জুয়েল সাদত
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা ( ফোবানা) একটি চম্যকার সংগঠন। সহজ ভাষায় এটা হল আমেরিকার নানা শহরের সংগঠনগুলোর ছাতা। আজ থেকে ৩৭ বছর আগে যে কজন স্বপ্নচারী মানুষ এটার চিন্তা করেছিলেন তারা মননে মেধায় ছিলেন অসাধারন। তখন তারা ফোবানা তৈরী করলেও সেটা নিউইয়র্ক ভিত্তিক ছিল। তখনও আমেরিকার নানা ষ্টেটে বা নানা ছোট বড় শহরে প্রবাসীরা তেমন ছিলেন না। সেই সময়টা সাড়ে তিন দশক আগের কথা। আজ আমেরিকার ৫০ টি স্টেটের ৩২ টি স্টেটে ও ছোট বড় পৌনে দুইশত সিটিতে বাংলাদেশীরা থাকেন। বাংলাদেশীদের সংখ্যা আমেরিকায় ১০ লাখ বা কম বেশী হবে। প্রবাসীরা এখন নানা ছোট বড় শহরে শুধু থাকেনই না, তারা নানা সংগঠন করে নিজেরা দেশীয় কৃষ্টি কালচারকে ধারণ করে বাংলাদেশটাকে তুলে ধরেছেন বিদেশীদের কাছে ও নতুন প্রজন্মের কাছে। আজ আটলান্টা, মিশিগান, মিয়ামী, ওয়াশিং
অনেক দিক দিয়ে ভাল করছেন বর্তমান এক দশকের নেতৃত্ব। ফোবানায় নতুন প্রজন্ম আজ জড়িত, ফোবানা স্কলারশীপ বেশ জনপ্রিয়। মেধাবীদের স্কলারশীপ দেয়া হচ্ছে বিশেষ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর সাথে যৌথ ভাবে ফোবানা কাজ করছে ।
ফোবানায় ১০/ ১৫ টি সেমিনার হয়, যা থেকে উপকৃত হবার সুযোগ ঘটে। ক্যারীয়ারের দিক নির্দেশনা পায় নতুন প্রজন্ম।
ফোবানা গত এক দশক থেকে কোন কালচারাল অনুষ্টানে সীমাবদ্ধতায় নয়। ফোবানা করোনা-কালীন সময়ে উত্তর আমেরিকায় নানা মানবিক কাজে জড়িত ছিল। করোনা কালে ফোবানা বাংলাদেশেও মানবিক কাজ করেছে।
ফোবানায় অনেক নতুন কিছু সংযোজন ঘটানো হয়েছে। এর অন্যতম সংযোজন ইলেকট্রনিক্স ভোটিং। ফোবানার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ১ বছরের নেতৃত্ব। একক ভাবে দীর্ঘদিন এক পদে থাকার সুযোগ নাই, নেতৃত্ব তৈরী হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। ফোবানার নির্বাহী কমিটিতে যারা থাকেন বা যারা নির্বাহী কমিটিতে যাবার জন্য নির্বাচন করেন তারা সবাই উত্তর আমেরিকার অসাধারন ভাল সংগঠক। মনন মেধায় তারা অনুকরণীয়।
ফোবানার মেম্বার সংগঠন মাত্র ৫৮ টি। এটি ১০০/১৫০ হবার সুযোগ ছিল। সারা আমেরিকায় আঞ্চলিক সংগঠন ছাড়া অন্যান্য সংগঠনের সংখ্যা ৫০০/ ৬০০ বা ৭০০ হবে, সদস্য সংগঠন বাড়াতে পারলে ফোবানার পরিধি ব্যাপকতা পেত। যে কোন কারনে এর পরিধি বাড়ছে না, বা কেউ চেষ্টা করেন না বাড়াতে।
ফোবানাকে কার্যকর করতে হলে এর বিস্তৃতি দরকার। আবার যে সংগঠন হোস্টিং করে, তারাও তাদের হাতকে প্রসারিত করতে চায় না। তাই নানা শহরের দ্বন্ধ থেকেই যায়।
হোস্ট কমিটি করার সময় সমন্বয় করে করলে বা নানা প্রফেশনালদের সম্পৃক্ত করলে ফোবানা গতি পেত। অনেক স্কলার হোস্ট কমিটিকে সাপোর্ট করতে ইচ্ছুক, তাদের নেয়া উচিত ।
