বাংলালিংকের ৮৫০ কোটি টাকার বেশি ফাঁকি বের হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন- বিটিআরসির করা অডিটে এই ফাঁকি ধরা পড়েছে। অডিট শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিটিআরসির নিয়োগ করা অডিটর মেসার্স মসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোম্পানি। এর আগে ২০২২ সালের মাঝামাঝিতে অডিটর কোম্পানি যে ‘চারটি প্রতিবেদন’ জমা দিয়েছিল সেখানে তখন পর্যন্ত ৮২০ কোটি ৭২ লাখ টাকার ফাঁকি পাওয়া গিয়েছিল। এরপর কোম্পানিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়, যেখানে পাওনা দাবি বেড়ে ৮৫০ কোটি টাকা হয়েছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ‘চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা বাংলালিংকের কাছে তাদের কোনো বক্তব্য আছে কিনা জানতে চেয়েছি। যদিও অডিটেই তাদের বক্তব্য আছে। তারপরও তারা যদি নতুন কোনো বক্তব্য দেয় সেগুলো নিয়ে আমরা অডিটর প্রতিষ্ঠানের বসে বিষয়টি চূড়ান্ত করব। খুব শিগগিরই এই প্রক্রিয়া শেষ হবে। এরপরই তাদের কাছে এই টাকা চেয়ে আমরা চিঠি পাঠাব।’
অডিটে বাংলালিংকের কাছে এই পাওনা দাবির মধ্যে মূল টাকা (প্রিন্সিপাল) ৪৩০ কোটি টাকার মতো। এনবিআরের পাওনা রয়েছে ২০ কোটি টাকা। আর বিলম্ব ফি বা লেট ফি রয়েছে ৪০০ কোটির টাকার মতো। এ ধরনের অডিটে সাধারণত ভ্যাট, ট্যাক্স, রেভিউনিউ শেয়ারিং, হ্যান্ডসেট রয়্যালিটি, অ্যাকসেস ফ্রিকোয়েন্সি পেমেন্ট, মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি পেইমেন্ট, পাওয়ার আউটপুট চার্জ, লাইসেন্স ফিসহ অনেকগুলো ক্যাটাগরিতে পাওনা বা ফাঁকি দেখা হয়।
অডিটে বাংলালিংকের এই কাছে পাওনা দাবি এবং ফাঁকির বিষয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘অডিটে আমরা হস্তক্ষেপ করিনি। অডিটর কোম্পানি যা পেয়েছে সেটিই অডিট করেছে। অডিট করা মানে এই যে, তারা যেটা ফাঁকি দিয়েছে সেটাও চিহ্নিত করা। আমরা তাদের বলেছি. অ্যাকুরেট করার জন্য, হোপফুলি তারা করেছে।’ পাওনা আদায় নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আগেও আমরা পাওনা আদায় করেছি। বিলম্বিত হয়েছে হয়তো কিন্তু টাকা আমরা আদায় করেছি এবং করতেও থাকব। এক চুল পরিমাণ ছাড় নেই। সরকারের পাওনা মানে জনগণের পাওনা, আর এই টাকা দিতে হবে। কোনো তদবির, কোনোকিছু আমরা অ্যালাও করিনি, এটা হবেও না।’
বাংলালিংক যদি এ বিষয়ে আলোচনা করতে চায় সে বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আলোচনার দরজা বন্ধ করব না। কিন্তু আলোচনা মানে তাদের স্বার্থ রক্ষা করব, জনগণের স্বার্থ রক্ষা করব না—এটা নয়। আমাদের জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে, এজন্য আমরা আলোচনায় বসতে রাজি আছি। এতে আপত্তি নেই। কারণ দরজা বন্ধ করে সমাধান হয় না, খোলা রেখেই হবে। তাদের যুক্তি সংগত কোনো বিষয় থাকলে সেটা নিয়ে কথা বলতে পারবে। কিন্তু আমরা তো একটা ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলব, সেই ভিত্তিকে মেনে নিয়েই তাদের আলোচনায় আসতে হবে।’
বাংলালিংকের অডিটের জন্য মেসার্স মসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোম্পানিকে বাংলালিংকের জন্য অডিটর নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট। বিটিআরসির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এই অডিট শেষ করার কথা ছিল ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। নির্ধারিত সময়ে অডিট শেষ না করতে পেরে অডিটর বিটিআরসির কাছে আরও সময় চায়। বিটিআরসি পরে তাদের সময় বাড়ায়। বাংলালিংকের এই অডিট করতে মসিহ মুহিত হক অ্যান্ড কোম্পানিকে ৮ কোটি ৭৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে বিটিআরসিকে। এই কোম্পানি ভারতীয় এক অডিট কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে রবিরও অডিট করেছিল, এর জন্য তারা নিয়েছিল ৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
ইতিমধ্যে গ্রামীণফোন ও রবির অডিট সম্পন্ন করার পর গ্রামীণফোনের কাছে অডিট আপত্তির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা হতে ২ হাজার কোাটি টাকা এবং রবির অডিট আপত্তির ৮৬৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা হতে ১৩৮ কোটি টাকা আদায় করছে বিটিআরসি।