জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটকে বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলেছেন, কেবলমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। বাজেট মানে আরও টাকা লুট করা। ভবিষ্যতে তারা (ক্ষমতাসীন) কীভাবে আরও লুট করবে তার একটা হিসাব হচ্ছে এ বাজেট। তাই বিএনপির কাছে এ বাজেটের কোনো গুরুত্ব নেই। বৃহস্পতিবার বাজেটপরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তারা এসব কথা বলেন।
বৃহস্পতিবার বিকালে কাফরুল থানা বিএনপির চারটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলে বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এর আগে বাজেট প্রতিক্রিয়া দিয়েছি। কিন্তু এবার বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না। কোন বাজেটের প্রতিক্রিয়া দেব। কার বাজেট। কারা এ বাজেট করছে। যারা জনগণের প্রতিনিধি নয়, তারা এ বাজেট করছে। যাদের বাজেট দেওয়ার কোনো অধিকার নেই। তাদের কাছে বাজেট মানেই লুট করা। নিজেদের লুটপাটের জন্য তারা বাজেট তৈরি করে। ভবিষ্যতে আরও কত কোটি টাকা লুট করবে তার একটি হিসাব হচ্ছে এ বাজেট।
তিনি বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে আমাদের এ দেশকে বাঁচাতে হবে। কারণ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমাদের কথা বলার অধিকার নেই। আজ একটি বাসায় বসে আমাদের সম্মেলন করতে হচ্ছে। সরকারি বাধার কারণে আমরা খোলা জায়গায় সম্মেলন করতে পারছি না। কিন্তু এটা তো হওয়ার কথা নয়। তাদের যে অধিকার আমাদেরও সেই অধিকার।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ বাজেট সাধারণ জনগণকে আরও চাপে ফেলবে। পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার সুযোগ সংবিধান ও আইনবিরোধী। সামাজিক ন্যায়বিচার পরিপন্থি। কোনো সভ্য দেশে এটা হতে পারে না। অনির্বাচিত ও লুটেরা সরকার বলেই তারা এ সুযোগ দিয়েছে। কারণ জনগণের কাছে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এবারের বাজেট বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত। বাজেটে দেশের মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা হয়েছে। অবাক হওয়ার কিছু নেই। এতে করে লাভবান হবে সরকার সংশ্লিষ্ট একটি বিশেষ গোষ্ঠী। অন্যদিকে নতুন বাজেটের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরও চরম অবস্থায় পতিত হবে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। ডলারের বিপরীতে স্বল্পতম সময়ে টাকার মারাত্মক অবমূল্যায়ন ও দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। এই বাজেটে তার কোনো সমাধান নেই। বাজেটে দেশি-বিদেশি ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের চাপও কিন্তু দরিদ্র জনগণের ওপরেই পড়বে।
তিনি বলেন, দরিদ্র দেশের একটি বাজেটের মৌলিক দিক হলো উন্নয়ন বাজেট বনাম রাজস্ব বাজেটের অনুপাত। আমরা দেখছি, একদিকে উন্নয়ন বাজেটের সিংহভাগ নিয়েছে ভৌত অবকাঠামোর মেগা প্রজেক্টগুলো। সঙ্গে সঙ্গে আশঙ্কা হচ্ছে মেগা দুর্নীতির।
প্রস্তাবিত বাজেট বৈষম্য আর লুটপাটের দলিল বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ ন্যাপ। দলটির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া এক বিবৃতিতে বলেন, অতীতের মতো এবারের বাজেটও দারিদ্র্য, বৈষম্য, লুটপাটের দলিল ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রতিবছর সরকার একটি গতানুগতিক বাজেট উপস্থাপন করে। সরকারের প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ সালের বাজেটও তার থেকে আলাদা কিছুই নয়।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ছকে বাঁধা গতানুগতিক বলে মন্তব্য করেছেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকারের প্রস্তাবিত এই বাজেট দিয়ে নাক ভাসিয়ে বাঁচা যাবে হয়তো। কিন্তু মানুষের জন্য স্থায়ীভাবে সর্বজনীন জনস্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত করার পথ তৈরি হবে না।