ফুটবল ঐতিহ্য, ইতিহাস, ফিফা র্যাংকিং যাই বলুক, বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বড় দল, ছোট দল বলে কিছু থাকে না। কাতার বিশ্বকাপে তা একেবারেই নেই। একের পর এক কঠিন ধাপ পেরিয়ে যোগ্যতার দল হিসেবেই সেমিফাইনালে পা রেখেছে ৪ দল। সুতরাং আজ রাত ১টায় আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়ার মধ্যকার প্রথম সেমিফাইনালে লড়াইটা হবে সমানে সমান।
এই আসরে দুই দলের পারফরম্যান্সের সঙ্গে অতীত পরিসংখ্যানও সমতার জয়গানই গাইছে। গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে হেরে চাপে পড়ে যাওয়া আর্জেন্টিনা অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। মেসি জাদুতে পরের দুই ম্যাচই জিতে সি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়েই পা রাখে দ্বিতীয় রাউন্ডে। শেষ ষোলোতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জমাট লড়াই করে জয়, কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২-২ সমতার পর মেসিরা সেমিফাইনালে উঠেছেন টাইব্রেকার নাটকে জিতে।
মুদ্রার উলটো পিঠে ক্রোয়েশিয়া এখনো পর্যন্ত কোনো ম্যাচে হারেনি। গ্রুপপর্বে এক জয়, দুই ড্রতে তারা শেষ ষোলোতে উঠে এফ গ্রুপের রানার্সআপ হিসেবে। পরের দুটি ধাপই তারা পেরিয়েছে মাঠের কঠিন লড়াইয়ের পর টাইব্রেকারে জিতে। মানে দুই দলই টাইব্রেকারে কোয়ার্টার ফাইনালের বেড়া পেরিয়ে আজকের সেমিফাইনালে। এই পথে দুই দলই নিজেদের স্নায়ুর পরীক্ষা এবং বজ্র-কঠোর মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। সুতরাং কাকে ফেভারিট আর কাকে আন্ডারডগ তকমা দেবেন?
পরিসংখ্যানের পাতায়ও দুই দলের সমতার গান। দুই দল এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবলে মুখোমুখি হয়েছে পাঁচ বার। তার দুটিতে জিতেছে আর্জেন্টিনা, দুটিতে ক্রোয়েশিয়া। অন্য ম্যাচটি ড্র। সেই ড্রটা ছিল দুই দলের প্রথম সাক্ষাত ১৯৯৪ সালে। আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়ার মধ্যে সমতা বিশ্বকাপ লড়াইয়েও। বিশ্বকাপে এর আগে দুবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। এক বার আর্জেন্টিনা জিতেছে, এক বার ক্রোয়েশিয়া। আজ যে কোনো এক দলের এগিয়ে যাওয়ার পালা।
তবে বিশ্বকাপে দুই দলের ১-১ সমতার মধ্যেও একটা দিক থেকে এগিয়ে ক্রোয়েশিয়া। কারণ, তাদের জয়টা ২০১৮ বিশ্বকাপে। রাশিয়া আসরে গ্রুপপর্বের সেই ম্যাচে মেসির আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল লুকা মডরিচের ক্রোয়েশিয়া। বিপরীতে আর্জেন্টিনার জয়টা ১৯৯৮ বিশ্বকাপে। ১৯৯২ সালে স্বাধীনতা লাভ করা ক্রোয়েশিয়ার সেটাই ছিল প্রথম বিশ্বকাপ। ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ১৯৯৮ আসরের গ্রুপপর্বে যখন ক্রোয়েশিয়াকে ১-০ গোলে হারায় আর্জেন্টিনা, তখন মেসিসহ এই আর্জেন্টিনা দলের কেউ নিজেদের ক্যারিয়ারই শুরু করেননি!
সেই হিসেবে আজ মেসিদের জন্য প্রতিশোধ মিশন। রাশিয়া আসরের হারের ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার সুযোগ। মেসিরা পারবেন ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে শিরোপা স্বপ্নের শেষ সিঁড়িতে পা রাখতে? নাকি মেসিদের আরেকবার কাঁদিয়ে মডরিচদের ক্রোয়েশিয়াই উঠে যাবে টানা দ্বিতীয় বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে?