ভারতের আমন্ত্রণে জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে দিল্লির পালাম বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান ভারতের কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী শ্রীমতি দর্শনা জারদোশ। বিকেলেই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন তিনি।
হাসিনা-মাদির বৈঠকটি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত হবে। এ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই ও প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এ বৈঠক নিয়ে অনেকের আগ্রহ রাজনৈতিক বিষয়ের দিকে। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এটি শেষ বৈঠক।
জি২০’র বর্তমান সভাপতি ভারত যে ৯টি দেশকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। শেখ হাসিনার এই সফর এমন এক সময় হচ্ছে যখন বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে।
বলা হচ্ছে, নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার এই ভারত সফর বর্তমান সরকার তথা আওয়ামী লীগের জন্য রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
ভারতের অবস্থান স্পষ্ট হবে?
বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে তা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বিরোধ তীব্র হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিরোধিতা করে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন ও মানবাধিকার ইস্যুতে সরকারের ওপর জোরালো চাপ সৃষ্টি করেছে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো।
কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমেরিকার মনোভাব অটল থাকবে নাকি ভারতের প্রভাবে মার্কিন নীতির পরিবর্তন হবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতের সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে শেখ হাসিনার পক্ষ নিয়ে আমেরিকাকে বার্তা দিয়েছে ভারত। এ খবর প্রকাশিত হবার পর বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে শেষ পর্যন্ত ভারতের অবস্থান কী হবে, এই বৈঠকেই সেই বার্তা পরিস্কার হয়ে যাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এতোটা আগ্রহ নিয়ে অতীতের নির্বাচনগুলোতে ‘হস্তক্ষেপ’ করেনি। এবার তারা করছে, মানে হচ্ছে তারা এ ব্যপারে আগের চেয়ে বেশি সিরিয়াস যে এখানে একটি যথাযথ নির্বাচন হোক।
বাংলাদেশে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু ভারতের তরফ থেকে শেখ হাসিনার সরকারকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেয়া হয়েছে।
আগামী নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মোকাবেলায় ভারত কী ভূমিকা নেবে সেদিকে অনেকেই তাকিয়ে আছে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে ভারত এখানে চাইবে যে একটা স্থিতাবস্থা বজায় থাকুক। এটা তাদের জন্য সুবিধাজনক। কিন্তু তারা কতটুকু এবার এর পক্ষে নামবে সেটা আমরা জানি না এখনো। আদৌ নামবে কি-না, সেটাও জানি না। কারণ তাদের এখানে বহুমাত্রিক সম্পর্কের বিষয় আছে। আমরা এটাও জানি না মার্কিন যুক্তরাষ্ট এবং ভারতের মধ্যে এ বিষয়ে কোন কথা হয়েছে কি-না বা কী কথা হয়েছে। এগুলো দুই নেতার বৈঠকের পরেই স্পষ্ট হবে।’
তবে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলছেন, বৈঠকে ভারত তার অবস্থান বাংলাদেশের কাছে স্পষ্ট করলেও সেটা হয়তো বাইরে থেকে দৃশ্যমান হবে না কিংবা দৃশ্যমান হলেও সময় লাগবে।
তবে আওয়ামী লীগ এবং সরকারের পরবর্তী কর্মকাণ্ডে হয়তো বোঝা যাবে, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের মনোভাবে কোন পরিবর্তন এসেছে কি-না।