বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে মৌসুমী ভারী বৃষ্টি-বজ্রপাত এবং বন্যা-ভূমিধসে কমপক্ষে ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। শনিবার সিলেট এবং চট্টগ্রাম পুলিশের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বাংলাদেশে বন্যায় হতাহতের এই তথ্য জানিয়েছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি। এএফপির বরাত দিয়ে ভারতের টাইমস অফ ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম এই খবর প্রকাশ করেছে।
ভারতের আসাম এবং মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শনিবার পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, মৌসুমী বৃষ্টির সময় বজ্রপাতের কারণে শুক্রবার পর্যন্ত দেশে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বন্যার ফলে সৃষ্ট ভূমিধসে আরও চারজন মারা গেছেন।
শুক্রবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি এবং বজ্রপাতে দেশে অন্তত ২১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে তিনজন শিশু রয়েছে, যাদের বয়স ১২ থেকে ১৪ বছর। শুক্রবার নান্দাইলে বজ্রপাতে এই তিন শিশু মারা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।
চট্টগ্রামের পুলিশ পরিদর্শক নুরুল ইসলাম বলেছেন, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে পাহাড়ের পাশে ভূমিধসে এক পরিবারের চারজন নিহত হয়েছেন।
শনিবার সকালের দিকে নিজেদের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বলেছে, বন্যার কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি প্লাবিত এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় এই দুই জেলায় সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে সরকারের বন্যা পূর্বাভাষ ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, দেশের প্রধান প্রধান সব নদীতে পানি বাড়ছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা এবং উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও রংপুর জেলায় আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে।
সিলেটের ওসমানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমেদ বলেছেন, বিমানবন্দরের রানওয়েতে বন্যার পানি প্রায় ঢুকে পড়ায় শুক্রবার থেকে আগামী তিন দিনের জন্য সব ধরনের বিমানের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
গত মাসে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্যের প্রাক-মৌসুমি বন্যার পানির বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ঢুকে পড়েছিল। এর ফলে সেই সময় আবাদি জমির ফসল এবং বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেলের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় ১৭ শতাংশ মানুষকে তাদের বর্তমান আবাস স্থল থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে।