ক্রিকেট বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে যাওয়া দলগুলো কিন্তু এখনো খুব একটা স্বস্তিতে নেই। গ্রুপ পর্বের ৪৫টি ম্যাচের মধ্যে ইতিমধ্যে ১৫টি অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থাৎ, এক-তৃতীয়াংশ ম্যাচ শেষ হলেও পরের ধাপে উন্নীত হওয়ার কথা কোনো দলই নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। এমনকি স্বাগতিক ভারত, নিউজিল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকা যতই দাপটের সঙ্গে শুরু করুক না কেন, এখনো পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ। পিছিয়ে পড়া ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার কথা না হয় বাদই দিলাম। তিন ম্যাচে হেরে যাওয়া শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনা কি নেই? বাংলাদেশকেই-বা কেন হিসাবের খাতায় রাখা হবে না? অস্ট্রেলিয়া যেভাবে খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সেটা তো পিছিয়ে পড়া সব দলের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে। অবশ্য পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন অজিদের সঙ্গে অন্যদের তুলনা চলে না। বরাবরই দলটি ফেভারিট। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হলেও প্রথম দুই ম্যাচে তাদের হেরে যাওয়াটাই বিস্ময়ের। শক্তি ও সামর্থ্যের দিক দিয়ে তাদের অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই। বরং আফগানিস্তান যেভাবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করেছে, সেটা শুধু বিস্ময়করই নয়, অনুসরণযোগ্য। এভাবে খেললে আফগানরাও সেমিফাইনালে উঠলে কি অবাক হওয়ার থাকবে? দক্ষিণ আফ্রিকার মতো মারমুখী দলকে নেদারল্যান্ডসের চ্যালেঞ্জ করাও তো কম চমকপ্রদ নয়। এ কথা অস্বীকার করা যাবে না, সামনের ম্যাচগুলোতে অনেক উলটপালট ঘটবে। ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা হওয়ায় অঘটন ঘটা খুবই স্বাভাবিক।
কোনো দলই পরের ম্যাচে জয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। সে কারণে সম্ভাবনা না থাকা দলেরও সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেওয়া যায় না। আস্থাহীনতায় ভুগতে থাকা পাকিস্তান ১৯৯২ সালে হারতে হারতে যেভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়, তা ছিল অবিশ্বাস্য। আবার অতি আত্মবিশ্বাসী দলও একটা পর্যায়ে গিয়ে আস্থার সংকটে ভুগতে পারে। ১৯৯৬ সালে গ্রুপ পর্বে সবাইকে উড়িয়ে দিয়েও সেমিফাইনালে পৌঁছাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।
স্বপ্ন দেখলেও যে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে খেলতে পারবে, এমনটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তিন ম্যাচের দুটিতে হেরে যাওয়ায় অনিশ্চয়তার দোলায় দুলছে সাকিব আল হাসানদের ভাগ্য। বাংলাদেশের মতো একই অবস্থা ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার। আর লঙ্কানরা তো কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি। তার মানে কী, এই দলগুলোর মধ্য থেকে কেউ সেমিফাইনালে খেলবে না? কে খেলবে, কে খেলবে না, সেটা নিশ্চিত হবে পরবর্তী ম্যাচগুলোতে। কিন্তু সবাই সেমিফাইনালে খেলার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে। তাতে কেউ সফল হবে। কেউ ব্যর্থ হবে। খেলার নিয়ম তো তা-ই। মন্ত্রটা হতে হবে এমন—শেষ পর্যন্ত মরিয়া চেষ্টা করে যাওয়া। প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়াকে মোটেও উপেক্ষা করা যাবে না। আবার খুব বেশি তোয়াজ করারও কিছু নেই। এই দলগুলোর সবাইকে হারানোর অভিজ্ঞতা আছে। আরও সুনির্দিষ্ট করে বলা যায়, প্রথম তিনটি দলের বিপক্ষে মুখোমুখি হওয়া ওয়ানডে ম্যাচে সর্বশেষ জয়ী দলের নাম কিন্তু বাংলাদেশ। অবশ্য অতীতের কোনো পরিসংখ্যান দিয়ে নতুন খেলার ভাগ্য নির্ধারণ করা যায় না। জিততে হলে নির্দিষ্ট ম্যাচে সেরা পারফরম্যান্স দেখাতে হবে। সেটা দুই দলের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। জয়ের জন্য প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস আর লড়াকু মানসিকতা। শক্তিশালী দলের বিপক্ষে হারানোর কিছু নেই। তবে জিততে পারাটাই বোনাস হিসেবে গণ্য হয়। সে ক্ষেত্রে বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে রুখে দাঁড়ালে হয় এসপার, নয় ওসপার হবে। এটাই কি হতে পারে না বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর টনিক?