বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ২২৮ কোটি ৮ লাখ ডলার। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ১০৫টাকা হিসাবে) ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাবে এই ঋণের পরিমাণ ১৭ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত এই হিসাবটি করা হয়েছে। তবে ঋণের এই পরিমাণ ঝুঁকি সীমার মধ্যেই রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। মোট সরকারি ঋণের মধ্যে বৈদেশিক ঋণের অংশ ৪৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে আইএমএফ। ঋণ অনুমোদনের পরে বাংলাদেশর অর্থনীতি নিয়ে সংস্থাটির বিশ্লেষণে এ চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে বাংলাদেশের ঋণের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৪৯০ কোটি ডলার, যা জিডিপির আট শতাংশের বেশি। অন্য দিকে দ্বিপক্ষীয় বা বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৬৭ কোটি ডলার, যা জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি।
বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঋণ স্থিতি রয়েছে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে, ১ হাজার ৮১৬ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংকের পরের সবচেয়ে বেশি ঋণ রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি), ১ হাজার ৩২৮ কোটি ডলার। এরপর আছে যথাক্রমে জাপান, রাশিয়া ও চীন। জাপানের ঋণ স্থিতি ৯২৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাশিয়া ও চীনের ঋণ রয়েছে যথাক্রমে ৫০৯ কোটি ডলার ও ৪৭৬ কোটি ডলার। আইএমএফের কাছে ঋণের পরিমাণ ৯৮ কোটি ডলার। নতুন করে সংস্থাটির কাছ থেকে আরো ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। নতুন ঋণের প্রথম ছাড়ও করা হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ ঋণ পেতে সময় লাগবে ৪২ মাস। আইএমএফ-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী বাংলাদেশের ঋণ এখনো ঝুঁকিমুক্ত সীমার মধ্যেই আছে।
অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেও সরকারের বড় ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ রয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্র হতে। ইতিমধ্যে এই খাতে নেওয়া ঋণের পরিমাণ কমাতে সুপারিশ করেছে আইএমএফ।
দেশীয় উৎস হতে ঋণের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৯ হাজার ৩৮৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। যা জিডিপির ২২ দশমিক ১ শতাংশ। সার্বিক ঋণের ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ এসেছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। এর মধ্যে ট্রেজারি বিল ৮২৪ কোটি ২০ লাখ ডলার, ট্রেজারি বন্ড ৩ হাজার ৪৭৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার, সুকুক ১৯২ কোটি ৬০ লাখ ডলার, জাতীয় সঞ্চয়পত্র হতে ঋণ রয়েছে ৩ হাজার ৯১১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এছাড়া ঋণের গ্যারান্টি আকারে রয়েছে ৩১০ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর বাইরেও অন্যান্য উৎস থেকে ঋণ রয়েছে ৬৭১ কোটি ৪০ লাখ ডলার।