টিকটকে আসক্ত ছিলেন এরশাদ শিকদারের মেয়ে জান্নাতুল নওরিন এশা (২২)। তার লাইফ স্টাইল ছিল অন্যরকম। প্লাবন ঘোষ নামের এক যুবকের সঙ্গে ছিলো প্রেমের সম্পর্ক। পরিবারের অভিযোগ, ওই প্রেমিকের সঙ্গে অমিল হওয়ার কারণেই তাকে ভিডিও কলে যুক্ত রেখে আত্মহত্যা করেছেন এশা।
গত ৩ মার্চ রাজধানীতে গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ারে নিজ বাসায় জান্নাতুল নওরিন এশা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন জানায় তার পরিবার। পরের দিন শুক্রবার (৪ মার্চ) সুবাস্তু টাওয়ারের নবম তলা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৫ মার্চ এশার মা এরশাদ শিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা নাহার, প্লাবন ঘোষকে আসামি করে গুলশান থানায় মামলা করেন।
গত ৩০ অক্টোবর গুলশান থানার সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) ওহিদুল ইসলাম প্লাবন ঘোষের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে দোষীপত্র দাখিল করেন। উল্লেখ্য, মামলার এজাহারে প্লাবনের বয়স উল্লেখ করা হয় ২৪ বছর। তবে পুলিশ প্লাবনের বয়স ১৭ বছর উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে দোষীপত্র আদালতে জমা দেন।
এদিকে মামলাটি পরবর্তী বিচারের জন্য ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এ পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে।
চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা ওহিদুল ইসলাম বলেন, মামলার ঘটনার বেশকিছু দিন আগে ভিকটিম এশার সাথে প্লাবন ঘোষের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে প্লাবন বিয়ে করবে জানিয়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় এবং প্লাবনের সাথে এশার প্রেমের সম্পর্ক হয়। এরপর থেকে প্লাবন ভিকটিমকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেত। এমনকি তাদের বাড়িতেও ভিকটিমকে নিয়ে যেত। প্লাবনও ভিকটিমের বাড়িতে অবাধে আসা যাওয়া করতো। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। সময়ের ব্যবধানে কিছুদিন পর তাদের ঘনিষ্ঠতায় কিছুটা ভাটা পড়ে। অর্থৎ প্লাবন নিজেকে আড়াল করাসহ ভিকটিমের কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মাঝে মধ্যে ভিকটিমের বাড়িতে আসা যাওয়াসহ ভিকটিমকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে নিয়ে যেতো প্লাবন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্লাবন এশার বাসায় আসে। কিছুক্ষণ বাসায় অবস্থান করার পর এশা ও তার বান্ধবীকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যায়। বাইরে ঘুরাঘুরির একপর্যায়ে প্লাবনের মোবাইলে বারবার কল আসাকে কেন্দ্র করে ভিকটিমের সাথে প্লাবনের কথা কাটাকাটি হয়। এ বিষয়ে তাদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় রাত ১১টার দিকে সুমি এশা ও প্লাবনকে তাদের বাসায় নিয়ে যায়। সে দুজনকে বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সুমি অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
তিনি বলেন, এক পর্যায়ে প্লাবন এশাকে বিয়ে করতে অপরাগতা প্রকাশ করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। ভোর পৌনে ৫ টার দিকে এশা বাসায় ফিরে তার বেডরুমে ঢুকে রুমের দরজা আটকে দেয়। এশার মা সানজিদা নাহার তখন বেডরুমে ঘুমাচ্ছিলেন। ওই সময় ভিকটিম প্লাবনকে ভিডিও কলে রেখে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। ভোর ৫টা ২৪মিনিটের দিকে প্লাবনের চাচা সুমিকে ফোন করে জানায়, ‘তুমি দ্রুত এশার বাসায় যাও। এশা প্লাবনের সাথে পাগলামি করছে। আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছে।’ ৫ টা ২৯ মিনিটের দিকে প্লাবন ভিকটিমের মাকে ফোন করে বলে যে আপনার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করছে। সানজিদা নাহার পরে দ্রুত এশার রুমের দরজা খোলার চেষ্টা করে। এরই মধ্যে সুমিও এশার বাসায় চলে আসে। ভিকটিমের রুম ভিতর দিয়ে লক করা থাকায় বাসার সিকিউরিটিগার্ড মেজবাহ ও আলামিন এবং সুমির সহায়তায় রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন, এশা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। পরে সিকিউরিটি গার্ডদের সহায়তায় ভিকটিমকে নিচে নামিয়ে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক এশাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মামলার বাদী সানজিদা নাহার বলেন, একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছি। মায়ের চোখের সামনে যদি সন্তান চলে যায় এরচেয়ে বড় কষ্ট আর কি থাকে। শুনেছি পুলিশ মামলার চার্জশিট দিয়েছে। আইন মাফিক আসামির যে সাজা আছে, সেটা যেন হয়।
সানজিদা নাহার এখন খুলনাতে বাবার বাড়িতে থাকেন। সন্তান হারানোর কষ্ট কমাতে ভাই-বোনের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, সন্তান মারা গেলে তার কষ্ট কি ভোলা যায়। ভাই-বোনের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে থাকি। ওদের পড়াশোনা করানোসহ বিভিন্ন কাজ করে সময় যাচ্ছে।
এদিকে, মামলার পর উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিন পান প্লাবন ঘোষ পরবর্তীতে গত ১৯ এপ্রিল নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত জামিন পেয়েছেন তিনি।