তীব্র তাপদাহের পর শুরু হয়েছে বৃষ্টি।তারপরও মাঝে মধ্যেই গরমে নাজেহাল হতে হয়।ঘেমে অস্থির অবস্থা।
এ সময় চুলকানিসহ নানা চর্মরোগ দেখা দিয়ে থাকে।অত্যধিক তাপমাত্রা ও বৃষ্টির দাপটে বাতাসে আপেক্ষিক আদ্রতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে শরীরে প্রচুর ঘাম হয়।এ কারণে এসব রোগব্যাধি দেখা দেয়।
বর্ষাকালীন চর্মরোগ ও এর চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ত্বক ও যৌনব্যাধি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা.রাশেদ মোহাম্মদ খান।
কী কী রোগ হতে পারে
বর্ষায় ত্বকে মূলত যে ধরনের ছত্রাকঘটিত সংক্রমণ হয় সেসব রোগ ছাড়াও আরও কয়েকটি ত্বকের রোগ নিয়ে নিচে জানানো হল।
টিনিয়া করপোরিস
ত্বকে সাধারণত গোল গোল লিসিয়ন হয়।অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন অংশে এরা চাক বেঁধেও হতে পারে।
উপসর্গ : গোল গোল লিসিয়নে আক্রান্ত জায়গাগুলো ভীষণ চুলকায় ও জ্বালা করে।আক্রান্ত মানুষটি রোদে বেরোলে সমস্যা বাড়ে।
চিকিৎসা : ফাঙ্গাসনাশক অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেলে এবং আক্রান্ত স্থানে মলম লাগালে এই রোগ সেরে যায়।
টিনিয়া পেডিস
সাধারণত পায়ের পাতায় বা আঙুলের ভাঁজে ছত্রাক জমার কারণে টিনিয়া পেডিস রোগটি হয়।বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।
উপসর্গ : আক্রান্ত অংশ খুব চুলকায় ও জ্বালা করে।রোগের প্রকোপ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।প্রাথমিক অবস্থায় অবহেলা করলে পরে সংক্রমণ হয়ে গিয়ে সমস্যা জটিলতর হয়ে যেতে পারে।
চিকিৎসা : কিটোকোনাজোল জাতীয় ওষুধ লাগালে উপকার হয়।
পিটিরিয়াসিস ভারসিকালার
চলতি কথায় ‘ছুলি’ নামে পরিচিত।এটি একটি ছত্রাক ঘটিত সংক্রমণ।ছুলি অনেক রঙের হতে পারে।যেমন,হালকা সাদা,আবছা সাদা,হালকা বা গাঢ় বাদামি ইত্যাদি।বর্ষাকালে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমান বেড়ে গেলে ছুলির জন্য দায়ী ছত্রাকের বংশবিস্তারে সুবিধে হয়।
উপসর্গ : গোল সাদা বা বিভিন্ন রঙের ছুলি হতে পারে।এরা ত্বকের ওপরে প্রকাশ পায়।শরীরের উপরিভাগে,বিশেষত মুখে ছুলি বেশি হয়।যে সব শিশু অপুষ্টিতে ভোগে বা যাদের বংশগত প্রবণতা রয়েছে,তাদের ছুলি হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
প্রতিকার : নিয়মিত চিকিৎসায় ছুলি সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে যায়।ছুলি রোধ করতে শরীর শুকনো রাখা প্রয়োজন।যেমন-বৃষ্টিতে ভিজে গেলে ভাল করে গা মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে সুতির পোশাক পরে নেওয়া উচিত।
