বগুড়ায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ব্যবহৃত টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়ায় শহরের ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অন্তত ৫০ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে ২৭ জনকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই বিদ্যালয়ের পাশেই পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ হয়।
এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। গুরুতর অসুস্থদের আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় দুপুর ৩টার দিকে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে যান সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শফিউল আজম।
তিনি জানান, টিয়ারগ্যাসের ধোঁয়ার পাশাপাশি আতঙ্কের কারণে একসঙ্গে এত শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সাধারণত অনেক শিক্ষার্থী একসঙ্গে থাকলে কয়েকজন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্যরাও আতঙ্কিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এখানেও তাই হয়েছে। ভয়ের কিছু নেই।
সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুরে শহরের দক্ষিণের প্রবেশমুখ বনানী এবং উত্তরের প্রবেশমুখ মাটিডালি এলাকা থেকে জিরো পয়েন্ট সাতমাথা অভিমুখে পদযাত্রা বের করা হয়। পদযাত্রাটি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ের দিকে পৌঁছার পর বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ জলেশ্বরীতলার দিকে ঘুরে গেলেও পেছনে থাকা নেতাকর্মীরা জিরো পয়েন্ট সাতমাথার দিকে যেতে চায়। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। বিএনপি নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তখন পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি করে। প্রায় ২০ মিনিট ধরে ওই সংঘর্ষ চলে। এ সময় সংঘর্ষস্থল ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহাদৎ হোসেন জানান, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর স্কুলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়ায় শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, মূলত আতঙ্ক আর টিয়ারশেলের ধোঁয়ার কারণেই শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় কারও কারও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
এদিকে দুপুর ৩টার দিকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আইসিইউয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন বাবা-মায়েরা অপেক্ষা করছেন।
মমতাজ বেগম নামে এক অভিভাবক বলেন, তার মেয়ে নাদিয়াকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে স্কুল থেকে জানানো হয়েছে।
আইনুল হাসান পলাশ নামে অপর এক অভিভাবক জানান, নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত তার মেয়েকেও আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি আতঙ্কের কারণেই সে অসুস্থ হয়েছে।
খবর পেয়ে বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শফিউল আজম, বিএমএ বগুড়ার সভাপতি ডা. মোস্তফা আলম নান্নু, সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. রেজাউল আলম জুয়েল, স্বাচিপ বগুড়ার সাধারণ সম্পাদক ডা. সামির হোসেন মিশু, ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা রফি নেওয়াজ খান রবিন এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুর রহমান অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখতে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে যান। পরে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনার নেতৃত্বে দলের সিনিয়র নেতারা অসুস্থ শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেন।
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কাজী মিজানুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের অসুস্থতা গুরুতর নয়। তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছে। এরইমধ্যে দুজন বাড়ি চলে গেছে। অন্যরাও আজই বাড়ি ফিরতে পারবে।