নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের সিলেটে চলমান প্রথম টেস্টে জয়ের দাড়প্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। এই ম্যাচের প্রথম দুই দিন সমানে সমানে লড়াই হলেও তৃতীয় ও সবশেষ গতকাল চতুর্থ দিন নিজেদের দখলে নিয়ে এসেছেন টাইগাররা। গত পরশু প্রথমে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ব্যাট হাতে নিতে শুরু করে প্রথম বারের মতো অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। দারুণ ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে তিনি ব্যাট হাতে টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ঐদিনের খেলা শেষ করে। আর শুক্রবারতো টাইগার স্পিনারদের ঘূর্ণি। সবকিছু মিলিয়ে প্রথম বারের মতো ঘরের মাটিতে কিউইদের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে জয় পেতে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলমান টেস্টে প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের ৩১০ রানের জবাবে ৩১৭ রান করে সফরকারীরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৩৮ রান করেছে বাংলাদেশ। ৩৩২ রানের বিশাল রান তাড়ায় নেমে চতুর্থ দিন শেষে ৭ উইকেটে ১১৩ রান করেছে নিউজিল্যান্ড। আজ পঞ্চম দিন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয় পেতে আর দরকার মাত্র তিন উইকেট আর নিউজিল্যান্ডের হার এড়াতে দরকার ২১৯ রান। এমন সমীকরণেই আজ শেষ দিনের লড়াইয়ে নামবে এই দুই দল।
এর আগে গেল বছর বাংলাদেশ কিউইদের তাদের মাটিতেই হারিয়েছিল। মাউন্ট মঙ্গানুইতে বাংলাদেশ জিতেছিল ৮ উইকেটে। ঐটাই ছিল এই ফরম্যাটে ব্ল্যাকক্যাপসদের বিপক্ষে সাদা পোশাকে বাংলাদেশের প্রথম জয়। এবার ঘরের মাঠে একই সাফল্যের খোঁজে স্বাগতিকরা। আর এই জয় পেতে বাংলাদেশকে বল হাতে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ এনে দেওয়ার কারিগর হলেন তাইজুল ইসলাম। এই টেস্টেও এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের দুই ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়ে দলের সেরা বোলার তিনি। তাই চতুর্থ দিনের খেলা শেষে তিনি আসেন সংবাদ সম্মেলনে। এসেই জানালেন বড় দলের বিপক্ষে জয় তুলে নেওয়ার আলাদা তৃপ্তির কথা। বলেন, ‘বড় দলকে হারানোর মজাই আলাদা। এখনো জিতি নাই, তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। বড় দলকে হারালে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, দল বদলে যাওয়ার আভাস থাকে। এখনো জিতি নাই কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি বা করব। কালকেও করব ইনশাআল্লাহ। পুরো সার্কেল (টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ) যেন এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারি। কয়টা ম্যাচ জিতব বা জিতব না জানি না, তবে বাংলাদেশকে যেন ভালো কিছু দিতে পারি সেই চেষ্টা থাকবে।’
দলে নেই অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তিনি নেতৃত্বদানের পাশাপাশি দলের হয়ে ব্যাট ও বল হাতে দারুণ ভূমিকাও রাখেন। তার না থাকাতে এবার তাইজুলের ওপর বেশি চাপ পড়ছে কিনা জানতে চাওয়া হলে উত্তরে দলের ভালো খেলাটাই জরুরি বলে জানান এই বাঁহাতি স্পিনার। বলেন, ‘আরেক জনেরটা তো আমি করতে পারব না। আরেক জন আবার আমারটা করতে পারবে না। আমি আমার পরিকল্পনায় থাকি। সাকিব ভাই থাকুক আর না থাকুক, আমার সঙ্গে আরো স্পিনাররা আছেন। গেম বাই গেম পরিকল্পনা এরকম হয়—কেউ উইকেট নেবে, কেউ রান আটকে রাখবে। আমি রান আটকালে হয়তো মিরাজ বা নাঈম উইকেট পেত। যে থাকুক আর না থাকুক, আমরা ভালো খেলছি কি না এটাই জরুরি।’
প্রায় ৯ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পথচলা তাইজুল ইসলামের। নিয়মিত অন্তত লাল বলের ক্রিকেটে পারফরমও করছেন তিনি। এখন দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের একজন। তবুও কি দলে যথেষ্ট গুরুত্ব পান তাইজুল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খুশি অখুশির কিছু নাই। অবশ্যই একজন খেলোয়াড় যখন ৮-১০-১২ বছর খেলে, অবশ্যই অভিজ্ঞতা থাকে। ক্রিকেটে এই অভিজ্ঞতা অনেক কাজে লাগে। অধিনায়ক কোচের উপর নির্ভর করে আমাকে কতটা প্রায়োরিটি দিচ্ছে। প্রায়োরিটি দিলে অবশ্যই চেষ্টা করব সাহায্য করার। সবসময় আমার দরজা খোলা। যে কোনো দরকার হলে আমি করব। অনেকে অনেক সময় বলে কি করা যায়। আমি পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করি।’