পাগলা মলম, পাগলা মলম, পাগলা মলম। আমাদের মলমটা ব্যবহার করবেন আপনার চর্মরোগে। মাথার খুলি থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত আপনার চামড়ার ওপর যেসব রোগ হয়, সেগুলো চর্মরোগ, ইংলিশে যাকে বলে স্কিন ডিজিস। যে কোনো চর্মরোগে মলমটা ব্যবহার করবেন, এটা আশ্চর্য ধরনের কাজ দেবে। চর্মরোগ বলতে আপনি যা কিছু বোঝেন, যেমন—খুজলি, দাউদ, বিখাউজ, একজিমা, চুলকানি, বিচি-পাচরা, গোটাগাটা। রানে-কানে, আঙুলের চিপায়-চাপায় সারা শরীরে খাউজানি, চুলকানি, বিচি-পাচরা, ঘা, গোটাগাটায় ভরে গেছে। বিশেষ করে মা-বোনদের মাজায় বা কোমরে একধরনের দাউদ হয়। অসহ্য চুলকানি হয়, মরিচের মতো জ্বলে। রাতে শোবার টাইমে মাত্র দুইটা দিন মলমের কৌটা দিয়ে ভালো কইরা চুলকায়া লাগায়া দিবেন পাগলা মলম। আপনার রানের চিপার ঘা এই মলম দুই বার লাগাইলে ভালো হয়, তিন বার লাগাইতে হয় না। খাউজানি, চুলকানি, বিচি-পাচরা, ঘা চুলকানি তো দূরের কথা, একটি ঘামাচির বিচি পর্যন্ত থাকতে পারে না এই পাগলা মলম ব্যবহারে। প্রতিটি মলম মাত্র ১০ টাকা ১০ টাকা ১০ টাকা। টিপু কেমিক্যাল কোম্পানির চর্মরোগের মহৌষুধ পাগলা মলম। এভাবে একসময় মাইক বাজিয়ে শহরের বিভিন্ন ফুটপাতে বিক্রি করা হতো পাগলা মলম।
চুলকানি একটা বিরক্তিকর ব্যাধির নাম। যখন চুলকায়, তখন কিন্তু আরাম লাগে। কিন্তু চুলকানি শেষ হলে শুরু হয় আসল খেলা—জ্বলুনি। অনেক সময় মনে হয় যেন মরিচবাটা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। চুলকানি কী, এটা কেন হয়, এর উপসর্গ ও ফলাফল কী—এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা দরকার। এ ব্যাপারে ভালো চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার। তা না হলে এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ যন্ত্রণা ভোগ করতে হতে পারে।
আমাদের দেশের মানুষের নানা ধরনের চুলকানির ব্যারাম আছে। যেগুলো ঠিক চিকিৎসাশাস্ত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। এখানে বলে রাখা ভালো, আমাদের চুলকানি শুধু শরীরে নয়, মনেও। আর শুধু এক জায়গায় নয়, বহু জায়গায়। সবকিছুতেই চুলকানি। দরকার শুধু একটা ইস্যু! ইস্যু থাকলে এ দেশের মানুষ পাবলিক প্লেসেও নিজের পশ্চাদেদশ চুলকাতে পারে, নিজের না চুলকালে সামনে যে আছে তার পশ্চাদেদশও চুলকে দিতে পারে। সুতরাং, চুলকানি চাই; থুক্কু, ইস্যু চাই। যত ইস্যু তত চুলকানি, যত চুলকানি তত আরাম। এই চুলকানি আবার যত লোকের সামনে করা যায় ততই ভালো। যেমন ধরেন ফেসবুক! গুরুতর থেকে সামান্য যে কোনো ঘটনায় কেউ যদি একটা কথাও বলে, তবে সেই কথার ওপর ভিত্তি করে কারো না কারো চুলকানি উঠবেই। সেই চুলকানি সংক্রামক রোগের মতো ছড়িয়ে পড়বে মুহূর্তে। তারপর একই প্রসঙ্গে জেনে না-জেনে, বুঝে না-বুঝে ত্যানা প্যাঁচানো চলবেই। ফেসবুক ছাড়াও বাস্তব জীবনেও চুলকানির হাত থেকে আমাদের রেহাই নেই। কারো