ফোবানাই একমাত্র বাংলাদেশী সংগঠন প্রতিবছর তিন দিনের বার্ষিক কনভেনশন করে। ভারত পাকিস্তান বা বিশ্বের অন্য কোন দেশ এরকম নন প্রফিট কনভেনশন করার সাহস করে না। সেই দিক বিবেচনায় ফোবানা সফল। ফোবানা নিয়ে বিভ্রান্তি থাকে, একই নামে বা লগো ব্যবহার করে কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে অনেকেই ফোবানার ইমেজ নষ্ট করেন। দিন শেষে মুল ফোবানা কোনটা সবাই খুজে নেন।
অতীতে বহুবার অনেকেই নানা অনিয়ম করেছিলেন, ফোবানাকে অপব্যবহার করেছিলেন তাদের কাউকেই ফোবানায় রাখা হয় নি। ফোবানা নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক সিষ্টেমে চলমান সংগঠন। সব কিছু ভোটাভুটির মাধ্যমে হয়ে থাকে।
যতই দিন যাচ্ছে ফোবানা আরও বেশী গতিশীল হচ্ছে। নতুন নতুন নিয়ম চালু করে এটাকে বেগবান ও স্বচ্ছতায় চালু রাখা হচ্ছে।
ফোবানা আসলে স্থানীয় বিশেষ করে উত্তর আমেরিকার শিল্পীদের প্লাটফর্ম হওয়ার কথা থাকলেও সেটা হয়ে উঠছে না। উত্তর আমেরিকার শিল্পীদের সময় দর্শক শুন্য থাকে অডিয়েন্স আর স্টার শিল্পীরা যখন উঠেন তখন লোকে লোকারন্য। এটার একটা শৃংখলা দরকার। ২য় দিন পুরোটা সময় উত্তর আমেরিকার শিল্পীদের দেয়া যায়।
ফোবানার সেমিনার গুলোর সময় যাতে সবাই উপস্থিত থাকেন, হোস্ট কমিটির উচিত সেদিকে খেয়াল রাখা।
ফোবানার এজিএমটা অনেক দীর্ঘ মেয়াদী সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা। এটাকে আরও কম সময়ে করা উচিত। ভোটিং এজিএমের আগের রাতে করে ফেললে রেজাল্ট কম সময়ে দেয়া যায়। অনেক সেমিনার মিস হয়ে যায় এই সময়টাতে। তবে আমার কাছে এই সময়টা খুব উপভোগ্য। অনেক ডিসিপ্লিন একটা এজিএম। এজিএমে অবাঞ্ছিত কেউ যাতে ঢুকতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী। ৩৫ তম ফোবানায় ওয়াশিংটনে আমরা একজন স্পন্সরকে এজিএমে দেখলাম। তাকে কথা বলতে দেয়া হল যা অনৈতিক ও দৃস্টিকটু। যা কখনও কাম্য নয়। ৩৫ তম ফোবানাকে আয়োজকরা তাদের ব্যাক্তিপুজায় রুপান্তরিত করেন। কনভেনর, চেয়ারম্যান, মেম্বার সেক্রেটারীর বিশাল বিশাল ছবি দৃস্টিকটু ছিল। যেটা আগামীতে হবে না, আমরা ফোবানা ফ্যানরা আশা করি।
ফোবানা এমন একটা কনভেনশন, আমার কাছে এক টুকরো বাংলাদেশ। নানা সিটির সংগঠকরা সপরিবারে আসেন। তিনটা দিন আনন্দে কাটে। আমরা রাত গভীরে আডডা, গান বাজনা নিয়ে মেতে থাকি। নতুন নতুন বন্ধু তৈরী হয়। নানা শহর ঘুরে দেখার সুযোগ ঘটে।
যে কেউ ফোবানায় আসতে পারেন, হোটেল বুক করে চলে আসতে পারেন, বা যে কোন প্যাকেজ কিনে আসতে পারেন। হোটেলেই আপনি খাবার পেয়ে যাবেন।
ফোবানার সদস্য হবেন কিভাবে?
