Saturday, November 23, 2024

    বউ-শাশুড়ির কোন্দল ছিল ব্রিটিশ রাজপরিবারেও!

    রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে ব্রিটিশ একটি যুগের অবসান হলো। ব্রিটেনের সম্রাজ্ঞীর শাসনকাল বহু ইতিহাসের সাক্ষী। তবে সেসব নিয়ে বেশি আগ্রহ বিশেষজ্ঞদেরই। অতি রক্ষণশীল রাজপরিবারের প্রতি সাধারণ মানুষের কৌতূহল অন্য দিকে।

    কী হয় বাকিংহাম প্যালেসের ভেতরে? কেমন করে কথা বলেন রাজপরিবারের সদস্যরা, কী খান তারা অথবা কেমন পোশাক পরেন তারা। এই সব প্রশ্ন তো রয়েছেই। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা প্রাসাদের অন্দরমহলে জমে থাকা কেচ্ছা ও বউ-শাশুড়ির কোন্দল নিয়ে। এলিজাবেথের মৃত্যুতে সেই বিষয়গুলো আবারও আলোচনায় এসেছে।

    ডায়না ও এলিজাবেথ

    আর এই বিষয়ে নিঃসন্দেহে প্রথম স্থানে ডায়না ও এলিজাবেথের সম্পর্ক। পুত্রবধূর সঙ্গে কেমন রসায়ন ছিল শাশুড়ির? ১৯৯৭ সালে যখন আকস্মিক দুর্ঘটনায় ডায়নার মৃত্যু হয়, ওই সময় স্কটল্যান্ডে ছুটি কাটাচ্ছিলেন এলিজাবেথ। দুঃসংবাদ পেয়েও প্রাথমিকভাবে লন্ডনে ফিরতে আগ্রহী ছিলেন না তিনি। যদিও চার্লসের সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয় ১৯৯২ সালে। ডিভোর্স হয়ে যায় ১৯৯৬ সালে। তবুও মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তার প্রয়াণের সময় রানির এই কাঠিন্য রানির জনপ্রিয়তার গ্রাফ রাতারাতি অনেকটাই নামিয়ে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি মত বদলান। ডায়নাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণও দেন। স্বীকার করে নেন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও হাসিখুশি থাকতে জানতেন তার প্রাক্তন পুত্রবধূ।

    ইতিহাসবিদ অধ্যাপক কেট উইলিয়ামস জানাচ্ছেন, দু’জনের সম্পর্ক মন্দ ছিল না। কিন্তু দূরত্ব ছিল। সমাজসেবায় পুত্রবধূর মনোযোগকে তিনি সম্মান করতেন। আবার তার খামখেয়ালি আচরণকে পছন্দও করতেন না। ডায়না কিন্তু শাশুড়িকে বরাবরই শ্রদ্ধা দেখিয়ে এসেছেন। প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন, আমার শাশুড়িই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শাশুড়ি।

    এমনিতেই ডায়না মোটেই রাজপরিবারে ‘বহিরাগত’ ছিলেন না। তার ভাই চার্লস স্পেনসারের ‘গডমাদার’ অর্থাৎ ধর্মমা ছিলেন তিনি। তাই ডায়নাকে পুত্রবধূ হিসেবে মানতে আপত্তি ছিল না তার। প্রথম দিকে সব ঠিকই ছিল। কিন্তু যত সময় এগিয়েছে, চার্লসের সঙ্গে ডায়নার দূরত্ব বেড়েছে, ততই যেন শীতল কাঠিন্যে ভরে গিয়েছে ডায়না-এলিজাবেথের সম্পর্ক।

    ডায়নার প্রাইভেট সেক্রেটারি প্যাট্রিক জেপসনের মতে, ডায়নার আশা ছিল তাদের দাম্পত্যের ভাঙন রুখতে এগিয়ে আসবেন এলিজাবেথ। কিন্তু তিনি তা করেননি। আসলে অপছন্দ না করলেও দু’জনের কড়া ব্যক্তিত্বই কখনও তাদের কাছাকাছি আসতে দেয়নি।

    মেগান ও এলিজাবেথ

    ডায়না-এলিজাবেথ নিয়ে গুঞ্জন যাই থাক, প্রকাশ্যে কিছু আসেনি। কিন্তু নাতি হ্যারির স্ত্রী মেগান মর্কেল রাজপরিবারের বিরুদ্ধে রীতিমতো ঝড় তুলে দিয়েছিলেন প্রকাশ্যে মুখ খুলে। গত বছরের মার্চে বিখ্যাত ফরাসি ম্যাগাজিন ‘শার্লি এবদো’ একটা কার্টুন ছেপেছিল। যা ছাপা হয়েছিল একেবারে প্রচ্ছদে। দেখা গিয়েছিল, মেগান মর্কেলের গলায় হাঁটু চেপে বসে রয়েছেন তার দাদি শাশুড়ি রানি এলিজাবেথ। ঠিক যেভাবে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে মেরে ফেলেছিলেন মিনিয়াপোলিসের এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশকর্মী। ওই কার্টুনের শিরোনাম ছিল ‘মেগান কেন বাকিংহাম প্যালেস ছেড়ে দিলেন?’ রানির হাঁটুর নিচ থেকে প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী মেগানের জবাব, ‘কারণ আমি নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না।’ এই কার্টুন নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল প্রবল।