সুন্দরী মেয়ে দেখলে চুলকায়, কারো অবৈধ টাকা দেখলে চুলকায়, কারো গরিব লোকের জায়গাজমি দেখলে চুলকায়, কারো অন্যের ভালো কাজ দেখলে চুলকায়, কারো অন্য দেশের কথা শুনলে চুলকায়, কারো অন্য ধর্ম পালন করতে দেখলে চুলকায়, কারো আবার ভিন্ন মতাবলম্বী কাউকে দেখলে চুলকায়। কেউ মাথা চুলকায়, কেউ হাত চুলকায়, কেউ গাল চুলকায়, কেউ পিঠ চুলকায় আবার কেউ পশ্চাদেদশ চুলকায়। এই চুলকানি কমানোর জন্য আবার রাস্তাঘাটে, বাসে-ট্রেনে মলমও বিক্রি করে কিছু লোক। তাতেও চুলকানি কমে না আমাদের।
সাধারণত শারীরিক চুলকানি মলম বা ওষুধ ব্যবহারে দূর করা যায়। ওষুধের দোকানে বা হাটবাজারে লেকচার-বিবৃতির মাধ্যমে দাউদ, খুজলি, একজিমাসহ নানান রকমের ওষুধ বা মলম পাওয়া যায়। কিন্তু মনের চুলকানি কোনোভাবেই দূর করা বা সারানো সম্ভব না। মনের চুলকানি দূর করার জন্য কোনো মলম বা ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে বলে জানা যায় না। এমনকি সবজান্তা দগুগলও এ ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারে না।
শরীরের চুলকানি পরিচ্ছন্নতা, আবহাওয়া বা স্পর্শজনিত কারণে হতে বা সংক্রমিত হতে পারে। তবে মনের চুলকানি হয় ঈর্ষায়, সংকীর্ণতায়, দহনে, কর্মহীনতায় ও যন্ত্রণায়। নিজে কিছু করতে না পারার যন্ত্রণা বা অন্যে কিছু করেছে তা সইতে না পারার যন্ত্রণা অথবা শুধু শুধুই আনমনে এই চুলকানি হতে পারে! যেমন একজন কোন ভালো কাজ করছে, সবার প্রশংসা পাচ্ছে, কিন্তু সঙ্গে কারো মনে চুলকানির বীজ বপন করছে। একজন হয়তো একটু ফিটফাট বা পরিপাটি হয়ে চলছে, তা দেখে কারো মনে চুলকানি শুরু হয়ে গেল! কারো আবার ধর্ম নিয়ে চুলকানি আছে।
বহু আগে চুলকানিসংক্রান্ত কৌতুক শুনেছিলাম।
এক ভদ্রলোক স্টেশনে গেছে ট্রেন ধরার জন্য। স্টেশনে পৌঁছামাত্র আরেক লোক পেছন থেকে তাকে ডাকল—এই যে ভাই থামেন, একটু থামেন। লোকটি থামল। অপর লোকটি পেছন থেকে আস্তে হেঁটে এসে তার সামনে দাঁড়াল এবং তার কাছে জানতে চাইল, কেমন আছেন? ভদ্রলোক জবাব দিল, ভালো আছি। তখন আগন্তুক প্রশ্ন করল, ভাই কি কোথাও যাচ্ছেন? ভদ্রলোক জবাব দিল, হ্যাঁ যাচ্ছি। তারপর আগন্তুক আবার জিজ্ঞেস করল, ভাই কোথায় যাচ্ছেন? ভদ্রলোক বলল, আমি টাঙ্গাইল যাচ্ছি, আমার শ্বশুরবাড়ি। আগন্তুক আবার জিজ্ঞেস করল, ভাই কি সকালে কিছু খাইছেন? এবার ভদ্রলোক একটু বিরক্ত হলো, তাই কোনো জবাব দিল না। তখন আগন্তুক জিজ্ঞেস করল, ভাই, কন না কিছু খাইছেন নাকি? তখন ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে বলে, খাইছি। এবার প্রশ্ন করে, কী খাইছেন? ভাত না রুটি? তখন লোকটি খেপে গিয়ে বলল, এত প্যাঁচাল পারেন কেন? কী খাইছি না-খাইছি আমার ব্যাপার, আপনার কী? আগন্তুক লোকটি বলল, ভাই, জানতে মন চাইছে তাই জিগাইলাম! বললেই তো ল্যাঠা চুকে যায়! তখন লোকটি রাগের স্বরে বলল, হুম রুটি খাইছি, তা কী হইছে? আপনার এত জানার দরকার কেন?