চিকিৎসা : খাওয়ার ওষুধ হিসেবে ফ্লুকোনাজোল ট্যাবলেট অথবা কিটোকোনাজোল জাতীয় ট্যাবলেট পানিতে গুলে নির্দিষ্ট মাত্রায় খাওয়ানো দরকার।লাগাবার ওষুধ হিসেবে ক্লোটাইমাজোল,কিটোকোনাজোল অথবা জিঙ্ক পারক্সাইড জাতীয় ক্রিম লাগানো যায়।অনেক সময় মাথায় ছুলির ছত্রাক বাসা বাঁধে,তখন কিটোকোনাজোল শ্যাম্পু ব্যবহার করা যায়।মাথায় ছত্রাক সংক্রমণ হলে গ্রিসিওফালভিন সিরাপ খেলে সুফল পাওয়া যায়।
ইমপেটাইগো
ইমপেটাইগো দু’ধরনের হয়-একটি ফোঁড়া ধরনের,অন্যটি সাধারণ ইমপেটাইগো।সাধারণ ইমপেটাইগো-তে শরীরে পাতলা ফোস্কার সৃষ্টি হয়।এই ফোস্কা একসঙ্গে অনেকগুলি হয় এবং ধীরে ধীরে ফেটে গিয়ে হলদেটে রঙের হয়ে যায়।ফোঁড়া ধরনের ইমপেটাইগোগুলি অবশ্য ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়।এদের ভেতরের পুঁজ জমে ফেটে যায় এবং বাদামি আকার ধারণ করে।মুখে,ঘাড়ে এবং হাতে বা পায়ে ইমপেটাইগো বেশি হয়।
ইন্টারট্রাইগো বা ক্যানডিডাল ইনফেকশন
ছোট শিশুদের প্রায়ই এ রোগ হয়।রোগটির অন্য নাম ক্যানডিডাল ইনফেকশন।বর্ষার স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়াই এ রোগের জন্য দায়ী।শিশুকে ঠিকমতো পরিষ্কার না রাখলেও এ রোগ হতে পারে।শরীরের বিভিন্ন ভাঁজে যেমন ঘাড় ও বিশেষ করে কুঁচকিতে ইন্টারট্রাইগো বেশি হয়। আক্রান্ত স্থান লাল আকার ধারণ করে।
ন্যাপি র্যাশ
ন্যাপি র্যাশ বা ন্যাপকিন ডার্মাটাইটিসের মূল কারণ ভিজে ন্যাপকিনের সংস্পর্শ এবং বর্ষার আদ্র আবহাওয়া।ডায়াপারের ঘষা লেগে শিশুর কচি ত্বক ছড়ে গেলে মূত্রে থাকা জীবানুরা ভিজে ও স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে ছড়িয়ে পড়ে।
উপসর্গ : তলপেট,কুঁচকি,থাইয়ের ওপরের অংশে এ সমস্যা বেশি হয়।তাই এ-সব জায়গা সবসময় শুকনো রাখার চেষ্টা করা উচিত।অপ্রয়োজনে ডায়াপার লাগানো উচিত নয়।
প্রতিকার : খোলামেলা ও শুকনো থাকলে ন্যাপি র্যাশ হয় না।থাই ও কুঁচকি সবসময় যথাসম্ভব শুকনো রাখা উচিত।শিশুরা যাতে প্রস্রাব-পায়খানার মধ্যে শুয়ে না থাকে,সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।বাচ্চাদের সফট্ বেবি সোপ দিয়ে গোসল করানো ভাল।
চিকিৎসা : ন্যাপি র্যাশ উপশমে প্রয়োজনে জিঙ্ক অক্সাইড,টাইটেনিয়াম ডাই অক্সাইড ইত্যাদি লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
স্কেবিস
বর্ষাকালে এই সমস্যা খুব স্বাভাবিক।এ সমস্যায় আক্রান্ত অংশ খুব চুলকায়।দিন থেকে রাতের দিকে চুলকানি বাড়ে।হাতের কবজি,আঙুলের ফাঁক,আঙুলের চারধার,মাথা ও দেহের খাঁজে এ সমস্যা হতে দেখা যায়।আক্রান্তস্থলে লাল দানা আকারের ক্ষত হয়।
সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করানো হলে মাসের পর মাস রোগী এ সমস্যায় ভুগতে পারেন।পার্মাইট ক্রিম ব্যবহারে সুফল মেলে।