    সেই সময়ই মার্কিন টক শো হোস্ট ওফ্রা উইনফ্রেকে বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন মেগান। সেখানে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড থেকে রাজপরিবার সবাইকেই একহাত নিয়েছিলেন তিনি। তার অভিযোগ ছিল, রাজপরিবার তাদের সন্তানের গায়ের রং নিয়ে চিন্তিত ছিল। এ ব্যাপারে হ্যারির সঙ্গেও আলোচনা করেছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা।

    আসলে মেগানের বাবা শ্বেতাঙ্গ হলেও মা ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ। সেই কারণেই রাজপরিবারের উদ্বেগ ছিল, মেগানের সন্তান হয়তো পুরোপুরি ফরসা নাও হতে পারে। অভিমান উগরে দিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল, তিনি আর বেঁচে থাকতেই চাইছিলেন না!

    তবে শুরুতে সম্পর্কটা কিন্তু ভালই ছিল। ইতিহাসবিদ উইলিয়ামস জানাচ্ছেন, নাতি হ্যারির সঙ্গে এলিজাবেথের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মেগানকে নিয়েও তিনি খুশিই ছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালে রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করেন হ্যারি-মেগান। যা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে ‘মেগজিট’ নাম পায়।

    এই সময় থেকেই বাকিংহাম প্যালেস ও এলিজাবেথের সঙ্গে মেগানের দূরত্ব একলাফে অনেকটাই বেড়ে যায়। যা চরম আকার নেয় বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারটির পরে। অবশ্য প্রকাশ্যে রানি সম্পর্কে কোনো কটূকথা বলেননি মেগান। বরং দাদিশাশুড়িকে দেখলে তার নিজের দাদির কথা মনে পড়ে বলেই জানিয়েছিলেন তিনি। শুধু তাই নয়, দাদির সঙ্গে মিলিয়ে নিজের মেয়ের নাম ‘লিলিবেট’ রাখেন। সেসব দেখলে ‘শার্লি এবদো’র কার্টুনকে অতিরঞ্জন বলেই মনে হয়।

    ক্যামিলা ও এলিজাবেথ

    তিনি ডাচেস অফ কর্নওয়াল। চার্লস ও ডায়নার বিচ্ছেদের ‘কারণ’ ধরা হয় ক্যামিলা পার্কার বোলসকে। ডায়নার মৃত্যুর আট বছর পরে ২০০৫ সালে ক্যামিলাকে বিয়ে করেন চার্লস। এ বিয়ে মোটেই মেনে নিতে পারেননি রানি এলিজাবেথ।

    কিন্তু জীবনসায়াহ্নে এসে ২০২২ সালে তিনি জানিয়ে দেন, ডাচেসকে কুইন কনসর্ট হিসেবে ঘোষণায় তার আপত্তি নেই। আসলে দুঃসময়ে ছেলে চার্লসের পাশে ক্যামিলা যেভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, তা দেখে একেবারে শেষে এসে মন গলেছিল রানির। এলিজাবেথের মৃত্যুর পরে মসনদে চার্লস। আর ক্যামিলা হচ্ছেন নতুন রানি।

    কেট মিডলটন ও এলিজাবেথ

    ডাচেস অফ কেমব্রিজ কেট মিডলটনের সঙ্গে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সম্পর্ক ছিল দারুণ। ২০১১ সালে প্রিন্স উইলিয়ামসের বিয়ে হয়। তারও তিন বছর আগে উইলিয়ামের ফুফাতো ভাই পিটার ফিলিপসের বিয়ের সময়ই কেটের সঙ্গে রানির প্রথম পরিচয়। একেবারে শুরু থেকেই তাকে বেশ পছন্দ করে ফেলেছিলেন তিনি।

    রাজপরিবারের এক সূত্রের দাবি, রানির ধারণা ছিল তার অবর্তমানে রাজপরিবারের নানা সমস্যায় তার এই নাতি ও নাতবউ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন। তার ভরসা এতটাই ছিল, ভাষণ দেওয়ার আগে নাকি সেবিষয়ে আলোচনাও করে নিতেন কেটের সঙ্গে। এমনও বলা হয়, এলিজাবেথ কেটের মধ্যে ভবিষ্যতের ‘রানি’কে দেখতে পেয়েছিলেন।

    কিন্তু রানির মৃত্যুর পরে কেমন যেন কুয়াশা তৈরি হয়েছে তাদের সম্পর্ক নিয়ে। যখন রাজপরিবারের সকলে স্কটল্যান্ডে দৌড়চ্ছেন, কেট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ইংল্যান্ডেই থাকছেন। তার তিন সন্তানের সঙ্গে। কেননা নতুন স্কুলে সবেমাত্র ক্লাস শুরু হয়েছে তাদের। এই অবস্থায় এখানেই থাকতে চান কেট। একথা জানার পরেই শুরু হয়েছে গুঞ্জন।

    Plugin Install : Subscribe Push Notification need OneSignal plugin to be installed.

    Related Posts