বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারের ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শুক্রবার সকালে খিলগাঁওয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ‘গুম’ হওয়া কাউন্সিলর চৌধুরী আলমের বাসায় তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের কাছে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, দেশে একটা ভয়াবহ বন্যা চলছে সিলেট, সুনামগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে। আমি নিজে গতকাল সিলেটে গিয়েছিলাম।
নিজের চোখে না দেখলে এর ভয়াবহতা সস্পর্কে কোনো ধারণা করা যায় না। মানুষ যে কষ্টে আছে এবং তাদের কাছে যে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া, তাদের বাঁচার ব্যবস্থা করে দেওয়া, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেওয়া- তার কোনো ব্যবস্থা সরকার করে নাই। অথচ এই তথাকথিত অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে গিয়ে ওপর দিয়ে ঘুরলেন, ঘুরে তিনি সার্কিট হাউজের হেলিপ্যাডে নেমেছেন। সেখানে ১০ জন লোককে টোকেন ত্রাণ দিয়েছেন এবং তারপরে তিনি বলেছেন, সব হয়ে যাবে। গতকাল রাত পর্যন্ত আমি যা খবর পেয়েছি এগুলো কিছুই হয়নি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সেনাবাহিনী নামার পরে তারা সিস্টেমেটিক্যালি কিছু ত্রাণ রিমোট অঞ্চলগুলো পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এছাড়া কিছু কাজ করছে বেসরকারি এনজিওগুলো।
বিএনপির ত্রাণ কার্যক্রম সম্পর্কে মহাসচিব বলেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি কাজ করছে। তারা নিজেদের পয়সা দিয়ে নৌকা ভাড়া করে ত্রাণ নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে এবং ব্যাপকহারে কাজ করছে তারা। আমি আপনাদের মাধ্যমে সিলেটের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। একই সঙ্গে আমি অবিলম্বে বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, যে কারণে বন্যা হয় সেই কারণ বা সমস্যা সমাধানে কোনো ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করেনি। বরং এটাকে বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাওড়ে যে বড় রাস্তা হয়েছে, যেটা কিশোরগঞ্জের ইটনায় গিয়েছে। আমরা শুনেছি সেটা আমাদের রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের একটা প্রাইস প্রজেক্ট। ৩৩ কিলোমিটার এই রাস্তা। এই রাস্তায় পানির যে স্বাভাবিক প্রবাহ সেটাকে বন্ধ করে দিয়েছে। আজকে যে পানি উজান থেকে নেমে আসে সেই পানি আপনার সিলেট-সুনামগঞ্জের হাওড় দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোণার হাওড় দিয়ে মেঘনাতে গিয়ে পড়ে। অথচ পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বা গতিকে আজ বন্ধ করা হয়েছে। যার ফলে এভাবে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
২০১০ সালের ২৪ জুন রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের (সাবেক ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড) নির্বাচিত কমিশনার চৌধুরী আলমকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায়। তার নিখোঁজ হওয়ার এই দিনটিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকাল সাড়ে ১০টায় খিলগাঁওয়ে চৌধুরী আলমের বাসায় যান এবং তার সহধর্মিনী হাসিনা চৌধুরীর সাথে কথা বলেন এবং পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চৌধুরীর আলমের দুই ছেলে আবু সাঈদ চৌধুরী, আবু সাদাত চৌধুরী, দুই মেয়ে মাহমুদা আখতার, মাহফুজা আখতার ও চৌধুরী আলমের ছোট ভাই খুরশীদ আলম।
আরো উপস্থিত ছিলেন মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি আবদুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, মহানগর নেতা আবদুল হান্নান, ফারুক আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের নজরুল ইসলাম, বিএনপির মিডিয়া সেলের শায়রুল কবির খান।
‘সরকার জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে যাদেরকে গুম করা হয়েছে, তাদেরকে জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের পরিবার ব্যাংকের লেনদেন, সম্পত্তির মালিকানা, ওয়ারিশন সার্টিফিকেট পর্যন্ত পাচ্ছে না। গুম হওয়ার পরিবার চরম কষ্টের মধ্যে আছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে এই সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যে কারণে আমি বলছিলাম এই সরকারকে একমাত্র আখ্যা দেওয়া যেতে পারে ‘গণশত্রু’। তারা জনগণের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, চৌধুরী আলমকে এই সরকারের নির্যাতনকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায়। তার পর থেকে ১২ বছরে শত চেষ্টা করেও তার পরিবার ও বিএনপি কোথাও কোনো সন্ধান পায়নি। এখন পর্যন্ত সরকার তার কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরে এই ধরনের ঘটনা অনেকগুলো সংঘঠিত হয়েছে। আমাদের হিসেবে আমাদের দলের লোকই আছে ৬শর ওপরে।
তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সম্পর্কিত যে ধারা আছে সেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, জোর করে কাউকে নিখোঁজ করা হলে তা হবে মানবতাবিরোধী অপরাধ, ইটস আর ক্রাইম। এই সরকারের ১৫ বছরে দুঃশাসনে কত মানুষ যে সন্তানহারা হয়েছেন, কত জন স্বামীহারা হয়েছেন, কতজন পুত্রহারা হয়েছেন তার কোনো হিসাব সঠিকভাবে রাখতে আমরা সক্ষম হচ্ছি না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করার জন্যে এই গুম, খুন, বেআইনিভাবে আটক করে তাকে হত্যা, বিচারবর্হিভুত হত্যাকাণ্ড এমনভাবে বেড়েছে যেটা কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আবারো সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।