ইরাকের প্রভাবশালী নেতা মুকতাদা আল সদর রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী বাগদাদে যে সহিংসতা সৃষ্টি হয়, তাতে অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু হয়। এসব প্রাণহানির পরিপ্রেক্ষিতে মুকতাদা সদর অত্যন্ত কড়া ভাষণ দেন। টেলিভিশনে সেই ভাষণ সম্প্রচারিত হওয়ার পরপরই বাগদাদের গ্রিন জোন ছাড়তে শুরু করে তাঁর সমর্থকরা।
মুকতাদা সদর রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিলে গত সোমবার রাতে রাজপথ দখল করে নেয় তাঁর উত্তেজিত সমর্থকরা।দেশের সবচেয়ে নিরাপত্তাবেষ্টিত অঞ্চল গ্রিন জোনে হামলা চালায় এবং সরকারি প্রাসাদগুলো দখলে নিয়ে নেয় তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারির মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
বাগদাদে মুকতাদা সদরের নিয়ন্ত্রিত মিলিশিয়াসহ তাঁর অনুসারীরা ইরান সমর্থিত আধাসামরিক বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। গতকাল মঙ্গলবার এ সংঘর্ষ আরো জোরদার হয়। এ সময় মুকতাদা সদরের সমর্থকরা, সেনাবাহিনী ও হাশদ আল-শাবির তেহরানভিত্তিক সাবেক আধাসামরিক বাহিনীর সমর্থকরা এ সংঘর্ষে যুক্ত হয়। এ সংঘর্ষেই মুকতাদা সদরের ২৩ সমর্থকের মৃত্যু হয় বলে জানান দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
এমন বিশৃঙ্খলার মধ্যেই আসে মুকতাদা সদরের ঘোষণা। গতকাল সরাসরি সম্প্রচার করা হয় তাঁর ভাষণ। নাজাফ থেকে দেওয়া ভাষণে তিনি দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান এবং সহিংসতা বন্ধে জোরালো আহ্বান জানান।
ওই ভাষণ দেওয়ার আগে প্রভাবশালী এ রাজনীতিক সহিংসতা ও সব পক্ষের অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অনশন পালনের ঘোষণা দেন। এরপর আসে ভাষণ। ঘোষণায় সমর্থকদের মাত্র ৬০ মিনিটের মধ্যে রাজপথ ছাড়ার নির্দেশ দেন তিনি। আর এ আদেশ যারা শুনবে না, তাদের দলচ্যুত করারও হুমকি দেন। এ ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁর সমর্থকরা গ্রিন জোন ছাড়তে শুরু করে। দেশব্যাপী জারি করা কারফিউও তুলে নেয় সেনাবাহিনী।
মুকতাদা সদর গত বছর অক্টোবরের নির্বাচনে সর্বাধিক আসন পেলেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। এ অবস্থায় তিনি ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে বাইরে রেখে সরকার গঠনের চেষ্টা করেন। কিন্তু সরকার গঠনে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে পার্লামেন্ট থেকে তাঁর দলের আইন প্রণেতারা পদত্যাগ করতে থাকেন। তাঁর সমর্থকরা সরকারি ভবন দখলে নিতে থাকে, বাড়তে থাকে উত্তেজনা। মুকতাদা সদর রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিলে গত সোমবার রাতে তা সহিংসতায় রূপ নেয়।
কয়েক দশকের যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে ইরাক। এ অবস্থায় মুকতাদা সদর ও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী শিয়া মুসলিমদের মধ্যকার রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেশটিকে আরেক দফা সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
ইরাকের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের প্রভাবের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মুকতাদা সদর ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসানে তিনি দ্রুত নতুন নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।