২৯ জুলাই মোহন বাগান দিবস। আশুরার দিন হওয়ায় এক দিন পিছিয়ে ৩০ জুলাই দিবস উদযাপন করে মোহন বাগান। সেখানেও বারবার এএফসি কাপের কথা উঠেছিল। সবুজ মেরুন কর্তা দেবাশিষ দত্ত কিংবা তাদের সমর্থক, সবার মুখে বেশ জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছিল এএফসি কাপ নিয়ে পাল তোলা নৌকার অভিযানের কথা। ভারতীয় চলচ্চিত্রের সংগীত শিল্পী বাবুল সুপ্রিয় সেই অনুষ্ঠানে গান গাইছেন আর ফাঁকে ফাঁকে মোহন বাগানের ফুটবলের ইতিহাস নিয়ে ছোট ছোট তথ্য দিচ্ছেন। বাপ-দাদার কাছ থেকে শোনা গল্প, কখনো নিজের দেখা ৩০ বছর আগের খেলার কোনো ঘটনা মুখস্থ বলছিলেন। একই সঙ্গে এএফসি কাপে মোহন বাগান দুরন্ত গতিতে খেলবে সেটিও জানাচ্ছিলেন তিনি। আর দর্শক মহল মুহুর্মুহু করতালিতে ফেটে পড়ছিল। দেবাশিষ দত্ত জানিয়েছিলেন তারা এশিয়ার ফুটবলে ভালো কিছু করতে চান। মোহন বাগান এখন শুধুই কলকাতার ফুটবল নিয়েই নয়, এশিয়া নিজেদের একটা অবস্থান চায়। এবার নিয়ে মোহন বাগান পর পর তিন বার এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে উঠল। আপাতত এএফসি কাপ নিয়ে মোহন বাগানের পরিকল্পনা সফল হয়েছে। তারা গ্রুপ পর্বে ঢুকেছে। আর আবাহনী ঘরে ফিরেছে শূন্য হাতে।
পরিকল্পনাহীন এই আবাহনীকে দেখে হতবাক কলকাতার দর্শক। সল্ট লেকে ১১ হাজার দর্শক হতাশ। অনেক দর্শক আগেই খোঁজ খবর নিয়েছেন এএফসি কাপে ঢাকার দল আবাহনীর পরিকল্পনা কী। হতাশ হয়েছেন তারা।
শেখ কামালের হাতে গড়া দলটা ভারতের নাগজী ট্রফি জয় করে ভারতবর্ষে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। সেই দলটা এখন ধুঁকছে। ঘরোয়া ফুটবলে ভেঙে পড়েছে, লিগের ট্রফি পাচ্ছে না। ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে এএফসি কাপের প্রিলিমিনারি রাউন্ডে সিলেটে মালদ্বীপের ক্লাব ঈগলসকে (২-১) হারিয়ে মোহন বাগানকে প্লে অফে পেয়েছিল। কলকাতায় সল্ট লেকে গিয়ে দেখল নিষ্ঠুর বাস্তবতা। এএফসি কাপ নিয়ে গঙ্গাপাড়ের দল মোহন বাগানের লম্বা পরিকল্পনা। আর আবাহনী জোড়া তালি দিয়ে সহজেই সাগর পাড়ি দেওয়ার ভাবনা। যা হওয়ার তাই হয়েছে। ১৭ মিনিটে গোল পেয়ে আবাহনীর চোখেমুখে তখন এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের হাতছানি। বাকি ৭৭ মিনিট পথ পাড়ি দিতে হলে শক্তি সামর্থ্য প্রয়োজন সেই লড়াইয়ে টিকতে পারেনি। এগিয়ে থাকার সুযোগও ধরে রাখতে পারেনি। মোহন বাগান ঝড়ে চুরমার হয়ে গিয়েছিল আবাহনীর রক্ষণ। গোল পেতেও সময় লাগল না। টপাটপ তিন গোল করে নিলো। স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরেন্দোর কাছে খুব সহজেই কুপোকাত হলো পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমসের আবাহনী। হুয়ান ফেরান্দো বুঝিয়ে দিয়েছেন পরীক্ষা দেওয়ার আগে আরও ভালোভাবে পড়াশুনা করে আসতে হবে। এক রাত পড়লে ঈগলসকে হারানো যায়, মোহন বাগানকে হারাতে হলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পানা ও প্রস্তুতি থাকতে হবে, তা না হলে বাগানের কাঁটায় রক্তাক্ত হয়েই ফিরতে হবে।
আবাহনী কোটি সমর্থকের দল। সমর্থকের ভালোবাসার দলের নাম আবাহনী। সমর্থকের সঙ্গে অদেখা একটা বন্ধন আছে। আবাহনীর জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত এমন সমর্থকও আছেন। কিন্তু সমর্থকদের সঙ্গে আবাহনীর সম্পর্কটা যেন দিনে দিনে দূরে চলে গেছে। অদৃশ্য হয়ে গেছে। আবাহনী কখন কী করে, সেটা জানতে পারে না আবাহনীর সমর্থকরা। কলকাতায় মোহন বাগানের বিপক্ষে এএফসি কাপে খেলতে গেল আবাহনী। অথচ যাওয়ার আগে একটা সংবাদ সম্মেলনও করেনি। আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে বলেও যায়নি। একটা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। আবাহনী কলকাতায় পৌঁছাল, সেখানে খেলা, এই কথাটা একটা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও জানানো গেল না। একটা দল বিদেশের মাঠে খেলতে যাবে। যাওয়ার আগে দল সম্পর্কে তার সমর্থকদেরকে নানা তথ্য জানাতে সংবাদ সম্মেলন করবে এটাই স্বাভাবিক। আর আবাহনী হলে তো কথাই নেই। তারা আরও আগে করবে। এটাই দক্ষ সংগঠকদের দায়িত্ব। অন্য কেউ করল কি করল না, তার সঙ্গে আবাহনী কিংবা মোহামেডানের সংগঠনের মানায় না। মোহামেডান-আবাহনী অন্য বিষয়। তাদেরকে সমর্থক ঘিরে ধরে। জাতীয় দলের একজন সাবেক কোচ কথা প্রসঙ্গে বললেন, ‘আবাহনী এএফসি কাপে খেলবে এই কথাটা সংবাদ মাধ্যম যতই লিখুক। আবাহনীর দায়িত্ব ঘটা করে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো। ভিসা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ থাকতেই পারে। সবই কি এক জন করবে। আমার মনে হয় মোহন বাগান ম্যাচ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিল না।’