আপনি ব্যাক্তিগত ভাবে একক সদস্য হতে পারবেন না। আপনার সংগঠনকে রেজিস্ট্রি করে আপনি আপনার টীম নিয়ে আসতে পারেন। সংগঠনটা রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক হলে হবে না। যে কোন কালাচারাল বা এসোসিয়েশন হলেও সদস্য হওয়া যায়। সেই এসোসিয়েশন এর রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে, ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে এবং বছরব্যাপী একটিভিটি থাকতে হবে, তখনই আবেদন করলে সদস্য পদ পাওয়া যায়। নির্বাহী কমিটি সদস্য পদ দেবার জন্য বসে থাকেন, অনেকেই সিস্টেম ফলো করেন না।
ফোবানায় গেলে কি লাভ হয়?
ফোবানায় তিনদিনে অনেক একটিভিটিস থাকে, সেখানে বিজনেস ডেভলেপমেন্ট এর সুযোগ ঘটে। নিজের বিজনেস প্রমোটের সুযোগ ঘটে। ফোবানায় বিজনেস লাউঞ্চ এর নানা ব্যাবসায়ীরা উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দেন। ফোবানার সাথে জড়িতরা সবাই আমেরিকার মুলধারার ব্যাবসায়ী ও কর্পোরেট চাকুরীজীবি, ফোবানায় নানা মতের ও পথের মিলন ঘটে। কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক, শিল্পীরা তাদের ভিউ একচেঞ্জ করেন। লেখকরা নতুন বই, শিল্পীরা সিডি নিয়ে উপস্থিত হন, একে অপরকে প্রমোট করেন। দিন রাত চলে গল্প গুজব ও নতুন শহরে আবিষ্কার করা।
তাই লেবার উইকএ্যান্ড এর এই ফোবানা কনভেশনে উপকৃত হবার সুযোগ থাকে, যারা এটাকে পজেটিভ হিসাবে নেন। যারা নানা প্যাকেজে আসেন তারা ফোবানাকে সহযোগীতাই করেন।
ফোবানা করতে কত খরছ হয়, এটা নিয়ে নানা মত রয়েছে। কনভেনশনের ভ্যানুর উপর খরচ উঠানামা করে তবে ২৫০ হাজার থেকে সাড়ে তিনশত হাজার খরচ পড়ে। তবে এখন আমেরিকায় বাংলাদেশের স্টার শিল্পীরা থাকেন তাই অনেক কম খরচেও ফোবানা করার সুযোগ রয়েছে। ফোবানায় কি আয়েজকদের লাভ হয়, মুল কথা আয়েজক সংগঠন ফোবানার খরছ তুলে নিতে পারেন। তবে হোষ্ট কমিটির অনেকেই পুরো একটা বছর ভলান্টিয়ার হিসাবে সময়টা পরিবার থেকে দান করেন। এটা একটা বিরাট সেক্রিফাইজ। আমরা ফোবানার কীক অব গালা পার্টিতে যাই, সেখানে ফোবানার ফান্ড রাইজিং ও ভেন্যু আগাম দেখানো হয়।
এক সময় ফোবানায় আদম পাচারের অপপ্রচার ছিল। ফোবানা এখন কাউকেই তেমন স্পন্সর করে না, যাদের আমেরিকার ভিসা আছে তারাই শিল্পী বা গেস্ট হিসাবে থাকেন।
ফোবানা উত্তর আমেরিকার প্রবাসীদের নিকট লাইট হাউস।
ফোবানা স্বচ্ছতায় পরিচালিত একটি চম্যকার সংগঠন। উত্তর আমেরিকার শিল্পীরা ফোবানায় তাদের যোগ্যতা দেখানোর সুযোগ পান। ফোবানা একটি ব্র্যান্ড, সেটা আম্রেলা সংগঠন হিসাবে প্রতিনিধিত্ব করে।