প্রশ্নকারী লোকটি বলল, ভাই কিছু মনে করবেন না। সকাল থেইকা এই স্টেশনে একা বইসা রইছি! কোনো কাজ-কাম নাই তো, সময় কাটে না! তাই আপনারে একটু খাউজাইলাম আর কি!
পরিশেষে চুলকানি বিষয়ে একটি ছড়া:
চুলকানি রোগ কাকে বলে জানেন তা নিশ্চয়?
শুনেছি ঐ লেখেন যারা তাদের এ রোগ হয়!
কিছু মানুষ পরের ভালো দেখতে নাহি পারে,
বেছে বেছে তাদেরও এই চুলকানি রোগ ধরে!
আর কিছু লোক পাতি আঁতেল ভান করে সব জানে,
স্বভাবদোষে চুলকে মরে তারাই তো সব স্থানে।
বেশ কিছুদিন লেখার পরে, বছর কয়েক আগে—
হঠাৎ দেখি সারা দেহ চুলকাতে সাধ জাগে!
সেই যে শুরু চুলকানি আজ দারুণ সংক্রমণ,
অস্বস্তিতে থাকি আমি, উত্তেজিত মন।
বহু দিনের পুরোনো রোগ, চিকিৎসা এর নাই,
চুলকিয়ে ঘা করলে শুধু মনের আরাম পাই।
পড়শী আমার কিনল সেদিন দামি সেডান গাড়ি,
দেখেই আমার চুলকানিটার সে কী বাড়াবাড়ি!
যেচে গিয়েই বলে এলাম—‘এ গাড়ি নয় ভালো,
কত রকম রং রয়েছে,কিনলে শেষে কালো!’
অমনি দেখি চুলকানিটা কমছে ধীরে ধীরে,
বলতে পারেন এমনভাবে বাঁচব কেমন করে?
মামাতো ভাই ঘুরতে এসে সেদিন কথার ছলে,
বলেই ফেলে আমেরিকায় চাকরি পেল ছেলে।
শুনেই আমার শরীর জুড়ে সে কী রে চুলকানি!
বলি তারে—‘অবোধ ওরে দেশ ভালো জার্মানি।
আমেরিকায় শুঁটকো সাহেব, বিশ্রী তাদের মেম,
জার্মানিতে সুন্দরী মেম, দেখলে জাগে প্রেম।
আমার ছেলে বিদেশ গেলে পাঠাব জার্মানি।’—
যেই বলেছি,অমনি দেখি কমেছে চুলকানি।
অল্প চেনা লেখক সেদিন এলেন আমার বাড়ি!
জানা গেল তার গৃহিণী পরমা সুন্দরী!
অমনি শুরু চিড়িং বিড়িং বিচ্ছিরি চুলকানি,
দুদিন পরেই দেখতে গেলাম কেমন সে গৃহিণী।
চেহারা তার দেখে অবাক, বাড়ল বুকের জ্বালা,
নীরবে দিই গালি—খাসা বউ এনেছিস শালা!
হেসে বলি—‘গিন্নি তোমার মন্দ তো নয় ভায়া,
খুঁত শুধু ঐ একটু স্থূল, আর ঐ খর্বকায়া!’
বলল লেখক—‘বলবে এমন আগের থেকেই জানি,
তোমার যেমন চুলকানি রোগ, আমারও চুলকানি!
তোমার মতোই আঁতেল আমি, স্বার্থে মাখাই তেল,
বিষেতে বিষ ক্ষয় হলো আজ, জমবে এবার খেল।’
শরীরে যে চুলকানি হয় মলমে যায় সেরে,
মনে যাদের চুলকানি হয় তারাই জ্বলে মরে!
পরের ভালো দেখেই যদি হিংসা জাগে প্রাণে,
বনের বাঘে বাঁধবে বাসা এসে তোমার মনে।
তাই বলি সব হিংসা ছাড়ো, অহং করো দূর,
চুলকানি রোগ সেরে যাবে মন হবে ভরপুর।