেন, ২০২০ সালে নর্দান ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন প্রমিজ। এক সেমিস্টারের বড় মিমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে প্রেম, পরে সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হয়। মিম প্রায়ই প্রমিজের মেসে এসে সময় কাটাতো। দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করার পর সেখান থেকে বের হয়ে নিজের ভাড়া বাড়িতে ফিরে যেতো। তদন্তে প্রকাশ পায় যে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। যেদিন প্রমিজ আত্মহত্যা করে সেদিনও দুপুরে মিমের অবস্থান ওই বাড়িতে ছিল বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন। মিম দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। অপরদিকে আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলায় প্রমিজের চাচাতো ভাই এজাহারে উল্লেখ করেছেন, মিম প্রায়ই প্রমিজকে বিয়ের জন্য চাপ দিতো। কিন্তু সে মুসলিম ধর্মাবলম্বী হওয়ায় প্রমিজ তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। মাঝে মধ্যে মৃতের বাবার কাছে টাকার জন্য ফোন দিতো মিম। ২০শে জুন বিকাল সোয়া ৫টার দিকে বাবার নিকট টাকা চাওয়ার বিষয়টি জানতে মিমকে প্রমিজের মেসে ডেকে নেয়া হয়। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ল্যাপটপ দিয়ে প্রমিজের মাথায় আঘাত করে মিম। তাকে বিভিন্ন ধরনের গালিগালাজ করে ওইদিন মেস থেকে চলে যান তিনি। এরকমের আচরণে মানসিকভাবে হতাশ হয়ে পড়েন প্রমিজ। ২২শে জুন আবারো প্রমিজের বাসায় আসে মিম। দরজা বন্ধ দেখে পাশের রুমে অবস্থানরত সোহান ও বিপ্লবকে ডেকে রুমের দরজা ভাঙতে বলে। এ সময় মিমের কথা মতো ওই দু’জন প্রমিজকে ডাকতে থাকে, কিন্তু সাড়া না পেয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে দেখে প্রমিজ ফ্যানের হুকের সঙ্গে ঝুলে রয়েছে। দরজা ভেঙে বের করে চিকিৎসার জন্য তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রমিজের আত্মহত্যার পর মিম ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।