আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, মবকিলিং এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন ও সরকারের পরিবর্তন চেয়ে প্রবাসের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক, মানবাধিকার সংগঠন, সংস্কৃতিকমি সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিবৃতি।
এক যৌথ বিবৃতিতে প্রবাসীরা বলেনঃ- আমরা ব্রিটেনে বসবাসরত প্রবাসীরা বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছি। আগষ্ট ২০২৪ সালে ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী কালীন সরকার কর্তৃক ক্ষমতা দখলের পর থেকে সমগ্র দেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙ্গে পড়েছে, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে ছিনতাই, রাহাজানি খুন ও ধর্ষনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। এই অন্তবর্তীকালীন সরকার দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে সম্পুর্ণভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। সরকারী পৃষ্টপোষকতায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতা ও সমন্বয়ক পরিচয়ে চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি দোকান-পাট, বাসাবাড়ি দখল। সচিবালয়সহ অফিস আদালতে প্রবেশ করে সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের হুমকী দিয়ে অনৈতিক ভাবে কাজ আদায় করছে।
আমরা আরও লক্ষ্য করছি ফেব্রুয়ারী মাসের শুরুতে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩২ নাম্বারের ধানমন্ডির বাড়ীতে আগুন দিয়ে পূড়ানো ও সেই সাথে সরকারী বুলডোজার দিয়ে বাড়ীটিকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া। এই বাড়িটি ছিল একটি যাদুঘর যেখানে মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য স্মৃতি ও দলিল পত্র সংরক্ষিত ছিল। এর থেকে প্রতিয়মান হয় এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি ধ্বংশ করার পেছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র। স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্টী মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও জাতীয় সম্পদ ধ্বংশ করে ১৯৭১ সালের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে। শুধু তাই নয় আমরা বিবিসি-সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে দেখেছি যখন বাড়িটি গুড়িয়ে দেয়া হয় সেখানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন গুলোর সদস্যদের উল্লাস এবং ‘হিযবুত তাহরির‘ ও ‘আইএসআই‘এর পতাকা টানানোর দৃশ্য। সেনাবাহিনী সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কোন ধরনের প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা না নিয়ে নীরব দর্শকের মতো জঙ্গিদের উল্লাস উপভোগ করেছে।
শুধু এই বাড়িই নয় পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে একই সময়ে ঘোষনা দিয়ে আওয়ামীলীগ অনুসারী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ীঘরে একই কায়দায় চালানো হয় হামলা লুটপাট ও অগ্নিসংয়োগ। সরকার ‘ডেভিল হ্যান্ট‘ অপারেশনের নামে দেশের সাধারণ নীরিহ মানুষদের গ্রেফতার করছে। বিনা কারণে গ্রেফতার করছে দেশের শ্রেষ্ট সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি ও রাজনীতিবিদদের। কোন ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে প্রশাসন, পুলিশ সহ বিভিন্ন সেক্টরের কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো এবং ওএসডি করা হচ্ছে। এইসব শুন্যপদগুলো কোন ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও ইন্টারভিউ ছাড়াই পূরন করা হচ্ছে জামাত অনুসারীদের দিয়ে। প্রতিদিনই বেছে বেছে ছাটাই এবং ওএসডি করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, এর মাধ্যমে আরো হাজার হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীকে ছাটাই করার প্রক্রিয়া চলছে।
অন্তবর্তী কালীন সরকারের কাজ হলো একটি সাধারন নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে দ্রুত প্রস্থান করা। কিন্তু এই সরকার অহেতুক সংস্কারের নামে সময় ক্ষেপন করছে। এটা শুধু আমাদের কথা নয় দেশের রাজনৈতিক দলের নেতারাও একই কথা বলছেন। সরকার করো কথায় কর্ণপাত করছেনা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জামাত অনুসারী তাজুল ইসলামকে প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তিনি ছিলেন মানবতা বিরোধী অপরাধীদের নিয়োগকৃত আইনজীবি। তার নিরপেক্ষতা ও আইনী অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের বিচার নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের নামে সরকারী পৃষ্টপোষকতাও আমরা লক্ষ্য করছি। ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ সরকারী পৃষ্টপোষকায় গড়ে উঠা নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে সরকারী গাড়ি সরবরাহ করা হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পর এক সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেছেন গণঅধিকার পরিষদ নেতা নূরুল হক নূর। দুজন ছাত্র উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদে বহাল থেকে নতুন রাজনৈতিক দলকে গোছাতে কাজ করছেন। নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠনের পর এই সরকারের আর কোন নিরপেক্ষতা অবশিষ্ট নেই। ড.ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান পক্ষপাতমূলক সরকারের বদলে সম্পুর্ণ নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা প্রয়োজন।
শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিই নয় রেডিও টেলিভিশন বা সংবাদপত্র গুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেনা। এমনটি প্রকাশ্যেই বলেছেন প্রবীন সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরী। জাতিসংঘ কমিশনের রিপোর্টের সকল অংশ সরকার প্রচার করতে দিচ্ছেনা। অথচ এই রিপোর্টে উঠে এসেছে পুলিশ হত্যার কথা, এই রিপোর্টে পরিস্কার করে বলা হয়েছে মবকিলিং সহ আরো বিষয়াদি। কিন্তু সরকার জাতিসংঘ কমিশনের রিপোর্টের ৬ অধ্যায় নিয়ে কোন কথা বলছেনা। এমনকি এই বিষয়টি দেশের সংবাদ মাধমে তুলে ধরতে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে (জাতিসংঘ কমিশনের রিপোর্টের ৬ অধ্যায় Banglatimes360.com এ প্রকাশিত হয়েছে)।
বাংলাদেশ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টের চ্যাপ্টার -৬
সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি ও ভয়ংকর অপরাধীদের এই সরকার কোন ধরনের আইনের তোয়াকা না করে মুক্ত করে দিয়েছে। নতুন করে জঙ্গিরা আবারও সংগঠিত হচ্ছে। অপরাধী ও জঙ্গিরা মুক্ত হওয়াতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। আমরা দেখেছি জঙ্গিরা প্রকাশ্যেই জাতীয় গ্রন্থ মেলায় গিয়ে প্রকাশকদের হুমকি দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ওলি-আউলীয়াদের মাজারে হামলা হচ্ছে। দেশের কয়েকটি স্থানে নাট্যমঞ্চ ভাঙ্গা হয়েছে, লালন উৎসব বন্ধ করতে চিহ্নিত জঙ্গিদের হুংকারও আমরা দেখেছি। দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি আইন শৃঙ্খলা পরিস্তিতির অবনতিতে দেশের সাধারন মানুষ দিশেহারা। ছয় মাসেও সরকার কোন কিছুর ইতিবাচক পরিবর্তন করতে পারেনি।
এহেন পরিস্থিতিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা ছাড়া আর কিছু করার অবকাশ নেই। আর সেই নির্বাচন হতে হবে অবাধ নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশ গ্রহন ও সমান সুযোগ সুবিধা-মূলক। আর এজন্য বর্তমান সরকারককে পরিবর্তন করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেনঃ-‘হৃদয়ে৭১‘-এর পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান, শাহাব আহমেদ বাচ্চু, ফাতেমা তাহিরা জিনিয়া ও অলক শাহা। সেকুলার বাংলাদেশ মুভমেন্ট এর পক্ষে কাউন্সিলার পুষ্পিতা গুপ্তা। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ষ্ট্রেটেজি ফোরামের পক্ষে ড. রায়হান রশিদ। ভয়েস ফর ডেমক্রেসী ইন বাংলাদেশের পক্ষে নারায়ন ভট্রচার্জি। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফয়েজুর রহমান খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মিফতা ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান। যুক্তরাজ্য বঙ্গবন্ধু পরিষদের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন ও আলিমুজ্জামান। ইউরোপীয়ান বাংলাদেশ ফোরামের পক্ষে আনসার আহমেদ উল্লাহ। ইন্টার ন্যাশনাল ফোরাম ফর সেকুল্যার বাংলাদেশের পক্ষে সৈয়দ এনামুল ইসলাম, জুয়েল রাজ, মুনিরা পারভিন, স্মৃতি আজাদ, নিলুফা হাসান ইয়াসমিন ও এনামুল হক। ডায়াসপরা ৭১ এর পক্ষে জেসমিন চৌধুরী ও রানা মেহের। বঙ্গবন্ধু লেখক সাংবাদিক ফোরামের পক্ষে আব্দুল কাদির চৌধুরী মুরাদ, শাহ মোস্তাফিজুর রহমান বেলাল, কিটন মোহাম্মদ শিকদার ও ইয়াসমিন সুলতানা পলিন। সেভেন মার্চ ফাউন্ডেশনের পক্ষে নূরুদ্দিন আহমদ ও মিঃ ফরিদ। সাংবাদিকদের পক্ষে- সাংবাদিক হামিদ মোহাম্মদ, সিনিয়র সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী, সাংবাদিক ও সত্যবানী সম্পাদক সৈয়দ আনাছ পাশা, সাংবাদিক উর্মি মাজহার, সাংবাদিক বাতিরুল হক সরদার ও সাংবাদিক কামরুল আই রাসেল। গৌরব একাত্তরের পক্ষেঃ ভিপি আব্দুল রাজাজাক মোল্লা, কাবিরুল ইসলাম কামাল, নাজমা সুলতানা নার্গিস, কামরুজ্জামান দুলাল ও ফখরুল ইসলাম। হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এম.এ. আহাদ মজুমদার ও মহশিন হাবিব ভূঁইয়া। বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের পক্ষে নূরুল ইসলাম। সাংস্কৃতি কর্মী অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক মনি ও সৈয়দা নাজনিন সুলতানা শিখা। মানবাধিকার কর্মী শাহ রুমি হক, ফয়েজ খান তাওহিদ ও মীরা বড়ুয়া।