মহামারিকালে গত বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম থাকলেও এ বছর দেশে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত বছর প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ১০০। বিপরীতে চলতি বছর শুধু মে মাসেই ১৬৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল ১১ জুন পর্যন্ত সারা দেশে হাসপাতালে ভর্তি মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৫৪৭।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় ৮৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে। ঢাকার বাইরে পাঁচজনসহ দেশে মোট ৯০ জন ডেঙ্গু রোগী বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছে। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে গত বছর জুন মাসে ২৭২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এ বছর জুনের প্রথম ১১ দিনে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৯৫।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে নিয়মিত বাড়ির আঙিনায় জমে থাকা পানি পরিষ্কার করা এবং সিটি করপোরেশনের তদারকি বাড়াতে জোর দিয়েছেন গবেষকরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই আমি বলে আসছিলাম, এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে। মশা নিয়ন্ত্রণ আর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ এক কথা নয়। ডেঙ্গু, এডিস মশা, কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আলাদা। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, উন্মুক্ত স্থানে পানি জমতে না দিতে সিটি করপোরেশনকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। আর নিজের বাড়ির আঙিনা নিজেদের পরিষ্কার রাখতে হবে। ’
গত বছর সারা দেশে মোট ২৮ হাজার ৪২৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এর মধ্যে মারা যায় ১০৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোস্তাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মশক নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের কাজ দৃশ্যমান নয়। তাদের লোকবল যথেষ্ট নয়। আবার দায়িত্ব থাকলেও তাদের কাজে সীমাবদ্ধতাও আছে। এতে ভিকটিম হচ্ছে নাগরিকরা। তবে ডেঙ্গুর ধরন গত বছরের মতো হলে আক্রান্ত-মৃত্যু কম হতে পারে। কিন্তু ডেঙ্গুর ধরন পাল্টালে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। মনে রাখতে হবে ডেঙ্গুর চারটি ধরন রয়েছে। ’
ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার এই প্রবণতাকে গবেষকরা বলছেন আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব। বিশ্বব্যাংকের গত বছরের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার পেছনে রয়েছে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়া। দেশে সবচেয়ে বড় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় ২০১৯ সালে। ২০১৯ সালে রের্কড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছিল। আগের ৪৫ বছরে এমন বৃষ্টিপাত আর কোনো বছর হয়নি।
অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা, এডিস মশার ঘনত্ব ও বিগত বছরের ডেঙ্গু আক্রান্তের হার যেটা বলছে, এ বছর ডেঙ্গু অনেক বেশি হবে। তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত এডিস মশার বিস্তার বাড়ায়। আসছে জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু রোগী আরো বাড়বে বলেই মনে করছি। ’