বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ‘মানহানির’ অভিযোগে ফিলিপাইনের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনে (আরসিবিসি) মামলা খারিজ করে দিয়েছেন ফিলিপিন্সের আদালত। গত ৩০ জুন ফিলিপিন্সের আদালতে ওই রায় হয়। রায়ের কপি বুধবার হাতে আসে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা আরসিবিসির বিরুদ্ধে রিজার্ভ চুরির মামলাটি আদালতে বহাল আছে।এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘২০২০ সালের মার্চে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক মামলা করার পর তারাও একটি মানহানির মামলা করেছিল। গত ৩০ জুন সেই মানহানির মামলাটি ফিলিপাইনের আদালত খারিজ করে দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা আরসিবিসির বিরুদ্ধে রিজার্ভ চুরির মামলাটি আদালতে বহাল আছে বলে জানান তিনি।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (ফেড) রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে একটি মেসেজের মাধ্যমে শ্রীলংকায় একটি ‘ভুয়া’ এনজিওর নামে ২০ মিলিয়ন ডলার সরিয়ে নেওয়া হলেও বানান ভুলের কারণে সন্দেহ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়। বাকি চারটি মেসেজের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার সরিয়ে নেওয়া হয় ফিলিপিন্সের মাকাতি শহরে রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকের জুপিটার স্ট্রিট শাখায় ভুয়া তথ্য দিয়ে খোলা চারটি অ্যাকাউন্টে।
চুরি যাওয়া অর্থ উদ্ধারের আশায় ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে বলা হয়, ওই অ্যাকাউন্টগুলোর ওপর আরসিবিসি এবং এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছিল।
বাংলাদেশ মামলা করার দুদিনের মাথায় ৬ মার্চ ফিলিপিন্সের সিভিল কোর্টে আরসিবিসির পাল্টা মানহানির মামলা করে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০ কোটি পেসো (১৯ লাখ ডলার) দাবি করা হয় সেখানে। আরসিবিসির এই মামলা খারিজ করে দিয়েছে সেখানকার আদালত। ওই মামলায় বলা হয়, টাকা আদায় করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ‘বিরাট এক ষড়যন্ত্র’ শুরু করেছে, সে জন্য তারা আরসিবিসির ‘সুনাম ক্ষুণœ করতে, ভাবমূর্তি নষ্ট করতে’ ওঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু যে টাকার জন্য এটি তারা করছে, তা কখনই আরসিবিসির কাছে ছিল না, ওই টাকার ‘দায়ও আরসিবিসির নয়’।
আরসিবিসি মামলা করার পর আইনি লড়াইয়ের জন্য ম্যানিলার ‘বারনাস ল অফিস’কে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর ফিলিপিন্সের আদালতে আরসিবিসির পক্ষে সিদ্ধান্ত দিলে বাংলাদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। সেই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ জুন আরসিবিসির মানহানি মামলা খারিজ করে দেন ফিলিপাইনের আদালত। রায়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংককে বিচারের আওতায় আনার এখতিয়ার ফিলিপিন্সের ওই আদালতের নেই। সে কারণে আরসিবিসির মামলাটি খারিজ করা হলো।
অবশ্য নিউইয়র্কের আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ যে মামলা করেছিল, গত এপ্রিলে তা খারিজ হয়ে যায়। নিউইয়র্কের সুপ্রিমকোর্টের রায়েও বলা হয়েছিল, ওই মামলা বিচারের ‘পর্যাপ্ত এখতিয়ার নেই’। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নিউইয়র্কের ‘এখতিয়ারভুক্ত’ আদালতে মামলা করা হয়েছে এবং সেটি চলমান রয়েছে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম।
চুরি হওয়া কিছু অর্থ দেশে ফেরত আসলেও বড় অংকের অর্থ এখনও আটকেই আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সে সময় বলেছিল, রিজার্ভের অর্থ চুরির কাজে ‘অজ্ঞাতনামা উত্তর কোরীয় হ্যাকারদের’ সহায়তা নেয় আসামিরা। ‘নেস্টেগ’ ও ‘ম্যাকট্রাক’ এর মতো ম্যালওয়্যার পাঠিয়ে হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট নেটওয়ার্কে ঢোকার জন্য পথ বের করে। পরে নিউ ইয়র্ক ফেড থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়া হয় নিউ ইয়র্ক ও ফিলিপাইনের আরসিবিসির অ্যাকাউন্টে।